আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

সূচিপত্র

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHS

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর
আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর (Marks 2)

১। “তাই নিয়ে একখানা প্রামাণিক প্রবন্ধ লিখব ভাবছি…” প্রাবন্ধিক কোন্ বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার কথা ভেবেছিলেন?

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী ছেলেবেলা থেকেই শুনে এসেছেন যে, কলকাতা হল আজব শহর কিন্তু বৃদ্ধ বয়সেও তিনি তার প্রমাণ পাননি। এই নিয়েই তিনি একটা প্রামাণিক প্রবন্ধ লেখার কথা ভেবেছিলেন।

২। “যদিও পথ হারাইনি তবু সমস্যাটা একই।”-এখানে প্রাবন্ধিক যে সমস্যার কথা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: দুর্যোগে পথ না হারালেও সেই ‘পথ হারানোর বেদনা’ প্রাবন্ধিকের মনের মধ্যে জেগে উঠেছিল। তার কারণ বৃষ্টিতে তার ছাতা কিংবা বর্ষাতি-কোনোটাই ছিল না, ট্রামে চড়ার মতো শরীরের সক্ষমতাও ছিল না। খরচের ভয়ে তিনি বাস-ট্যাক্সিও চড়তে চাননি। সুতরাং, বাড়ি ফেরার চিন্তাটা তাঁর কাছে পথ হারানোর বেদনার মতো মনে হয়েছিল।

৩। “কাজেই বাড়ি ফেরার চিন্তার বেদনাটা ‘পথহারানোর’ মতই হল।”-কেন লেখক এ কথা বলেছেন নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: বৃষ্টিবিঘ্নিত কলকাতা শহরে বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রাবন্ধিক সমস্যার মুখোমুখি হন। ছাতা কিংবা বর্ষাতি কোনোটাই ছিল না, ট্রামে ওঠার মতো শরীরের সক্ষমতাও ছিল না। খরচের ভয়ে বাস-ট্যাক্সি চড়তেও নারাজ ছিলেন। এইসব কারণেই বাড়ি ফেরার চিন্তা লেখকের কাছে ‘পথহারানোর’ মতো মনে হয়েছে।

৪। “এমন সময় সপ্রমাণ হয়ে গেল…”-কী প্রমাণ হয়েছিল এবং কীভাবে?

উত্তর: প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে, ‘কলকেতা আজব শহর’।

• কলকাতা শহরের রাস্তার ধারে যখন লেখক দেখেছিলেন, সামনে বড়ো বড়ো হরফে লেখা আছে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’, তখন ফরাসি বইয়ের সেই দোকান দেখে তাঁর মনে হয়েছিল যে কলকাতা সত্যিই আজব শহর।

৫। “…তাই খোয়াবার জন্য ফরাসী বইয়ের দোকান খুলেছে।”-মন্তব্যটির প্রসঙ্গ আলোচনা করো।

উত্তর: কলকাতা শহরে রাস্তার পাশে হঠাৎ এক বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে লেখক আবিষ্কার করেছিলেন একটা ফরাসি বইয়ের দোকান এবং তাঁর মনে হয়েছিল যে, কোনো ফরাসি নিশ্চিতভাবে পথ হারিয়ে কলকাতায় এসে পড়েছে এবং তার কাছে যে পয়সাটুকু আছে তা খোয়াবার জন্যই সে ফরাসি বইয়ের দোকান খুলেছে।

৬। “বাঙালী প্রকাশকরা বলেন,…”-বাঙালি প্রকাশকরা কী বলেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী উল্লেখ করেছেন যে, বাঙালি প্রকাশকেরা বলে থাকেন-শুধু ভালো বই ছাপিয়ে অর্থ রোজগার করা যায় না, তার জন্য ‘রদ্দি’ উপন্যাসও প্রচুর পরিমাণে প্রকাশ করতে হয়।

৭। “এই ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ বোধ হয় হাতীর দাঁতের মত”- মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কলকাতার বুকে শুধু ফরাসি বই বিক্রি করে মুনাফা করা অসম্ভব। সেই কারণেই লেখকের মনে হয়েছিল যে তাঁর চোখে পড়া ফরাসি বইয়ের দোকানটি বোধহয় হাতির দাঁতের মতো, অর্থাৎ বাইরে ফরাসি বই কিন্তু তার আড়ালে লুকানো আছে অন্য কিছু, যেমন- ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোঘ্র-রেণু’, ‘ওষ্ঠ-রাগ’ ইত্যাদি।

৮। “সেই ভরসায় ঢুকলুম।”-কোন্ ভরসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কলকাতার ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ ফরাসি বইয়ের আড়ালে ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোধু-রেণু’, ‘ওষ্ঠ-রাগ’ ইত্যাদি পাওয়া যাবে-এই ভরসার কথা প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন।

৯। “মহা মুশকিল।”-এখানে কোন্ সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর: কলকাতার ফরাসি বইয়ের দোকানের মেমসাহেব ফরাসিতেই লেখকের সঙ্গে কথা বলতে উদ্যোগী হন। কিন্তু লেখক সেই কথাবার্তায় আড়ষ্ট ছিলেন। উলটোদিকে মেমসাহেব যতবারই ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করেছেন দেখা গিয়েছে যে, তিনি লেখকের ইংরেজি ঠিকমতো বুঝতে পারছেন না। উল্লিখিত অংশে এই সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

১০। “আপনাদের আশীর্বাদে আর শ্রীগুরুর পায়….”- প্রসঙ্গটি উল্লেখের কারণ কী?

উত্তর: ব্যাকরণের নিয়মকে অগ্রাহ্য করে এবং উচ্চারণের বিধি রক্ষা না করে কলকাতার ফরাসি বইয়ের দোকানের মহিলা ফরাসি-দোকানদারের সঙ্গে প্রাবন্ধিক সাহসের সঙ্গে যেভাবে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছিলেন তার পূর্ব-ভূমিকা হিসেবেই কৌতুক করে তিনি উল্লিখিত প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন।

১১। “মেমসাহের খুশ।”-এই মেমসাহেব কে? তিনি কী কারণে খুশি হয়েছিলেন?

উত্তর: উল্লিখিত অংশে ‘মেমসাহেব’ বলতে কলকাতার ফরাসি বইয়ের দোকানের মহিলা-দোকানদারকে বোঝানো হয়েছে।

• যেহেতু প্রাবন্ধিক দোকানে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ফরাসি ভাষায় কথা বলছিলেন, সে কারণেই ‘মেমসাহেব’ অর্থাৎ ওই ফরাসি মহিলা- দোকানদার খুশি হয়েছিলেন।

১২। “…সে ভরসাও দিলেন”-কে, কী ভরসা দিয়েছিলেন লেখো।

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীকে ভরসা দিয়েছিলেন কলকাতার ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর মহিলা-দোকানদার।

• তিনি সযত্নে লেখকের বইয়ের তালিকা টুকে নিয়েছিলেন এবং বই আসামাত্র তাঁকে খবর দেবেন-এই ভরসা দিয়েছিলেন।

১৩. “বইয়ের দোকান তাঁর নয়।” বইয়ের দোকানটি কার? সেখানে বক্তার উপস্থিতির কারণ কী? 

উত্তর: কলকাতার ‘ফ্রেঞ্চবুক শপ’-এর যে ফরাসি মহিলা-দোকানদারকে প্রাবন্ধিক দেখেছিলেন, তিনি জানিয়েছিলেন যে, দোকানটি আসলে তাঁর বান্ধবীর।

• বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে তিনি দোকান চালাচ্ছিলেন, শুধু ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার কামনায়।

১৪. “তুলসীদাস বলেছেন…”- তুলসীদাস কে ছিলেন? তিনি কী বলেছিলেন? 

উত্তর: ষোড়শ শতকের হিন্দু সন্ত ও কবি ছিলেন তুলসীদাস। তিনি ‘রামচরিতমানস’ রচনা করেছিলেন।

তুলসীদাস বলেছিলেন যে, পৃথিবীর রীতি খুব অদ্ভুত। শুঁড়ি এখানে দোকানে জাঁকিয়ে বসে থাকে, আর গোটা পৃথিবীর লোক তার দোকানে গিয়ে মদ কেনে। অন্যদিকে দুধওয়ালাকে দুধ বিক্রি করতে হয় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়ে।

১৫. “দোকানে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো,..”-কে, কী জিজ্ঞাসা করেছিল?

উত্তর: ‘এক বাঙ্গাল ছোকরা’ ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এ ঢুকেছিল এবং প্রশ্নটি করেছিল।

সে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সেখানে কমার্শিয়াল আর্ট সম্বন্ধে কোনো বই আছে কিনা।

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর (Marks 3)

১. “এমন সময় সপ্রমাণ হয়ে গেল…”-কী প্রমাণ হয়েছিল এবং কোন্ সময়ে?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে কলকাতা যে সত্যিই ‘আজব শহর’ তা প্রমাণ হওয়ার কথাই এখানে বলা হয়েছে।

• প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ছাতা-বর্ষাতিহীন প্রাবন্ধিক বাড়ি ফেরা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। শারীরিক কারণে ট্রামে উঠতে পারছেন না, আবার বাস-ট্যাক্সি চড়তে গেলে বেশি খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়। সবমিলিয়ে তাঁর মনের মধ্যে যখন একটা ‘পথহারানোর বেদনা’ জেগে উঠেছে, সেই সময়ে তিনি দেখেন সামনে বড়ো বড়ো হরফে লেখা আছে, ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’। কলকাতা শহরে ফরাসি বইয়ের এই দোকান দেখে তাঁর উপলব্ধি জন্মায় যে, সত্যিই কলকাতা ‘আজব শহর’।

২. “সামনে দেখি বড় বড় হরফে লেখা…”-কী লেখা ছিল? তা দেখে প্রাবন্ধিকের মনে কোন্ ভাবনার জন্ম হয়েছিল?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধের উল্লিখিত অংশে রাস্তার পাশে বড়ো বড়ো হরফে ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ লেখা থাকতে দেখেছিলেন।

• প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছিল যে, কলকাতা সত্যিই ‘আজব শহর’। তিনি ভেবেছিলেন, কোনো ফরাসি ব্যক্তি নিশ্চয়ই পথ হারিয়ে কলকাতা এসে পড়েছেন এবং তাঁর কাছে যেটুকু সঞ্চয় আছে তা নষ্ট করার জন্যই তিনি ফরাসি বইয়ের দোকান খুলেছেন।

৩. “কথাটা যদি সত্যি হয়…”-কোন্ কথা? প্রাবন্ধিক এখানে কোন্ সংশয় প্রকাশ করেছিলেন?

উত্তর: বাঙালি প্রকাশকরা বলে থাকেন যে শুধু ভালো বই ছাপিয়ে অর্থ রোজগার করা যায় না, সেজন্য প্রচুর সংখ্যায় রদ্দি উপন্যাসও ছাপতে হয়। এই ‘কথা’-টির প্রতিই এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

• বাঙালি প্রকাশকদের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রাবন্ধিক সৈয়দ মজতবা আলী কলকাতায় ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ প্রতিষ্ঠার সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ভালো বই ছাপিয়ে যদি অর্থ রোজগার না করা যায়, তাহলে কেবল ফরাসি বই বিক্রি করে কীভাবে ওই দোকানটি মুনাফা করবে তা নিয়েই তাঁর প্রবল সংশয় ছিল।

৪. “তাই আন্দাজ করলুম”-কোন্ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাবন্ধিক কী আন্দাজ করেছিলেন?

উত্তর: প্রকাশকরা যেখানে ভালো বই ছাপিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না বলে রদ্দি উপন্যাস ছাপানোর কথা বলেন, সেখানে কলকাতায় ফরাসি বইয়ের দোকান কী করে লাভ করবে তা নিয়ে লেখক সংশয়ী ছিলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি সেই দোকানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু আন্দাজ করেছিলেন।

প্রাবন্ধিক আন্দাজ করেছিলেন যে, ফরাসি বইয়ের দোকানটি সম্ভবত হাতির দাঁতের মতো যা শুধু দেখবার জন্য, চিবোবার জন্য রয়েছে অন্য গোপন দাঁত। অর্থাৎ দোকানের নাম বাইরে যদিও ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’, তার ভিতরে গিয়ে পাওয়া যাবে ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোধ-রেণু’, ‘ওষ্ঠ-রাগ’ ইত্যাদি চটুল বই।

৫. “আজব শহর কলকেতাই বটে।”-কেন প্রাবন্ধিকের এই ধারণা হয়েছে লেখো।

উত্তর: কলকাতায় ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’ দেখে প্রথম থেকেই শুধু ফরাসি বই বিক্রি করে কীভাবে দোকানি মুনাফা করবে তা নিয়ে প্রাবন্ধিক সংশয়ী ছিলেন। তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন যে, দোকানে ফরাসি বইয়ের আড়ালে ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোধ-রেণু’, ‘ওষ্ঠ-রাগ’ ইত্যাদি পাওয়া যাবে। এই ভরসায় দোকানে ঢোকার পরে তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, শুধু ফরাসি বই বিক্রি করেই দোকানদার পয়সা উপার্জন করতে চায়। দোকানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফরাসি বই, যার কিছু সাজানো, কিছু এলোমেলোভাবে ছড়ানো। দোকানদারের সেই সাহস দেখেই প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর মনে হয়েছিল কলকাতা সত্যিই ‘আজব শহর’।

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর (Marks 5)

১. “….কলকাতায় এসে বাঙালি হয়ে গিয়েছে।”-কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে এবং কেন?

উত্তর: কলকাতার ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর ফরাসি মহিলা-দোকানদার সম্পর্কে প্রাবন্ধিক এ কথা বলেছেন।

• ফরাসি বইয়ের দোকানটিতে ছিল অজস্র ফরাসি বই, যার কিছু সাজানো- গোছানো আর কিছু যেখানে-সেখানে ছড়ানো। যা দেখে প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছে যে, ফরাসি দোকানদার কলকাতায় এসে বাঙালি হয়ে গেছে। বাঙালি দোকানদারের মতোই বইগুলো সাজিয়েছে।

২. “…সুখ-দুঃখের দু’চারটা কথাও বলে ফেললেন।”-কে, কী কথা বলেছিলেন লেখো।

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে ‘সুখ-দুঃখের দু’চারটা কথা’ বলেছিলেন কলকাতার ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’-এর ফরাসি মহিলা-দোকানদার।

• প্রাবন্ধিকের সঙ্গে ফরাসি ভাষায় কথা বলার আনন্দে সেই ফরাসি মহিলা-দোকানদার বলেছিলেন যে, মাত্র তিন মাস তিনি এদেশে এসেছেন। সেকারণে তিনি ইংরেজি যথেষ্ট জানেন না, তবে কাজ চালানোর মতো জানেন। আর বইয়ের দোকানটি তাঁর এক বান্ধবীর, নিজের নয়। সেই বান্ধবীর অনুপস্থিতিতে শুধু ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার করার জন্যই তিনি দোকানে বসেছেন।

৩. “বুঝলুম কথা সত্যি।”-প্রাবন্ধিক যে কথা সত্যি বলে বুঝেছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে তুলসীদাসের একটি কথাকে সত্য বলে উপলব্ধি করেছিলেন। তুলসীদাস বলেছিলেন যে, পৃথিবীর রীতি খুব অদ্ভুত। এখানে শুঁড়ি দোকানে জাঁকিয়ে বসে থাকে, আর গোটা পৃথিবীর লোক সেখানে গিয়ে মদ কিনে আনে; অন্যদিকে যে দুধ স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সেই দুধ লোকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দুধওয়ালাকে বিক্রি করতে হয়। সেরকমই পৃথিবীর শিল্প-সংস্কৃতির পীঠস্থান প্যারিস থেকে ফরাসিদের নিজেদের সম্পদ বিক্রি করতে যেতে হচ্ছে অন্যান্য দেশে।

৪. “… স্মরণ করিয়ে দিলে, ‘কলম ফুরিয়ে গিয়েছে’।”-কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল এবং এর তাৎপর্য কী?

উত্তর: ভোরের কাক কা-কা ডাকে প্রাবন্ধিককে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল যে, ‘কলম ফুরিয়ে গিয়েছে’।

• প্রকৃতপক্ষে প্রাবন্ধিকের আগ্রহ ছিল ন্যুরনবর্গের মোকদ্দমার দলিল- দস্তাবেজের ওপর ভিত্তি করে হিটলারের চরিত্রবর্ণন বিষয়ক একটা বইকে পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করানো। এই বইয়ে স্পষ্ট ছিল হিটলার সম্বন্ধে তার শত্রু ফরাসিরা কী ভাবত সেটাও। কিন্তু ‘গৌরচন্দ্রিকা’ অর্থাৎ বই বিষয়ে উপস্থাপনার ভূমিকা শেষ হতে না হতেই রাত শেষ হয়ে যায়। ফলে প্রাবন্ধিককে বাধ্য হয়ে সেদিনের মতো লেখা শেষ করতে হয়।

৫. “আমার মনে বড় আনন্দ হল।”-কী দেখে, কেন প্রাবন্ধিকের মনে আনন্দ হয়েছিল?

উত্তর: কলকাতার ফ্রেঞ্চ বুক শপে লেখকের উপস্থিতিকালে একটি বাঙাল ছোকরা সেখানে এসেছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সেখানে কমার্শিয়াল আর্ট বিষয়ে কোনো বই আছে কিনা। যা শুনে লেখকের মনে অত্যন্ত আনন্দ হয়েছিল।

বাঙালি ফরাসি ভাষায় কমার্শিয়াল আর্টের বই খুঁজছে, এটাই ছিল লেখকের আনন্দের কারণ। তিনি অনুমান করেছিলেন যে, বাঙালি আত্মিকভাবে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে।

৬. ‘আজব শহর কলকেতা’-য় ফরাসি বইয়ের দোকান দেখে লেখকের মনে কীরূপ ভাবের উদয় হয়েছিল? দোকানের ভিতর ঢুকে লেখক কীরূপ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন?

উত্তর: বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য লেখক যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, এরকম সময়ে তাঁর চোখে আসে বড়ো বড়ো হরফে লেখা ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’। তা দেখে লেখকের প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল যে কোনো ফরাসি নিশ্চিতভাবেই পথ হারিয়ে কলকাতায় এসে পড়েছে, আর তার যা সামান্য পয়সা আছে সেটাকে নষ্ট করার জন্য বইয়ের দোকান খুলেছে। অথবা, এই দোকান হল হাতির দাঁতের মতো শুধু দেখানোর জন্য, চিবানোর দাঁত রয়েছে লুকানো। অর্থাৎ দোকানের নাম বাইরে যদিও ‘ফ্রেঞ্চ বুক শপ’, ভিতরে গিয়ে পাওয়া যাবে ‘খুশবাই’, ‘সাঁঝের পীর’, ‘লোরেণু’, ‘ওষ্ঠ রাগ’ ইত্যাদি।

দোকানের ভিতরে ঢুকে লেখক আশ্চর্য হয়ে দেখেন যে, সেখানে শুধুই ফরাসি বই, যার কিছু সাজানো-গোছানো এবং কিছু যত্রতত্র ছড়ানো। কলকাতার বাঙালি দোকানদারদের মতো করেই বইগুলো সাজানো রয়েছে। দোকানের ফরাসি মেমসাহেব ফরাসি ভাষাতেই লেখকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে তিনি কী ধরনের বই চান। দীর্ঘকাল ফরাসিতে অনভ্যস্ত থাকায় লেখক ফরাসি ভাষায় কথোপকথনে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু দোকানের মেমসাহেব লেখকের ইংরেজি ভালোভাবে বুঝতে পারছিলেন না, তাই লেখককে ফরাসিতে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।

এরকম পরিস্থিতিতে সাহস সঞ্চয় করে লেখক তাঁর দশ বছরের পুরানো অনভ্যাসকে টপকে ফরাসিতে কথাবার্তা শুরু করেন এবং মেমসাহেব তাতে বাহবা দেন। একে কথকের ফরাসি জাতির সহজাত উদারতা বলে মনে হয়। অতঃপর সেই দোকানদার মেমসাহেব লেখকের বইয়ের ফর্দ টুকে নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন বই আসা মাত্র লেখককে খবর দেবেন। কথাবার্তা সূত্রে জানা যায় যে, বইয়ের দোকান প্রকৃতপক্ষে সেই মেমসাহেবের বান্ধবীর, তার অনুপস্থিতিতে “শুধুমাত্র ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার কামনায়” তিনি দোকানে বসে আছেন। এর মধ্যে এক বাঙালি যুবক কমার্শিয়াল আর্টের বইয়ের সন্ধান করতে আসায় লেখক আনন্দিত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ন্যূরনবর্গের মোকদ্দমার দলিল-দস্তাবেজের ওপর ভিত্তি করে হিটলারের চরিত্রবর্ণন বিষয়ক একটা বই তিনি পেয়ে যান।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment