বাংলা গদ্য-প্রবন্ধের ধারা (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE
বাংলা গদ্য-প্রবন্ধের ধারা (Marks 2)
১. বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে কোন্ কোন্ গ্রন্থকে বিবেচনা করা হয়?
উত্তর : বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে দোম আন্তোনিও-র ‘ব্রাহ্মণ রোমান-ক্যাথলিক সংবাদ’ এবং মনো-এল-দা-আসসুম্পসাঁও রচিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ গ্রন্থ দুটির নাম উল্লেখযোগ্য।
২. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইংল্যান্ড থেকে আসা ইংরেজ রাজকর্মচারীদের দেশীয় ভাষা বিষয়ে শিক্ষাদান করা ছিল এই কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্য।
৩. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে কে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলেন? এবং তা৬র রচিত গ্রন্থগুলির নাম লেখো।
উত্তর: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর নাম উল্লেখ করতে হয় তিনি উইলিয়াম কেরি।
উইলিয়াম কেরি রচিত গ্রন্থ দুটি হল ‘কথোপকথন’ এবং ‘ইতিহাসমালা’।
৪. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্য রচনাগুলি কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হত এবং তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অধিকাংশ গদ্য রচনা ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হত।
• দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘ব্রাহ্মধর্ম’ এবং ‘আত্মতত্ত্ববিদ্যা’।
৫. ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোন্ ধরনের রচনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন এবং তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যঙ্গাত্মক ও নকশা জাতীয় রচনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন।
• তাঁর রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘কলিকাতা কমলালয়’ এবং ‘নববাবু বিলাস’।
৬. ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী’ কাকে বলা হয়? এবং তাঁর রচিত দুটি অনুবাদমূলক রচনার নাম লেখো।
উত্তর: ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী’ রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।
• তাঁর রচিত দুটি অনুবাদকমূলক রচনা হল-‘শকুন্তলা’ (কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’-এর অনুবাদ), ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (উইলিয়াম শেকসপিয়রের ‘Comedy of Errors’-এর অনুবাদ)।
৭. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীটির নাম কী? বিদ্যাসাগর রচিত দুটি বিতর্কমূলক রচনার নাম লেখো।
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনীটির নাম ‘বিদ্যাসাগর চরিত’।
• বিদ্যাসাগর রচিত দুটি বিতর্কমূলক রচনা ‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব এবং ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’।
৮. অক্ষয় কুমার দত্তের দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো। তিনি কার গদ্যরীতিকে অনুসরণ করেছিলেন?
উত্তর: অক্ষয় কুমার দত্ত রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম-‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ এবং ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’।
• অক্ষয় কুমার দত্ত গদ্যরীতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরীয় রীতির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন।
৯. রাজেন্দ্রলাল মিত্র কোন্ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন এবং তার রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম ছিল ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’।
• তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম ‘প্রাকৃত ভূগোল’ এবং ‘শিবাজী চরিত্র’।
১০. ‘সেকাল আর একাল’ গ্রন্থটি কে রচনা করেছিলেন? তাঁর রচিত আর-একটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: ‘সেকাল আর একাল’ গ্রন্থটির রচয়িতা রাজনারায়ণ বসু।
• তাঁর রচিত আর-একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘বৃদ্ধ হিন্দুর আশা’।
১১. প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম কী? ‘আলালের ঘরের দুলাল’ ছাড়া তাঁর রচিত অন্য একটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম ‘টেকচাঁদ ঠাকুর’।
• ‘আলালের ঘরের দুলাল’ ছাড়া তাঁর রচিত অন্য একটি গ্রন্থের নাম ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত রাখার কী উপায়’।
১২. প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত জীবনীগ্রন্থটির নাম কী? তাঁর রচিত একটি নীতি আখ্যানের নাম লেখো।
উত্তর: প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত জীবনীগ্রন্থটির নাম ‘ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত’।
• প্যারীচাঁদ রচিত অন্যতম একটি নীতি আখ্যান ‘রামারঞ্জিকা’।
১৩. কালীপ্রসন্ন সিংহ সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম লেখো এবং ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’র বিষয়বস্তু উল্লেখ করো।
উত্তর: কালীপ্রসন্ন সিংহ সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম ‘বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা’।
‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’য় লেখক উনিশ শতকের কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উচ্ছৃঙ্খল উন্মার্গগামী জীবনযাত্রার পরিচয় দিয়েছেন।
১৪. শিবনাথ শাস্ত্রী রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো। এই গ্রন্থ দুটি কী কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: শিবনাথ শাস্ত্রী রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল-‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ ও ‘আত্মচরিত’।
• উনিশ শতকের বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয়বাহী হিসেবে এই গ্রন্থ দুটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
১৫. বাংলা গদ্যে স্বামী বিবেকানন্দের বিশেষত্ব কী?
উত্তর: স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর রচনায় সেই সময়ের ভারতবর্ষের সামাজিক অবস্থার যেমন বর্ণনা করেছেন, তেমনই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের আলোচনাও সেখানে পাওয়া যায়। দেশাত্মবোধ ও মানবতার কথা তাঁর সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘বর্তমান ভারত’, ‘পরিব্রাজক’, ‘ভাববার কথা’ ইত্যাদি যার উদাহরণ।
১৬. সত্যেন্দ্রনাথ বসুর গদ্যচর্চার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: সত্যেন্দ্রনাথ বসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। ‘পরিচয়’ পত্রিকায় তিনি আইনস্টাইনের জীবনী লেখেন। এ ছাড়াও ‘শিক্ষা ও বিজ্ঞান’, ‘শিল্প ও বিজ্ঞান’, ‘দেশ- বিদেশের বেতারচর্চা’, ‘বিজ্ঞানের সংকট’ এরকম অসংখ্য প্রবন্ধ তিনি লিখেছেন। কুসংস্কার দূর করা এবং মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলাই ছিল তাঁর সাহিত্যসাধনার উদ্দেশ্য।
১৭. বেগম রোকেয়া কোথায় তাঁর প্রবন্ধ লিখতেন এবং সেই প্রবন্ধের মূল বিষয় কী ছিল?
উত্তর: বেগম রোকেয়া ‘সওগাত’, ‘নবনূর’, ‘ধূমকেতু’, ‘সাধনা’ ইত্যাদি পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
• তাঁর প্রবন্ধের মূল লক্ষ্যই ছিল নারী মুক্তি ও নারী জাগরণ।
১৮. বাংলা গদ্যসাহিত্যে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলা গদ্যসাহিত্যে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষভাবে স্মরণীয়। ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, ‘সংবাদপত্রের সেকালের কথা’, ‘বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাস’ ইত্যাদি মননশীল গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। ‘সাহিত্যসাধক চরিতমালা’র বহু খ্যাতনামা সাহিত্যিকের জীবনীও তাঁর দ্বারা সংকলিত হয়েছে।
১৯. বাংলা গদ্যে ধূর্জটিপ্রসাদের অবদান উল্লেখ করো।
উত্তর: ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অনুবাদ সাহিত্য, চিত্রকলা, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সংগীত, দর্শন ইত্যাদি নানা বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর রচিত ‘মনে এলো’, ‘বক্তব্য’, ‘আমরা ও তাঁহারা’, ‘চিন্তায়সি’, ‘কথা ও সুর’ ইত্যাদি গ্রন্থে নানা স্মৃতিচারণা এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মননের সন্ধান, মধ্যবিত্তের সংস্কৃতিভাবনা ও সংগীত চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়।
বাংলা গদ্য-প্রবন্ধের ধারা (Marks 3)
১. বাংলা গদ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখক গোষ্ঠীর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বাংলা গদ্যের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশে ফোট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলা গদ্যের চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি নির্মিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের গুরুত্ব অনন্যসাধারণ।
উদ্দেশ্য: ইংল্যান্ড থেকে আগত ইংরেজ রাজকর্মচারীদের দেশীয় ভাষা শিক্ষাদান।
লেখকবৃন্দ: সংস্কৃত ও বাংলার বিভাগীয় প্রধান উইলিয়াম কেরি, পণ্ডিত রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার প্রমুখ।
উইলিয়াম কেরি: সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথাবার্তা সংবলিত কেরির প্রথম গ্রন্থ কথোপকথন-এই প্রথম বোঝা যায় যে, বাংলা গদ্য যোগাযোগ ও যুক্তিচিন্তার বাহন হয়ে উঠতে পারে। কেরির ইতিহাসমালা গ্রন্থটি নামের দিক থেকে ইতিহাস হলেও তা আসলে লোককাহিনি ও বেতাল, কথাসরিৎসাগর, পঞ্চতন্ত্র ইত্যাদির সংকলন।
রামরাম বসু: পণ্ডিত রামরাম বসুর রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র প্রথম মুদ্রিত বাংলা গদ্যগ্রন্থ। আরবি-ফারসি শব্দ মেশানো এই গ্রন্থের সাধু গদ্যরীতি যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ। লিপিমালা-য় আরবি-ফারসি বাহুল্য ত্যাগ করে রামরাম বসুর গদ্যের বাক্যগঠনরীতি আরও সহজ হয়েছে।মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার: মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের বত্রিশ সিংহাসন-এর গদ্যে কিছু আড়ষ্টতা থাকলেও রাজাবলি, প্রবোধচন্দ্রিকা-য় ক্লাসিক গদ্যনির্মাণরীতি দেখা যায়। হিতোপদেশ, বেদান্তচন্দ্রিকা মৃত্যুঞ্জয়ের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য রচনা। একইসঙ্গে সরল বাংলা ও আলংকারিক বাংলা ভাষার সমন্বয় দেখা যায় মৃত্যুঞ্জয়ের লেখায়।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য লেখক ও তাদের রচনাসমূহ-
গোলোকনাথ শর্মা: হিতোপদেশ (১৮০২ খ্রিস্টাব্দ); তারিণীচরণ মিত্র: ঈশপের গল্প (১৮০৩ খ্রিস্টাব্দ); রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায়: মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রং (১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ); চণ্ডীচরণ মুনশি: তোতা ইতিহাস (১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ); হরপ্রসাদ রায়: পুরুষপরীক্ষা (১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ); কাশীনাথ তর্কপঞ্চানন: পদার্থ কৌমুদী (১৮২১ খ্রিস্টাব্দ), আত্মতত্ত্ব কৌমুদী (১৮২২ খ্রিস্টাব্দ)।
বাংলা গদ্যের সূচনা পর্বে গদ্যের এই বিকাশ ও বিবর্তনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছে।
২. বাংলা গদ্যে রামমোহনের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: রামমোহন রায় প্রথম পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বাংলা গদ্যকে ব্যবহার করেছিলেন। ধর্ম, দর্শন, সমাজনীতি, রাজনীতি-বিষয়ক আলোচনার বাহক হয়ে উঠেছিল তাঁর গদ্য। রামমোহনের গদ্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বেদান্তগ্রন্থ’, ‘বেদান্তসার’, ‘উৎসবানন্দ বিদ্যাবাগীশের সহিত বিচার’, ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’, ‘সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তক সম্বাদ’, ‘ভট্টাচার্যের সহিত বিচার’, ‘কবিতাকারের সহিত বিচার’, ‘পথ্যপ্রদান’ ইত্যাদি। প্রথম বাংলা ব্যাকরণগ্রন্থ ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ রামমোহনই রচনা করেন। রামমোহন বাংলা গদ্যকে অনুবাদ, আলোচনা, যুক্তি এবং মীমাংসার বাহন হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। রামমোহনের হাত ধরেই বাংলা গদ্য তর্কের বাহন হয়ে উঠেছিল। ফলে রামমোহনের গদ্যে সেই সময়ের তুলনায় বোধগম্যতা এবং স্বচ্ছতা অনেকেই লক্ষ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর ভাষারীতির প্রশংসা করে লিখেছিলেন, “দেওয়ানজি জলের ন্যায় সহজ ভাষা লিখিতেন।”
৩. বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র নানা বিষয়ে অজস্র মননশীল প্রবন্ধ রচনা করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধগুলিকে মোটামুটি চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
১. সমাজভাবনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক: সাম্য (১৮৭৯ খ্রি.) প্রবন্ধগ্রন্থে বঙ্গদেশের কৃষকদের দুরবস্থা, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অন্যান্য নানা সামাজিক সমস্যার আলোচনা স্থান পেয়েছে। বিজ্ঞানরহস্য (১৮৭৫ খ্রি.) গ্রন্থের আশ্চর্য সৌরোৎপাত, ধুলা, গগন পর্যটন প্রভৃতি প্রবন্ধের নাম শুনলেই এর বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠে।
২. সাহিত্য সমালোচনামূলক: বিবিধ প্রবন্ধ (১ম এবং ২য়), বিবিধ সমালোচনা বঙ্কিমের দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে তিনি তুলনামূলক সাহিত্যসমালোচনা রীতির সূচনা করেন।
৩. ধর্ম ও দর্শন বিষয়ক: ধর্মতত্ত্ব (১৮৮৮ খ্রি.) গ্রন্থে প্রকাশ পেয়েছে বঙ্কিমের অনুশীলনতত্ত্বের ধারণা। বঙ্কিমের কৃষ্ণচরিত্র (১৮৮৬ খ্রি.) গ্রন্থে কৃয় হল দেশ ও জাতির সংকটময় অবস্থায় জাতির এক আদর্শ নেতা।
৪. ব্যঙ্গাত্মক ও হাস্যরসাত্মক রচনা: বঙ্কিমের এই শ্রেণির প্রবন্ধগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লোকরহস্য (১৮৭৪ খ্রি.), কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫ খ্রি.) এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত।
মূল্যায়ন: যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে, আবার কখনও সরস ভঙ্গিতে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে বিশেষ ভাবনাকে বঙ্কিম তাঁর প্রবন্ধে প্রকাশ করেছেন।
৪. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুতোম প্যাঁচার নকশা-র অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : প্রকাশকাল: কালীপ্রসন্ন সিংহের হুতোম প্যাঁচার নকশার প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে; প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড একত্রে প্রকাশিত হয় ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে। এটি বাংলা চলিত গদ্যে লেখা প্রথম গ্রন্থ।
বিশিষ্টতা:
১. এই গ্রন্থের মধ্যে তৎকালীন কলকাতার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা অবিকল ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি লোকমুখে উচ্চারিত ধ্বনিরূপ যথাযথ রাখার জন্য তিনি বানানকেও উচ্চারণের অনুরূপ করার চেষ্টা করেছেন।
২. কলকাতা ও কাছাকাছি মফস্সল অঞ্চলের মানুষদের প্রতিদিনকার নানা ধরনের ভণ্ডামি ও উচ্ছৃঙ্খলতার উন্মোচন ঘটানো।
৩. এই গ্রন্থে সমাজের সকল স্তরের মানুষের ছবি ফুটে উঠেছে। চড়ক পার্বণের রঙ্গ থেকে শুরু করে গাজন, মাহেশের রথ, দুর্গাপুজো প্রভৃতির বর্ণনা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই পাওয়া যায় জমিদার, ভিখারি, কেরানি, দোকানি, হাটুরে, পুরুত ঠাকুর প্রভৃতি বিভিন্ন পেশার মানুষের বর্ণনা।
৪. ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগানো ছিল আলোচ্য গ্রন্থটির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
মূল্যায়ন: সব মিলিয়ে বলা যায়, সেই সময়কার কলকাতার সমাজ এবং বাংলা ভাষার চালচিত্র এ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
৫. বাংলা গদ্যে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: ভূদেব মুখোপাধ্যায় উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গদ্য রচয়িতা। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল ‘পারিবারিক প্রবন্ধ’, ‘সামাজিক প্রবন্ধ’, ‘আচার প্রবন্ধ’, ‘স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস’ ইত্যাদি। শিক্ষাসংক্রান্ত রচনাবলির মধ্যে আছে ‘শিক্ষাবিষয়ক প্রস্তাব’, ‘প্রাকৃতিক বিজ্ঞান’, ‘পুরাবৃত্তসার’, ‘ক্ষেত্রতত্ত্ব’ ইত্যাদি। সংস্কৃতবহুল কিন্তু সহজ গদ্যরীতি ছিল ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের স্বভাবধর্ম। বিচারবিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ রচনায় ভূদেব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বিষয়বৈচিত্র্য প্রাবন্ধিক ভূদেবের অন্যতম কৃতিত্ব। ভাষার সৌন্দর্য অপেক্ষা বক্তব্যের যুক্তিপারম্পর্যকে প্রকাশ করাই ছিল তাঁর ভাষা ও রচনারীতির প্রধান গুণ।
৬. বাংলা গদ্যসাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবদান সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: বাংলা গদ্যের বিকাশপর্বের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নাম হল প্যারীচাঁদ মিত্র। তিনি অমর হয়ে আছেন তাঁর আলালের ঘরের দুলাল গ্রন্থটির জন্য। বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে প্যারীচাঁদের গদ্যরচনাকে মোট পাঁচ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
১. প্রবন্ধ রচনা: কৃষিপাঠ (১৮৬১ খ্রি.), যৎ কিঞ্চিৎ (১৮৬৫ খ্রি.)
২. জীবনীমূলক রচনা: ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত (১৮৭৮ খ্রি.)
৩. সমাজসংস্কারমূলক রচনা: এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকেদের পূর্বাবস্থা (১৮৭৯ খ্রি.)
৪. ব্যঙ্গাত্মক নকশা-জাতীয় রচনা: আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮ খ্রি.), মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায় (১৮৫৯ খ্রি.)
৫. কথোপকথনমূলক নীতি-আখ্যান: রামারঞ্জিকা (১৮৬০ খ্রি.), অভেদী (১৮৭১ খ্রি.), আধ্যাত্মিকা (১৮৮০ খ্রি.), বামাতোষিণী (১৮৮১ খ্রি.)।
কৃতিত্ব: প্যারীচাঁদের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘আলালের ঘরের দুলাল’-এ উনিশ শতকের এক ধনী পরিবারের আদুরে সন্তানের অনাচার, লাম্পট্য, দুর্নীতি, মদ্যপানের প্রতি প্রবল আসক্তি ইত্যাদি অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের জীবন চিত্র, এমনকি তাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত এই গ্রন্থে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। মৌখিক ভাষা, সাধুভাষা আর সমকালীন যুগের কলকাতার উপভাষার যথাযথ সমন্বয় ঘটিয়েছেন লেখক।
৭. বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। অথবা, রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধসাহিত্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: সৃজনশীল রচনার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ অজস্র প্রবন্ধ রচনা করেছেন, যেগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১. ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ: প্রাচীন সাহিত্য, সাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য, লোকসাহিত্য, সাহিত্যের পথে, সাহিত্যের স্বরূপ, বাংলা ভাষা পরিচয়, বাংলা শব্দতত্ত্ব, ছন্দ প্রভৃতি গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক ভাবনার পরিচয় ছড়িয়ে আছে।
২. রাজনীতি, সমাজ, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধ: স্বদেশ, রাজনীতি, সমাজ, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য সংকলিত হয়েছে আত্মশক্তি, ভারতবর্ষ, রাজাপ্রজা, স্বদেশ, কালান্তর, সভ্যতার সংকট প্রভৃতি পুস্তক-পুস্তিকায়। তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে শিক্ষা নামক গ্রন্থে।
