স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করো
স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে আলোচনা করো

স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন

আইনের আলোচনায় স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। স্বাভাবিক আইন মানুষের তৈরি নয়, রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট বা সংরক্ষিতও নয়, স্বাভাবিক আইন সামাজিক প্রয়োজন থেকে আপনা- আপনিই গড়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও অ্যারিস্টট্লের রচনায় এর প্রথম উল্লেখ দেখা যায়। তবে স্বাভাবিক আইনের ধারণার সূত্রপাত সোফিস্টদের চিন্তায়। স্বাভাবিক আইন যদিও বিধিবদ্ধ নয় এবং এর পিছনে সার্বভৌমের সমর্থন থাকে না, তবুও এই আইন সকলেই মেনে চলতে বাধ্য। কেন-না, এই আইন হল মানুষের স্বাভাবিক চাহিদার প্রকাশ।

[1] স্বাভাবিক আইন ও সর্বজনীন আইন: অ্যারিস্টট্ল সাধারণ আইন ও সর্বজনীন আইনের মধ্যে পার্থক্য করেছিলেন। প্রত্যেক সমাজে তার সদস্যদের জন্য যে নিয়ম তৈরি হয়, তা হল সাধারণ আইন। অন্যদিকে, সর্বজনীন আইন কোনো বিশেষ সমাজের নয়, সমগ্র মনুষ্য সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্টোয়িক দর্শনে স্বাভাবিক আইনের তত্ত্বটি আরও স্পষ্ট রূপ নেয়। স্টোয়িকদের মতে, স্বাভাবিক আইন মান্য, কেন-না তা মুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

[2] স্বাভাবিক আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন: রোমানরা রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক আইনের ধারণাটিও ব্যবহার করেন। স্বাভাবিক আইন নামটি রোমান আইনজ্ঞদের দেওয়া। রোমে স্বাভাবিক আইন আদালতে গ্রাহ্য না হলেও বিচারের সময় বিচারকরা স্বাভাবিক আইন দ্বারা প্রভাবিত হতেন। মধ্যযুগে স্বাভাবিক আইনের ধারণা রোমান ক্যাথলিক গির্জার সমর্থন লাভ করে। ধর্মযাজকেরা স্বাভাবিক আইনকে রাষ্ট্রীয় আইনের ওপর স্থান দেওয়ার দাবি করেন। ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে স্বাভাবিক আইনের ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বোদাঁ, হন্স, লক, রুশো প্রমুখ দার্শনিকরা ছিলেন স্বাভাবিক আইনের সমর্থক। এঁরা মনে করতেন, স্বাভাবিক আইন যেহেতু যুক্তিযুক্ত তাই যারা আইন রচনা করেন তাদের দায়িত্ব হল এই আইনকে বিধিবদ্ধ রূপ দেওয়া। স্বাভাবিক আইনের তত্ত্ব অনুসারে, রাষ্ট্রীয় আইন যদি স্বাভাবিক আইনকে রূপায়িত করে তবে তা মান্য। অন্যথায় সেই আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা নাগরিকদের থাকে না।

সমালোচনা

স্বাভাবিক আইনের তত্ত্বকে এইভাবে সমালোচনা করা হয়-

1. অস্পষ্ট ধারণা: স্বাভাবিক আইনের যেহেতু কোনো বিধিবদ্ধ রূপ নেই, তাই স্বাভাবিক আইনের ধারণাকে অস্পষ্ট বলে মনে করা হয়।

ii. শাশ্বত নয়: স্বাভাবিক আইনকে শাশ্বত বা চিরন্তন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু সামাজিক প্রয়োজন থেকে স্বাভাবিক আইনের উদ্ভব বলে সামাজিক চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে স্বাভাবিক আইনেরও পরিবর্তন ঘটে।

iii. বলবৎযোগ্য নয়: স্বাভাবিক আইনের পিছনে রাষ্ট্রের সমর্থন থাকে না বলে এই আইন বলবৎযোগ্য নয়।

মন্তব্য: স্বাভাবিক আইন বলবৎযোগ্য না হলেও এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না, কারণ এই আইন সামাজিক প্রয়োজন মেটায়। রাষ্ট্রীয় আইন যদি স্বাভাবিক আইনের পরিপন্থী হয় তাহলে তা জনসমর্থন লাভে বঞ্চিত হয় এবং জনসাধারণ তার বিরোধিতা করে। ফলে সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সবশেষে বলা যায় যে, বলবৎযোগ্য না হয়েও আন্তর্জাতিক আইন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, স্বাভাবিক আইনও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment