ছুটি গল্পের বিষয়বস্তু
গ্রামের বালকদের সর্দার ছিল দুরন্ত স্বভাবের ফটিক। ফটিকের নেতৃত্বেই গ্রামের ছেলেরা নতুন নতুন খেলার উদ্ভাবন করত। এরকমই একদিন নদীর ধারে রাখা শালগাছের গুঁড়িকে নিয়ে খেলার সময় ফটিকের ছোটোভাই মাখনলাল তার ওপরে চেপে বসে। তখন মাখনলালকে সুদ্ধ সেই শালকাঠের গুঁড়িটিকে গড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং মাখন মাটিতে পড়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে গিয়ে সে মার কাছে ফটিকের নামে অভিযোগ করে যে, ফটিক তাকে মেরেছে। ফটিকের মার নির্দেশে ফটিককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফটিক ভাইকে মারার কথা অস্বীকার করে, কিন্তু মাখন মারার অভিযোগ জারি রাখে। ক্রুদ্ধ ফটিক মিথ্যে কথা বলার জন্য এবার মাখনকে সত্যিই চড় মারে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মা ফটিককে পালটা চড় মারলে ফটিক মা-কে ঠেলে দেয়। এই নিয়ে যখন গোলযোগ চলছে, তখনই ফটিকদের বাড়িতে আগমন ঘটে তার মামা বিশ্বম্ভরবাবুর, যিনি পশ্চিমে কাজের জন্য বহুদিন বাইরে ছিলেন। তার আসার ফলে বাড়িতে বেশ সমারোহ হয়। বিদায় নেওয়ার কয়েকদিন আগে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁর বোনের কাছে যখন ভাগিনাদের পড়াশোনার খবর নেন, তখন ফটিকের মা মাখনের প্রশংসা করলেও, ফটিকের ব্যাপারে নানা অভিযোগ জানান। বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে উপযুক্ত লেখাপড়া শেখানোর জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ফটিকের মা তাতে সম্মতি দেন। ফটিকও এই প্রস্তাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। সে যাওয়ার সময় তার সমস্ত খেলার জিনিসগুলি মাখনলালকে উদারভাবে দান করে দিয়ে যায়।
কিন্তু মামার বাড়িতে মামির তরফ থেকে সে প্রত্যাশিত অভ্যর্থনা পায় না, তার মামি তাকে নিজের সংসারে অবাঞ্ছিত মনে করেন। ফটিকের যে বয়স অর্থাৎ কৈশোর এবং যৌবনের মধ্যবর্তী সময়কাল, তা সাধারণভাবে সমাজে খুব গ্রহণযোগ্য হয় না। ফটিকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নানা কারণে নানাভাবে তাকে একাধিকবার তিরস্কৃত হতে হয়। ধীরে ধীরে বাড়ির জন্য, গ্রামের জন্য মন খারাপের এক অনুভূতি ফটিকের সমস্ত মনকে অধিকার করে নেয়, সেইসঙ্গে তার অসহায় মন মা-র জন্য আকুল হয়ে ওঠে। স্কুলে পাঠ অমনোযোগী ফটিককে প্রায় নিয়মিত শিক্ষকের মার খেতে হত। বই হারিয়ে ফেলার ঘটনায় তার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারণ, স্কুলের পড়া তৈরি করে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, তার মামাতো ভাইরা তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করত, বরং কোনোভাবে ফটিক অপ্রস্তুত হলে তারা আনন্দ উপভোগ করত। একদিন মামির কাছে নিরুপায় হয়ে বই হারানোর কথা বললে ফটিককে আবারও তিরস্কৃত হতে হয়। অভিমানী ফটিকের মনে হয় পরের পয়সা নষ্ট করে সে অনুচিত কাজ করছে। মায়ের প্রতি তার অভিমান তীব্রতর হয়। এই সময়েই একদিন ফটিক স্কুল থেকে ফেরার পরে অসুস্থ বোধ করে। তার জ্বর আসে। সে বুঝতে পারে যে এই অসুস্থতা তার মামির কাছে এক অনাবশ্যক উপদ্রব হয়ে উঠতে পারে, আর সে কারণেই পরদিন সকালে ফটিক নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। চারপাশে তার খোঁজ পাওয়া যায় না।
বিশ্বম্ভরবাবু পুলিশে খবর দিতে বাধ্য হন। সন্ধ্যার সময় পুলিশের গাড়িতে ফটিককে ফিরিয়ে আনা হয়। তখন তার অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছে। সমস্ত রাত্রি সে প্রলাপ বকতে থাকে। মায়ের জন্য সে আকুল হয়ে ওঠে। বিশ্বম্ভরবাবু সে সময়ে ফটিকের পাশে থাকেন। ফটিকের মাকে খবর দেওয়া হয়। ফটিকের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ডাক্তারবাবুও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এরকম সময়ে ফটিকের মা আসেন। ফটিকের অসুস্থতায় তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন। ফটিক কাউকে লক্ষ না করেই পাশ ফিরে মৃদুস্বরে মা-কে উদ্দেশ করে বলে যে তার ছুটি হয়েছে, সে বাড়ি যাচ্ছে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর