স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির ধারণা ব্যাখ্যা করো

স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির ধারণা ব্যাখ্যা করো

স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির ধারণা ব্যাখ্যা করো
স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির ধারণা ব্যাখ্যা করো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা সম্পর্কিত ধারণা

রাজনৈতিক চিন্তার জগতে স্বাধীনতার ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা হল স্ব-অধীনতা। অর্থাৎ, নিজের ইচ্ছার অধীনে জীবনযাপন করার নামই হল স্বাধীনতা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অবশ্য ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা হল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত এমন কতকগুলি সুযোগসুবিধা, যেগুলি ছাড়া ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে না। পরাধীন দেশে স্বাধীনতা এক মহার্ঘ বস্তু। ব্রিটিশ শক্তির অধীনে থাকা ভারতবর্ষকে এজন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী মৃত্যুঞ্জয়ী সেনানায়ক হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির ধারণা সব দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্বসূরি কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ পরাধীন ভারতে ব্রিটিশদের ‘স্বায়ত্তশাসন’ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন। নেতাজি এর বিরোধিতা করেন। 1931 খ্রিস্টাব্দে করাচিতে “সর্বভারতীয় নওজোয়ান কংগ্রেস-এর” অধিবেশনে সভাপতিত্ব করে সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, “ভারতবর্ষে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব রকম দাসত্ব-সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে এবং আমাদের সর্বতোভাবে এবং পূর্ণভাবে হতে হবে।”ও স্বাধীনতা প্রসঙ্গে নেতাজির ধারণার বিভিন্ন দিক উঠে আসে, এগুলি হল-

[1] অর্থনৈতিক স্বাধীনতা: নেতাজি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, “স্বাধীনতার অর্থ কেবল রাজনৈতিক বন্ধনমুক্তি নয়, এই স্বাধীনতা সম্পদকে সমানভাবে বণ্টন করবে…।”

[2] সামাজিক সমতা: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতার ধারণা সব ধরনের বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্ত এক সামাজিক সমতাকে প্রতিষ্ঠা করার পক্ষপাতী। এজন্য নেতাজি সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দলিত শ্রেণি, মহিলা ও অন্যান্য দুর্বল শ্রেণির মানুষদের সপক্ষে স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করতেন, যতদিন না পর্যন্ত ভারতে ধনী, দরিদ্র, জাতি, ধর্ম, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ততদিন প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে না।

[3] জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অবসান: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিশ্বাস ছিল, প্রকৃত স্বাধীনতা দেশের মধ্যে জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় অসহিষুতার পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

ব্রিটিশ সরকার 1933 খ্রিস্টাব্দে ভারতের জন্য সাম্প্রদায়িক ভাগ-বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে প্রাদেশিক ও রাষ্ট্রীয় আইনসভায় আসন বিন্যাসের ব্যবস্থা করে। নেতাজি এই ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করেন। নেতাজি বুঝতে পেরেছিলেন, শ্বেতপত্রের মূল উদ্দেশ্য হল ভারতকে আরও খণ্ডিত করা, ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। ব্রিটিশদের এই ‘Divide and Rule’-এর নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন সুভাষচন্দ্র। দেশের বাইরে গিয়ে ‘আজাদ হিন্দ বাহিনী’ গড়ে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে সমান মর্যাদা দিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন।

[4] স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ নির্বাচন: নেতাজি স্বাধীনতার জন্য শেষপর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কংগ্রেসের অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই পূর্ণ স্বাধীনতার স্বপ্নকে সফল করে তোলার জন্য বিদেশের মাটিতে স্বাধীন ভারত সরকার গড়ে তুলে ইংরেজ সরকারকে নোটিশ দিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন নেতাজি। 1943 খ্রিস্টাব্দে ৪ আগস্ট তিনি ঘোষণা করেন, “স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার। পৃথিবীতে আজ আর এমন কোনো শক্তি নেই যে সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করে রাখতে পারে।”

উপসংহার: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ব্রিটিশরা 11 বার কারারুদ্ধ করেছিল। তবু তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসেননি। স্বাধীনতার জন্য তাঁর আত্মত্যাগ ও আত্মবলিদানের কোনো তুলনা নেই। স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment