সাহিত্যপাঠ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- ভূমিকা
- সমাজজীবন ও সাহিত্য
- সাহিত্য সমাজের দর্পণ
- সাহিত্যে ও জীবনে আদর্শ ও যুক্তিবাদ
- দেশ ও জাতিগঠনে সাহিত্য
- সাহিত্যের স্বধর্ম
- উপসংহার
ভূমিকা
জীবনে জীবন যোগ হয় সাহিত্যের অঙ্গনে, সাহিত্য তাই জীবনেরই এক নাম। জীবন ও সাহিত্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, সাহিত্যের সঙ্গে জীবনের এক প্রগাঢ় সম্পর্ক। সাহিত্যের মধ্য দিয়েই মানুষ পায় মহত্তর ও বৃহত্তর জীবনের দিশা, সাহিত্য গড়ে তোলে আমাদের জীবনবোধ, অন্ধকার থেকে আলোকের পথে যাত্রা শুরু হয় সাহিত্যের অমৃতময় স্পর্শে।
সমাজজীবন ও সাহিত্য
সাহিত্যসৃষ্টির আদিযুগ থেকেই সমাজজীবনের সঙ্গে এক গভীরতর সম্পর্ক, কেন-না সমাজজীবনই সাহিত্যের রস ও রসদ। সমাজে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলা বৈচিত্র্যময় ঘটনাসমূহের প্রতিভাস হল সাহিত্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবন তথা সমাজকে অবলম্বন করেই গড়ে ওঠে সাহিত্য। সভ্যতার আদিলগ্নে মানুষ ছিল অরণ্যচারী, মরু থেকে মেরুতে অভিযান চালিয়ে মানুষ ধীরে ধীরে সৃষ্টি করেছে সমাজ। সেই সমাজের মানচিত্র, সেখানকার মানুষের সুখদুঃখ, আনন্দ-বেদনাময় কাহিনিগুলো স্থান পেয়েছে সাহিত্যের পাতায়। এভাবেই সমাজজীবন ও সাহিত্য হয়ে উঠেছে একে অপরের পরিপূরক।
সাহিত্য সমাজের দর্পণ
সাহিত্যকে বলা হয় সমাজের দর্শন, সমাজেরই দর্পণ। সমাজের বুকে ঘটে চলা নানা বৈচিত্র্যময় ঘটনার ভাবতরঙ্গ কবি সাহিত্যিকদের হৃদয়ে যে অভিঘাত সৃষ্টি করে তাই রূপ পায় সাহিত্যের কথামালায়। সমাজজীবন প্রভাবিত হয় কবি সাহিত্যিকের লেখনীতে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনা, বিদ্রোহী কবি নজরুলের বিপ্লবাত্মক কবিতা, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের ‘বন্দেমাতরম্’ সঙ্গীত, কিশোর কবি সুকান্তের রক্তঝরা কাব্যকবিতা জনগণের মনকে আন্দোলিত-আলোড়িত করেছিল। সে যুগের সাহিত্য হয়ে উঠেছিল বিপ্লবী-সাধকদের বিপ্লবের বাণী। শুধু একটি যুগই নয়, সমস্ত যুগের ও সমাজের নিরিখেই সাহিত্য হয়ে ওঠে এক বিরাট ইতিবাচক শক্তি। সাহিত্যিক হয়ে ওঠেন সেই শক্তিপ্রকাশের দিশারি।
সাহিত্যে ও জীবনে আদর্শ ও যুক্তিবাদ
বাস্তিক, সামাজিক, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক চেতনা বিকশিত হয় কাব্য, উপন্যাস, নাটকপ্রবন্ধ ও সঙ্গীতে। কবি-সাহিত্যিক ও নাট্যকারেরা যুক্তির আলোয় আলোকিত করেন সভ্যতার প্রতি মুহূর্তের সত্য ও স্বরুপকে। দেশে দেশে রেনেসাঁসের আলো এসে পড়েছে সাহিত্যের জাদুকরী স্পর্শে। একনায়কতন্ত্রবাদের অবসান ঘটেছে, অত্যাচারী শাসক ভীত হয়েছে, যুদ্ধোন্মাদ আর কালোবাজারীর মুখোশ খসে পড়েছে কবি-সাহিত্যিক নাট্যকারদের অগ্নিবর্ষী কলমে। এভাবেই তারা হয়ে উঠেছেন নব প্রাণের, নব জীবনের নব আলোকের ভাষ্যকার।
দেশ ও জাতিগঠনে সাহিত্য
দেশ ও জাতিগঠনে সাহিত্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোনো দেশ বা জাতির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ নির্ভর করে সাহিত্য-সংস্কৃতির ওপর। কারণ কোনো দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ এনে দেয় জাতীয় জীবনের সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে, পক্ষান্তরে সাহিত্য চয়ন করে তৈরি হয় মনোজগতের সম্পদ। দেশ ও জাতিকে নবচেতনায় আলোকিত করতে পারে সাহিত্য। দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির মানোন্নয়নের অর্থই হল জাতির জীবনের উন্নতি। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, দেশ ও জাতির চরম অবনমন ও দুঃসময়ে সাহিত্যই হয়ে উঠেছে একমাত্র সঠিক পথ দেখানোর অবলম্বন। ভারতীয় সাহিত্যের আদর্শবাদ জাতীয় জীবনকে করেছে ঐশ্বর্যময়। তাই সাহিত্যপাঠ একান্ত জরুরি।
সাহিত্যের স্বধর্ম
একথা চরম সত্য যে, সমাজই হল সাহিত্যের প্রতিবিম্ব। সমাজজীবনকে নিয়েই গড়ে ওঠে সাহিত্যের জগৎ তবু সাহিত্যের শৈল্পিক রসধর্ম বাদ দিলে তা আর সাহিত্য থাকে না। প্রকৃত সাহিত্যের মধ্যে থাকে শিল্পসৌকুমার্য, সাহিত্যের রীতি-রূপ-রসের অনন্য মাধুরীতে প্রকৃত সাহিত্যের রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। কালজয়ী সাহিত্যিকরা সমাজের যাবতীয় ভালো-মন্দ, রূপ-অরূপ-কুরূপ তুলে ধরেছেন সাহিত্যগুণেরই সম্মিলনে। তাই বলা যায়, সাহিত্য জীবন ও সমাজের দর্শন ও দর্পণ হলেও তা কখনোই প্রকৃত সাহিত্যগুণ বর্জিত হয়ে কালজয়ী হতে পারে না।
উপসংহার
জীবন ও সমাজ যতদিন রয়ে যাবে পৃথিবীতে, ততদিনই অমর সাহিত্য চিরজীবী থাকবে জীবনের উপকূলে। কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের সোনার ফসল তুলে ধরেন মানবকল্যাণে। তাই তাঁরা জীবনের সৃজক, তাঁদের সৃষ্টিশীলতায় মূর্ত হয়ে ওঠে আমাদের জীবনবোধ। তাঁদের মহৎ সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের প্রধান কর্তব্য।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৫। ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৭। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৮। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৯। মোবাইল ফোনের সুফল-কুফল – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২০। আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২১। বাংলার উৎসব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২২। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৩। প্লাস্টিক দূষণ-একটি ভয়াবহ সমস্যা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৪। গাছ আমাদের বন্ধু – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৫। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৬। বইপড়া – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৭। শিশুরাই সমাজের ভবিষ্যৎ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৮। করোনা ভাইরাস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৯। অনলাইন পড়াশোনা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা