ছুটি গল্পের নামকরণের সার্থকতা
‘ছুটি’ গল্পে চরিত্রকেন্দ্রিক বা বিষয়ভিত্তিক অথবা ঘটনাকেন্দ্রিক নামকরণের রীতি গ্রহণ করা হয়নি। এই গল্পের নামকরণ তাৎপর্যকেন্দ্রিক। ‘ছুটি’ শব্দটি কাহিনির বিন্যাসে অসম্ভব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গ্রামজীবনে প্রকৃতির মধ্যে সহজ-স্বচ্ছন্দ বিচরণ করা ফটিকের বিরুদ্ধে তার মা-র অভিযোগ ছিল উচ্ছৃঙ্খলতা এবং পড়াশোনায় অমনোযোগিতা নিয়ে। আর সেজন্যই ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায় নিজের কাছে, ভালো করে লেখাপড়া শেখানোর জন্য। প্রাথমিকভাবে সেই যাওয়ায় ফটিকও উচ্ছ্বসিত ছিল।
কিন্তু বদ্ধ শহরজীবন, মামির বিরূপতা ইত্যাদি কারণে হাঁফিয়ে ওঠা ফটিক তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে আকুল হয়ে উঠেছিল। তার ঘুড়ি ওড়ানোর নদীতীর, সাঁতার কাটার নদী, সমস্ত দুরন্তপনার সঙ্গীসাথিরা, অবাধ স্বাধীনতা যেন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকত। প্রতিদিনের নাগরিক জীবন থেকে ছুটি চেয়েছিল ফটিক। আর তার মামা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পুজোর ছুটিতেই সে তার প্রত্যাশিত অবকাশ পাবে। স্কুলে মাস্টারমশাইদের প্রহার ও লাঞ্ছনা, মামাবাড়িতে মামির ভর্ৎসনা ইত্যাদি থেকে মুক্তির জন্য ফটিক অসুস্থ শরীরে নিজের মতো করে ছুটির খোঁজ করেছিল বাড়ি থেকে পালিয়ে।
কিন্তু পুলিশের গাড়ি তাকে ফিরিয়ে আনায় সাময়িকভাবে সেই ছুটির সন্ধান তার পাওয়া হয়ে ওঠেনি। জ্বরের ঘোরে নৌকার খালাসিদের মতো জল মাপতে মাপতে ফটিক যেন তার ছুটির গন্তব্যের দূরত্বকে বুঝে নিতে চেয়েছে। দিনের শেষে, যে ছুটি সে ইহজীবনে পায়নি, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেন সেই ছুটির দেশে সে যাত্রা করেছে। তার অসুস্থতা তাকে যেন পৌঁছে দিতে চলেছে এক অনন্ত ছুটির দেশে। পুজোর ছুটির জন্য অপেক্ষা ছিল ফটিকের। অপেক্ষা ছিল বাড়ি যাওয়ার জন্য। জ্বরের ঘোরে মামার কাছে আবার সেই ছুটির খোঁজ করছিল সে। মা কাছে আসার পরে যেন জীবনের অনন্ত ছুটি নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে সে।
ফটিকের এই ছুটি, যে পৃথিবী তাকে অবাঞ্ছিত মনে করে সেখান থেকে। সমস্ত আত্মগ্লানি আর রক্তক্ষরণ থেকে তাকে মুক্তি এনে দেবে এই ছুটি। এইভাবেই ‘ছুটি’ গল্পে ‘ছুটি’ নামকরণটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
Answer ta ar ak tu choto hole valo hoi
আপনি চাইলে এটা থেকে ছোটো করে নিতে পারবেন।