ঔপনিবেশিক বাংলার ধর্মীয় আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করো
অথবা,
আধুনিক বাংলার ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত লিপিবদ্ধ করো
খ্রিস্টধর্ম প্রচার: ভারতে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের পদার্পণ ভারতীয় রাজানীতিতেই কেবল বড়োসড়ো রদবদল ঘটায়নি, শিক্ষা-সমাজ-সংস্কৃতি-ধর্ম সর্বত্রই নবচেতনার জোয়ার এনেছিল। ফলে, সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি ওঠে। ব্রাত্মসমাজ, প্রার্থনা সমাজ, আর্যসমাজ, রামকৃষ্ণ মিশন-এর নেতৃত্বে ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
ব্রাহ্মসমাজ: এদেশে খ্রিস্টান মিশনারিদের খ্রিস্টধর্মপ্রচার এবং এদেশের সনাতম ধর্মভাবনার প্রতি আঘাত রুখতে এগিয়ে আসেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি বহু দেবদেবীকেন্দ্রিক ধর্মাচরণের বাহ্য আড়ম্বরের পরিবর্তে মূর্তিপূজাবিরোধী সংস্কারমুক্ত একেশ্বরবাদী এক ধর্মমত প্রচারে উদ্যোগী হন।
ভারতীয় ধর্মচেতনাকে তিনি বেদান্ত-উপনিষদের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তৈরি হয় ব্রাহ্মসমাজ। রামমোহনের পরবর্তীকালে দ্বারকানাথ ঠাকুর, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, তারও পরে কেশবচন্দ্র সেন, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজকে কেন্দ্র করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। স্ত্রীশিক্ষার প্রসার, জাতিভেদপ্রথার বিলোপ, বাল্যবিবাহ রদ-এ ব্রাহ্ম আন্দোলন ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে।
প্রার্থনা সমাজ ও আর্যসমাজ: সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে হিন্দু রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে যে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তাতে মনীষী ড. আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ-এর প্রার্থনা সমাজ এবং স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে আর্য সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এইসকল প্রতিষ্ঠানও জাতিভেদ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, নানাবিধ কুপ্রথার বিরোধিতা করেছিল এবং ভারতবর্ষে একধর্ম, একজাতি প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিল।
রামকৃষ্ণ মিশন: উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মহাপুরুষ রামকৃষ্ণদেব সবধর্মসমন্বয়ের বাণী প্রচার করলেন। তাঁর সুযোগ্য শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের বাণীকে সঞ্চারিত করলেন বিশ্বময়। সেই উদ্দেশ্যসাধনেই বেলুড়ে নির্মিত হল রামকৃষ্ণ মিশন। কেবল ধর্মসংস্কার নয়, আর্তের সেবাতেও নিয়োজিত হল এই প্রতিষ্ঠান।
উনবিংশ শতাব্দীর এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ধর্ম এবং সমাজসংস্কারের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ব্যবধান মুছে দিয়ে, সমগ্র দেশবাসীকে জাতীয়তাবোধ, ঐক্যের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর