সুলতানি যুগে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের পারস্পরিক ভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা, সুলতানি যুগে ভারতে কীভাবে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয় সাধিত হয়েছিল
সুলতানি যুগে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের পারস্পরিক ভাব
সুলতানি যুগের প্রথম পর্যায় ছিল হিন্দু-মুসলমানের সংঘাতের যুগ। কালক্রমে তা সমন্বয়ের যুগে পরিণত হয়। এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব বিস্তার করে গড়ে তোলে সম্প্রীতির সেতু।
(1) সহনশীলতা: সুলতানি আমলে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সহনশীলতার প্রভাবে ধর্মের ক্ষেত্রে এক সমন্বয় দেখা দেয়। হিন্দুরা যেমন মুসলমানের উৎসবে যোগ দিত তেমনই মুসলমানরাও হিন্দুর উৎসব প্রাঙ্গণে মিলিত হত। অন্যদিকে প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বহু হিন্দুদের দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয়।
(2) সংশ্লেষণ: মুসলমান সমাজে যেমন অনেক হিন্দুপ্রথা প্রবেশ করে তেমনই হিন্দুসমাজেও মুসলমানি বেশভূষা ও খাদ্যাভ্যাস প্রচলিত হয়। এমনকি মুসলিম রাজদরবারের অনেক আদবকায়দা হিন্দুসমাজে প্রচলিত হয়। এভাবেই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় বা সংশ্লেষণ সাধিত হয়।
(3) স্থাপত্য: এই যুগে হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যরীতির সমন্বয়ে এক নতুন শিল্পরীতির সৃষ্টি হয়েছিল। মুসলিমদের মসজিদ অলংকরণে হিন্দু প্রতীক, আবার হিন্দুদের স্থাপত্যরীতিতে মুসলিম অলংকরণের নকশা পরিলক্ষিত হয়। দিল্লির কুতুবমিনার, বাংলার আদিনা মসজিদ, জৌনপুরের অটলা মসজিদ প্রভৃতি মুসলিম স্থাপত্যে হিন্দুরীতির প্রভাব লক্ষ করা যায়।
(4) সাহিত্য-সংস্কৃতি: সাহিত্যে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। হুসেন শাহ, জয়নাল আবেদিন প্রমুখ শাসক সংস্কৃত থেকে দেশীয় ভাষায় হিন্দু ধর্মের পুরাণ অনুবাদ করেন। পরাগল খাঁ ও তাঁর পুত্র ছুটি খাঁ বাংলায় মহাভারত অনুবাদ করেছিলেন। এ ছাড়াও রাজতরঙ্গিণী ফারসি ভাষায় এবং বহু ফারসি ও আরবি গ্রন্থ হিন্দুরা নিজস্ব ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।
(5) ভক্তিবাদী ও সুফিবাদীদের অবদান: এই যুগের ধর্মসাধকেরা অনেকে হিন্দু-মুসলিম মিলনের প্রচেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে শ্রীচৈতন্যদেব, কবীর, রামানন্দ, নামদেব প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এঁরা ঈশ্বরের উপাসনা এবং সকল মানুষকে সমান চোখে দেখার আদর্শকে প্রকৃত ধর্ম বলে মনে করতেন। এ বিষয়ে হিন্দু ভক্তিবাদ ও মুসলিম সুফিবাদ উভয়েরই সমান অবদান ছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর