চারণ কবি কবিতার বিষয়বস্তু
প্রথম স্তবকের সংক্ষেপ: ‘চারণকবি’ কবিতাটি তিনটি স্তবকে বিভক্ত। অনৈতিকতার ভয়ংকরের কালো মেঘের ছায়া যখন একটি রাষ্ট্রের ওপর, একটি সমাজের ওপর, একটি গোষ্ঠীর ওপর অসময়ে এসে পড়ে তখন চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। নিয়মকানুন সব লোপাট হয়ে যায়। রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি যে সাধারণ মানুষ, যে স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়, তাকে অকালে শ্বাসরুদ্ধ হতে হয় ফাঁসির মঞ্চে।
প্রকৃতিতে যখন ঝড় আসে, প্রলয়ের ঝড়, ঘূর্ণি বায়ুর অবকাশে মুহুর্মুহু চমকে ওঠে বিদ্যুতের ঝলসানি কিংবা বজ্রের শব্দ তখন মানুষের প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলে প্রকৃতি। ঠিক তেমনই রাষ্ট্র যখন মারণযজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেয়, তখন শ-য়ে শ-য়ে মানুষ নিভৃত চিতার আগুনে পুড়তে থাকে। তবে এ অনাচার দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কেন-না প্রতিবাদের ঝিরঝিরে বৃষ্টিও তখনই প্রলয়ের রূপ নেয়, আর দিগন্তে লুকিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ বজ্র হয়ে ঝরে পড়ে মাটিতে। তখন কবি দেশমায়ের বেদনাশ্রু বুকে নিয়ে, কারাগারের মধ্যেই তরবারিতে শান দিতে থাকেন দিন বদলের আশায়। নিভৃত অন্ধকার থেকে ভেসে আসে সেই গানের সুর, যা প্রাণের জয়গান ঘোষিত করে।
দ্বিতীয় স্তবকের সংক্ষেপঃ যে কষ্ট কবির বুক ঠেলে ওঠে, কাঁপিয়ে দেয় স্বরতন্ত্রীকে, তা গান হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে-বাতাসে। মানুষ শোনে সেই গান, উজ্জীবিত হয় তাদের প্রাণ, বিপ্লব বিস্ফারিত বুকে উঁকি দেয় আশা, অনন্ত দিনের এক ভরসা। তখন শাসকের রক্তচক্ষু আগুন জ্বালায়, কণ্ঠরুদ্ধ করতে চায় তাদের; কয়েদ করে, ফাঁসিকাঠে ঝোলায় তরতাজা প্রাণকে। কবি কষ্ট পান, কিন্তু ভোলেন না গান। তাঁর দীর্ঘশ্বাসজড়িত স্বরধ্বনি শোনায় বিপ্লবের বাণী।
তৃতীয় স্তবকের সংক্ষেপঃ ওদিকে ফাঁসির মঞ্চ ভারসাম্য রক্ষার জন্য মাটিতে মিশিয়ে যায়। বিপ্লবীরা ভয় পায় না মৃত্যুতে, মৃত্যুকে। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে দিন বদলের অদেখা ভবিষ্যৎ হাতছানি দেয় তাদের। ফলে প্রতিবাদ চলতে থাকে অবিরাম। শাসকের বুকে ভয় ঢোকে, নিছক বারুদের স্তূপে তারা মাথা ঠোকে। যে ফাঁসুড়ে একদিন সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, সেই ফাঁসুড়েই ঝুলে পড়ে তারই হাতে গড়া ফাঁসির দড়িতে। উৎখাত হয় স্বৈরাচারী শাসক, অদৃশ্য হয় অন্যায় অত্যাচার। কবির কলম লেখে সেই শোষণমুক্ত আগামী দিনের ইতিহাস।
আরও পড়ুন – ভারতে প্রচলিত ভাষা পরিবার MCQ