৩ . ধর্ম, দর্শন ও অধ্যাত্ম বিষয়ক প্রবন্ধ: ধর্ম ও শান্তিনিকেতন প্রবন্ধগ্রন্থ দুটিতে দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের পরিচয় পাওয়া যায়। মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে মানবতা সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের নিজস্ব দর্শন ও অভিমতের সন্ধান পাওয়া যায়।
৪ . ব্যক্তিগত রচনা: তাঁর ব্যক্তিগত রচনাগুলি নানা রকমের, যেমন-ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথা, ডায়ারি, রম্যরচনা, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ (Personal essay), চিঠিপত্র ইত্যাদি। য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র, য়ুরোপ যাত্রীর ডায়ারি, জাপান যাত্রী, যাত্রী, জীবনস্মৃতি, ছেলেবেলা, রাশিয়ার চিঠি, পথের সঞ্চয়, ছিন্নপত্র, পঞ্চভূত, বিচিত্র প্রবন্ধ প্রভৃতি গ্রন্থে এই জাতীয় রচনার পরিচয় পাওয়া যায়। জীবনস্মৃতি ও ছেলেবেলা গ্রন্থ দুটিতে ঠাকুরবাড়ি ও শিশু রবীন্দ্রনাথের নানা পরিচয় বিবৃত হলেও তা আসলে রবীন্দ্রনাথের কবি হয়ে ওঠারই ইতিবৃত্ত।
৮. প্রমথ চৌধুরীর দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখো। তাঁর গদ্যরচনার বৈশিষ্ট্য বিচার করো।
উত্তর: প্রমথ চৌধুরীর দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম হল তেল-নুন-লকড়ী (১৯০৬ খ্রি.) এবং বীরবলের হালখাতা (১৯১৭ খ্রি.)।
• প্রমথ চৌধুরীর গদ্যরচনার বৈশিষ্ট্য: প্রমথ চৌধুরীর গদ্যরচনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
১. বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গ ও অলংকারের চাকচিক্য, মার্জিত শহুরে ভব্যতা ও বাচনভঙ্গির তির্যকতা তাঁর রচনাকে বিশিষ্ট করেছে।
২. বিষয়গত দিক থেকে ভাষা, সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে অবাধ পদচারণা করেছেন এই বুদ্ধিদীপ্ত লেখক।
৩. চলিতভাষায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে তিনি প্রথম জোর সওয়াল করেন।
৪. ভাবালুতা বর্জন করে রচনার মধ্যে ঋজুতা ও দৃঢ়তা আনা প্রমথ চৌধুরীর গদ্যরচনার এক অন্যতম বিশিষ্ট লক্ষণ।
৫. তাঁর গদ্যরচনায় একদিকে যেমন রয়েছে মজলিশি বৈঠকের আবহ, অন্যদিকে তেমনই রয়েছে নাগরিক বৈদগ্ধ্য।
বাংলা গদ্য-প্রবন্ধের ধারা (Marks 5)
১. বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান অনস্বীকার্য। বিদ্যাসাগর রচিত গ্রন্থগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১. অনুবাদমূলক রচনা: বিদ্যাসাগরের অনুবাদমূলক রচনাগুলি তাঁর নিজস্ব সৃজনধর্মী শিল্পীসত্তারও পরিচায়ক। শকুন্তলা এবং সীতার বনবাস গ্রন্থ দুটি যথাক্রমে কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলম্ এবং ভবভূতির উত্তর রামচরিত নাটক ও বাল্মীকি রামায়ণ-এর ‘উত্তরকাণ্ড’ অবলম্বনে লেখা। ইংরেজি গ্রন্থ অবলম্বনে তিনি রচনা করেন বাঙ্গালার ইতিহাস, বোধোদয়, কথামালা, ভ্রান্তিবিলাস প্রভৃতি; আর হিন্দি বেতালপচ্চীসী অবলম্বনে রচনা করেন বেতাল পঞ্চবিংশতি।
২. মৌলিক রচনা: বিদ্যাসাগরের মৌলিক রচনাগুলির মধ্যে আছে সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব, বিদ্যাসাগর চরিত, শোককাব্য প্রভাবতী সম্ভাষণ প্রভৃতি।
৩. পাঠ্যপুস্তক শ্রেণির রচনা: বর্ণপরিচয়, ব্যাকরণ কৌমুদী, শব্দমঞ্জরী প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য পাঠ্যপুস্তক শ্রেণির রচনা।
৪. সংস্কারমূলক রচনা: বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব, বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার প্রভৃতি তাঁর সমাজসংস্কারমূলক রচনা।
৫. ব্যঙ্গমূলক রচনা: বিদ্যাসাগরের ব্যঙ্গমূলক রচনার মধ্যে বেনামে প্রকাশিত অতি অল্প হইল, আবার অতি অল্প হইল, ব্রজবিলাস ও রত্নপরীক্ষা উল্লেখযোগ্য।
২. বাংলা গদ্যসাহিত্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হলেন রবীন্দ্রনাথের ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত চিত্রশিল্পী ছিলেন বলেই তাঁর গদ্যের মধ্যে ছিল চিত্রধর্মিতা। বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক অনুসারে তাঁর রচনাকে চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. রূপকথামূলক রচনা: শকুন্তলা (১৮৯৫ খ্রি.), ক্ষীরের পুতুল (১৮৯৬ খ্রি.), নালক, বুড়ো আংলা গ্রন্থগুলি শিশুমনের কল্পনার উপযোগী করে লেখা। তাঁর লেখা রাজকাহিনী-তে (১৯০৯ খ্রি.) রাজপুত বীরদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
২. স্মৃতিচারণামূলক রচনা: অবনীন্দ্রনাথের দুটি স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ হল ঘরোয়া (১৯৪১ খ্রি.), জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪ খ্রি.)।
৩. শিল্প সংক্রান্ত রচনা: শিল্প সংক্রান্ত তাঁর রচনাগুলি হল- ভারতশিল্প (১৯০৯ খ্রি.), বাংলার ব্রত (১৯১৯ খ্রি.), ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৪ খ্রি.)। বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী (১৯২৯ খ্রি.) হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত উনত্রিশটি বক্তৃতার বই আকারে প্রকাশ।
৪. পুথি ও পালাজাতীয় রচনা: চাঁইবুড়োর পুঁথি, মারুতির পুঁথি, লম্বকর্ণ পালা, গোল্ডেন গুজ পালা।
অবনীন্দ্রনাথের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্য: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্যরীতির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-(১) তাঁর গদ্য লেখার ভঙ্গি মজলিশি ধরনের। (২) সংগীতধর্মিতা তাঁর গদ্যের একটি বড়ো গুণ। (৩) শব্দ, ছন্দ ও চিত্রকল্প রচনার সাহায্যে শিশুমনের উপযোগী কল্পনারাজ্য নির্মাণে বিশেষ দক্ষতাই তাঁর গদ্যরীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৩. বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদই ছিলেন না, ছিলেন অন্যতম দক্ষ প্রবন্ধকারও। তার ‘সাংস্কৃতিকী’, ‘ভারত সংস্কৃতি’, ‘ইতিহাস ও সংস্কৃতি’, ‘পশ্চিমের যাত্রী’ ইত্যাদি গ্রন্থে ভারতের সংস্কৃতির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ভাষাবিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থগুলি, যেমন-‘বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা’, ‘ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ’, ‘ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা’, ‘বাঙ্গালা ভাষা প্রসঙ্গে’ ইত্যাদি গ্রন্থে তাঁর পাণ্ডিত্য এবং যুক্তিনিষ্ঠ চিন্তাভাবনার প্রকাশ ঘটেছে। নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, সমাজবিদ্যা, প্রাচীন ইতিহাস এবং সাহিত্য সম্পর্কে সমান আগ্রহী এই পণ্ডিত মানুষটি তাঁর রচনায় বিষয়ের বিস্তৃতি এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর