সাম্প্রদায়িকতা রচনা 400+ শব্দে | Communalism Essay

সাম্প্রদায়িকতা রচনা

সাম্প্রদায়িকতা রচনা
সাম্প্রদায়িকতা রচনা

ভূমিকা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “এখন থেকে সর্বপ্রকারে প্রস্তুত থাকতে হবে যেন দৃষ্টির সামনে মূঢ়তায় বর্বরতায় আমাদের নূতন ইতিহাসের মুখে কালি না পড়ে।”

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘটেছে ভারতের মাটিতে অসহায় মানুষের অশ্রুপাত, রক্তপাতে কলঙ্কিত হয়েছে গৌতম বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, স্বামী বিবেকানন্দের সাম্যের বাণী, মূঢ়তায় বর্বরতায় আমাদের ইতিহাস হয়েছে কালিমা লিপ্ত, নির্লজ্জ হিংসা, হানাহানি সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, সম্প্রদায়িকতার দাঙ্গা কেড়ে নিয়েছে অজস্র নবীন প্রাণ, ধবংস হয়েছে দেশের অমূল্য সম্পদ।

ভারত ও বিশ্বে সাম্প্রদায়িকতার বিষ

পূণ্যভূমি ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’ নানা মানব গোষ্ঠীর মিলনস্রোত এসে মিলিত হয়েছে। ধর্ম-বিশ্বাস-আচার- আচরণ পরিচ্ছদে ভিন্নতা থাকলেও যে আমাদের আছে একটি জাতি, তা হল ‘মানবজাতি’ এই ধারণার বিকৃতির ফলে ধর্মীয় অন্ধ-বিশ্বাসের দাবানলে বহু মানুষের প্রাণাহুতি ঘটেছে। পৌত্তলিকদের সাথে খ্রিস্টানের, খ্রিস্টানের সাথে ইহুদীর, পৌত্তলিকতার সাথে মুসলমানের সংঘাতে পৃথিবীর মাটি হয়েছে রক্তাক্ত। আর্য- অনার্য, হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব অজ্ঞানতার, অশিক্ষার পুনরাবৃত্তি ইতিহাসে বার বার স্থান পেয়েছে। ‘কপট হিংসা গোপনরাত্রি ছায়ে’- এই বিষ ছাত্রসমাজের মনমন্দিরে ও দাগ কেটেছে।

ধর্মনিরপেক্ষতা ও ভারত

ধর্মনিরপেক্ষতা স্বাধীন ভারতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষতার রাষ্ট্রীয় আদর্শের অগ্নি-পরীক্ষার সাঁড়াশি যন্ত্রের চাপে ভারতের মাটি বার বার কেঁপে উঠেছে। রাজনৈতিক উস্কানি ও প্ররোচনায় ভারতের ভূমি কাশ্মীরের শান্ত পরিবেশ যখন তখন হিংসার রূপ নিচ্ছে। আভ্যন্তরীণ ছদ্মবেশী কায়েমী স্বার্থ ও ভন্ড রাজনৈতিক দলগুলির কার্যকলাপে শান্তিপ্রিয় মানুষ অনেক সময় দিভ্রান্ত হচ্ছে।

প্রতিকার

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “মনের পরিবর্তনে; যুগের পরিবর্তনে, য়ুরোপ সত্যসাধনা ও জ্ঞানের ব্যপ্তির ভিতর দিয়ে যেমন করে মধ্যযুগের ভেতর দিয়ে আধুনিক যুগে এসে পৌঁছেছে, হিন্দুকে মুসলমানকে ও তেমন গন্ডির বাইরে যাত্রা করতে হবে।” ধর্ম মানুষের মিলন-বন্ধনের মাঝে বাধার প্রাচীন তুলেছে বছরের পর বছর। ধর্ম যদি রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হয়, তাহলে জার্মান, ইতালীয়, পর্তুগীজ, ইংরেজ না হয়ে হত খ্রিস্টান।

ধর্ম কখনই রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হতে পারে না। ধর্ম মানুষে মানুষে মিলন ঘটায় ঠিকই, কিন্তু সমস্ত শ্রেণির মানুষকে এক ছাতার তলায় আনতে পারে না, এক এক ধর্মের মানুষ এক এক ছাতার তলায় আশ্রয় নেয়, বিবিধের মাঝে মিলন মহান রচনার পথ কন্টক পূর্ণ হয়। ধর্ম তার নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে এসে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেবে না, জ্ঞানের আলো তখন ধর্মান্ধতাকে দূর করবে।

উপসংহার

শিক্ষার আলো ভারতে সাম্প্রদায়িকতার প্রাচীরকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিচ্ছে যে সেকথা এখন সকলে স্বীকার করবেন। এখন প্রধান সমস্যা অন্ন-বস্ত্র- বাসস্থান-সুশিক্ষা-স্বাস্থ্য। এইসব সমস্যা যতদিন থাকবে কায়েমী স্বার্থ সাম্প্রদায়িতা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে। ধর্মের উন্মাদনায় মন্দির-মসজিদ প্রভৃতি ধবংসের মাধ্যমে হিংসা কোন সমস্যা সমাধানের পথ কখই হতে পারে না। ধর্ম মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে উত্তীর্ণ করবে- এটাই কাম্য, কুসংস্কারের পঙ্কে নিমজ্জিত করা, ভুলপথে পরিচালিত করে হিংসা ছড়ানো ধর্মের কখনই উদ্দেশ্য হতে পারে না।

সাম্প্রদায়িকতার অলীক, অবাস্তব প্ররোচনায় পা না দিয়ে এই উপমাহাদেশের সাধারণ মানুষকে তাদের প্রকৃত সমস্যা সম্বন্ধে করে তুলতে হবে সচেতন। ছাত্র সমাজকে ও এখন থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। মূঢ়তায়, বর্বরতায় প্রগতির ইতিহাসের মুখ যেন আর কালিমা লিপ্ত না হয়। শুধু ছাত্র সমাজ নয়, শিক্ষক, শিক্ষিকা, সর্বশ্রেণীর মানুষকে সচেতন হতে হবে যে প্রত্যেকের পৃথক ধর্ম থাকতে পারে, প্রত্যেক ধর্মের মূল কথা সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করা, সমাজ সৃষ্টি হয়েছে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। সমাজকে সুস্থ রাখাও সকলের কর্তব্য। সাম্প্রদায়িতার বিষানল থেকে মুক্ত হতে না পারলে এই আগুন সকলের জীবনে এনে দেবে দুঃখের-হিংসার অমোঘ বার্তা।

আরও পড়ুন – ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment