স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি বলতে কি বোঝো? ব্যাখা করো

স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি বলতে কি বোঝো? ব্যাখা করো

স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি বলতে কি বোঝো? ব্যাখা করো
স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি বলতে কি বোঝো? ব্যাখা করো

স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি

গীতায় দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন-

"প্রজহাতি যদা কামান্ সর্বান্ পার্থ মনোগতান্। 
আত্মন্যেবাত্মনা তুষ্টঃ স্থিতপ্রজ্ঞস্তদোচ্যতে।।” (২/৫৫)

অর্থাৎ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি সমস্ত কামনা-বাসনা ত্যাগ করেন। কারণ যতক্ষণ মন কামনা-বাসনা দ্বারা চালিত হয়, ততক্ষণ মন আত্মাতে স্থির হতে পারে না। কামনাই মনকে চালিত করে। তাই বিষয়ের বাসনা দূর না হলে কোনো ব্যক্তিই স্থিতপ্রজ্ঞ হতে পারে না। মানুষের বহুবিধ কামনা, যেমন- অর্থের কামনা, যশের কামনা, স্বর্গলাভের কামনা ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে। কামনা পূরণে যে সুখ তা অনিত্য, তুচ্ছ এবং দুঃখেরই নামান্তর। কিন্তু স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি যে সুখ অনুভব করেন তার তুলনায় কামনা পূরণের সুখ মূল্যহীন। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি নিজের আত্মাতেই তৃপ্ত, বাইরের কোনো সুখ তিনি কামনা করেন না।

অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, যখন সাধক তাঁর সমস্ত মনোগত কামনা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে আপনাতেই আপনি সন্তুষ্ট থাকেন, তখন তাকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়। সাধক বুদ্ধিকে স্থির রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু কামনাগুলি সর্বাংশে পরিত্যক্ত হলে বুদ্ধি স্থির করার চেষ্টা করতে হয় না, তা স্বতঃস্বাভাবিক স্থির হয়ে যায়। দুঃখে যিনি উদ্বেগহীন, সুখে যিনি স্পৃহাশূন্য, যিনি সর্বতোভাবে আসক্তি, ভয় এবং ক্রোধরহিত হয়েছেন, সেই মননশীল ব্যক্তিকেই স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়। গীতানুসারে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিকে আদর্শপুরুষ বলা হয়। সকল বিষয়ে আসক্তি শূন্য হয়ে সেই বিষয়ের শুভ-অশুভ প্রাপ্তিতে যিনি আনন্দিত ও অসন্তুষ্ট হন না, তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির শরীর, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি এমনকি স্ত্রী, পুত্র, গৃহ-সম্পত্তি ইত্যাদি কোনো কিছুতেই আসক্তি বা আকর্ষণ থাকে না।

উদাহরণ কচ্ছপ যেমন নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সর্বদিক থেকে সংকুচিত করে রাখে অর্থাৎ কেবল তখন তার পৃষ্ঠদেশ দেখা যায়, চারটি পদ, লেজ ও মস্তক দেখা যায় না, ঠিক তেমনই স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি পঞ্চ-ইন্দ্রিয় ও মন -এই ছয়টিকে নিজ নিজ বিষয়গুলি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এইরূপ ব্যক্তির ইন্দ্রিয়গুলির সঙ্গে কোনোরূপ মানসিক সম্পর্ক বজায় থাকে না এবং তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হন।

মন্তব্য পরমাত্মতত্ত্ব অনুভূত হওয়ার ফলে স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির বিষয়তৃয়া নিবৃত্ত হয়ে যায় অর্থাৎ সংসারে তার কোনো রসতৃয়া থাকে না। বিষয়চিন্তা থেকে জন্মায় আসক্তি, আসক্তি থেকে কামনা, কামনা থেকে ক্রোধ, ক্রোধ থেকে জন্ম নেয় মূঢ়তা, মূঢ়তা থেকে স্মৃতি ভ্রংশ ও স্মৃতিভ্রষ্ট হলে বুদ্ধি নাশ এবং বুদ্ধি ভ্রষ্ট হলে মানুষের বিনাশ বা পতন হয়। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি নিষ্কাম কর্ম লাভের অধিকারী হন এবং মুক্তির পথে অগ্রসর হতে পারেন।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment