সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা

সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

লেখ্য বা লিখিত সাহিত্যের উৎপত্তি অনেক পরে হয়েছে। প্রাচীন গ্রিস, মিশর, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি দেশে আদি ভাষার উৎস ছিল মৌখিক। সেই ভাষা বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ভাষার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কারের পরে মুদ্রিত গ্রন্থের সৃষ্টি হয়। বৈদিক বা ছান্দস ভাষা বলতে বুঝায় সংস্কৃত ভাষা। বর্তমান ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে তৎসম, তদ্ভব, দেশী প্রভৃতি শব্দ পাওয়া যায়। এছাড়া আরবি, ফরাসি, পোর্তুগিজ, ও লন্দাজ, ইংরেজি শব্দের ও ব্যবহার দেখা যায় বাংলা ভাষায়। সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব।

যখন মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার হয়নি তখনও মানুষ ছড়া বলতেন, মানুষের মুখে মুখে ছড়া ঘুরে বেড়াত। পরবর্তী কালেও ছড়ার গুরুত্ব কমেনি। ছড়া লেখায় পরিবর্তন এসেছে। বাংলা শব্দের সাথে সংস্কৃত দেশী-বিদেশী শব্দ ও ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন গদ্যের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। বাংলা ছড়া বিশেষ মাত্রা পেল সুকুমার রায়ের লেখা ছড়ায়।

বংশপরিচয় ও জন্ম

বাংলা সাহিত্যে বিরল প্রতিভা সুকুমার রায়। তাঁর জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর এক ঐতিহ্যশালী পরিবারে। এই পরিবারটি ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্পের এক আশ্চর্য মিলন ক্ষেত্র। তাঁর পিতার নাম উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও মাতা বিধুমুখী দেবী। উপেন্দ্রকিশোর রায়ের ছিল বহুমুখী প্রতিভা এবং বাংলা সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন খ্যাতিমান ব্যক্তি। বিধুমুখী ছিলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ও ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা। সুকুমার রায়ের ছোটোবেলা নাম রাখা হয় তাতা, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস রাজর্ষি থেকে। সুকুমার রায়ের পুত্র বিশ্ববরেণ্য অস্কার জয়ী সত্যজিৎ রায়। সুকুমার রায়ের পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন চিত্রশিল্পী, ছাপাখানা, ফটোগ্রাফ গবেষণা ও বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক। উপেন্দ্রকিশোরের অন্যতম বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই পরিবারে খ্যাতিমান ব্যাক্তিগণের ছিল নিত্য যাতায়াত এবং সাহিত্যের বিশেষ এক পরিবেশ ছিল।

শিক্ষা

সিঁথি স্কুল থেকে সুকুমার প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তিনি রসায়ন ও পর্দাথবিদ্যা নিয়ে ডবল অনার্স পাশ করেন। ১৯১১ সালে মুদ্রণ শিল্পে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যান। ১৯১৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

সাহিত্য সৃষ্টি

সুকুমার রায়ের প্রথম লেখা কবিতা ‘নদী’ প্রকাশিত হয় শিবনাথ শাস্ত্রীর পত্রিকা ‘মুকুল’-এ। তিনি যখন সিটি কলেজের ছাত্র তখন তিনি লেখেন হাসির নাটক ছোটোদের জন্য। কলেজ ছাড়ার পরে ‘ননসেন্স’ ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন এবং ক্লাবের মুখপত্রের ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নাম ছিল। তিনি এই সময় ‘ঝালাপালা’ ও ‘লক্ষণের শক্তিশেল’ নামে নাটক দুটি লেখেন। তাঁর পিতার পত্রিকা সন্দেশে এই সময় তাঁর লেখা ও ছবি প্রকাশিত হত। বিলেত যাওয়ার আগে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তিনি ‘গোড়ায় গলদ’ নাটক অভিনয় করেন।

স্বদেশের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালোবাসা। স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর লেখা হাসির গান মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। বিলেত থেকে দেশে ফিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সানডে ক্লাব’। তিনি লিখেছেন কাব্যগ্রন্থ ‘আবোল-তাবোল’, ‘খাইখাই’, প্রবন্ধ ‘অতীতের ছবি’, ‘বর্ণমালাতত্ত্ব’, অবাক জলপান’, ‘হিংসুটি’, ‘ভাবুক সকাল, “চলচ্চিত্তচঞ্চরী, শব্দকল্পদ্রুম’ প্রভৃতি। রচনার সঙ্গে আঁকা ছবিগুলিও অতুলনীয়। তাঁর গল্প সংগ্রহ ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘পাগলা দাশু’, ‘বহুরূপী’ প্রভৃতি।

সুকুমার রায়ের প্রত্যেকটি লেখা বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। তাঁর সরস লেখাগুলোতে আছে অফুরন্ত হাসির খোরাক। আবার ছড়া লেখায় তিনি বাংলা সাহিত্যে আনলেন নতুন জোয়ার। রবীন্দ্রনাথ তখন বাংলা সাহিত্যের সমস্ত শাখার মধ্য গগনে উজ্জ্বল সূর্যের শিখায় দীপ্তিমান। সুকুমার রায় ছড়া লেখায় নতুন দিগন্ত খুলেল দিলেন-বিশেষ করে হাসির ছড়ায়। তাঁর লেখা ছড়া এতই জনপ্রিয় যে পাঠকেরা তাঁকে বলেন ছড়ার রাজা। ছড়া যে পাঠকের কাছে খুব জনপ্রিয় হতে পারে তা প্রথম প্রমাণ করেন সুকুমার রায়

উপসংহার

সুকুমার রায়ের লেখা এখনও পাঠকের কাছে খুবই প্রিয়। এখনও তিনি অমর তাঁর অসাধারণ সাহিত্য সৃষ্টির জন্য। তাঁর প্রয়াণ ঘটে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর। তাঁর কোনো লেখাই পুস্তাকাকারে তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। ‘আবোল তাবোল’ প্রথম প্রকাশ পায় ১৯২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন – রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

2 thoughts on “সুকুমার রায় প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে”

Leave a Comment