স্বামী বিবেকানন্দ ‘কর্মযোগ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন
স্বামী বিবেকানন্দের মতে কর্মযোগ
স্বামী বিবেকানন্দের মতে মানুষের চরম লক্ষ্য হল মুক্তি। এই মুক্তিলাভের জন্য মানুষ সসীমত্বের বাঁধন কাটাতে চায়। মুক্তির জন্য কোন্ পথ অবলম্বন করতে হবে? – এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’-র প্রসঙ্গ এনেছেন। গীতায় বলা হয়েছে- ‘নিরন্তর কর্ম করো, কিন্তু কর্মে আসক্ত হয়ো না’। তিনি বলেন আসক্তি ছাড়া যা পারো তাই করো; কিন্তু কর্মের জালে জড়িয়ে পড়ো না-তাই মুক্তির জন্য মানুষকে সকল প্রকার আসক্তি ত্যাগ করতে হবে।
আসন্তি ত্যাগের দুটি উপায়
আসক্তি ত্যাগের উপায় হল দুটি। যথা- নিবৃত্তি মার্গ এবং প্রবৃত্তি মার্গ। নিবৃত্তি মার্গে নেতি, নেতি (এটি নয়, এটি নয়) করে সকল কিছু ত্যাগ করতে হয়। অপরপক্ষে, প্রবৃত্তি মার্গে ইতি, ইতি করে সকল কিছু গ্রহণ করে তবে সেগুলিকে ত্যাগ করতে হয়।
সাধারণ মানুষ প্রবৃত্তি মার্গকে মুক্তির পথ হিসাবে বেছে নিলেও মহাপুরুষগণ কিন্তু নিবৃত্তি মার্গকে মুক্তির পথ বলে মনে করেন। কিন্তু যে পথই অনুসরণ করা হোক না কেন মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে অবশ্যই নিষ্কামভাবে কর্মযোগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে।
ব্যাবহারিক কর্মের মধ্য দিয়েই মুক্তিলাভ সম্ভব
পার্থিব জীবন, পরবর্তী অন্য সব জীবনের নির্ধারক। এই জগতে তুমি যেমন কাজ করবে, পরজগতে তেমন তার ফল পাবে। এ প্রসঙ্গে স্বামীজী, গীতায় যে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে, তারই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন প্রকৃত কর্মযোগীকে নিষ্কামভাবে কর্ম সম্পাদন করতে হবে। যিনি কর্মযোগী তিনি ফলাকাঙ্ক্ষাবিহীন কর্তব্যের জন্যই কর্তব্যকর্ম করে থাকেন। অনাসক্তি হল পরিপূর্ণ আত্মত্যাগ। বাহ্য বিষয়ে অনাসক্তি অর্জন করতে গেলে নিরন্তর নিষ্কাম কর্ম করে যেতে হবে। তবে নিষ্কাম ভাবে কর্ম করার ক্ষমতা মানুষ কখনোই একদিনে আয়ত্ত করতে পারে না। ক্রমিক ও নিরন্তর কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই মানুষ ধীরে ধীরে এমন শক্তি অর্জন করতে পারে।
মন্তব্য
সুতরাং, মূল্যপ্রাপ্তির আশা না রেখে কাজ, কর্মফলের প্রতি নিরাসক্তি, ব্যক্তিগত স্বার্থ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ঔদাসীন্য -এগুলিই কর্মযোগীর নিঃস্বার্থপরতার লক্ষণ এবং এই নিষ্কাম কর্ম পথেই মুক্তি বা মোক্ষলাভ সম্ভব।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