সাধারণ ধর্ম ও বিশেষ ধর্মের মধ্যে পাথর্ক্য কী
বেদবিহিত কর্মই ধর্ম। মীমাংসা দর্শনে ধর্মকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে- একটি সাধারণ ধর্ম এবং অন্যটি স্বধর্ম বা বিশেষ ধর্ম। যে কর্ম সব মানুষেরই করণীয়, না করলে পাপ হয় এবং সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, সেই বেদবিহিত কর্মের অনুষ্ঠানই সাধারণ ধর্ম। নিত্য ও নৈমিত্তিক কর্ম সাধারণ ধর্মের অন্তর্গত। যেমন- সন্ধ্যাহ্নিক, উপাসনা ইত্যাদি নিত্যকর্মগুলি সব মানুষকে করতে হয় বলে এগুলি সাধারণ ধর্ম। এই ধর্ম ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষের অবশ্য পালনীয়। সাধারণ ধর্ম কতগুলি সার্বিক নৈতিক নিয়মের কথা বলে যা মানুষকে সামাজিক কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায়। সহজ কথায় মানুষ হিসেবে মানুষের যা কর্তব্য তাই হল সাধারণ ধর্ম। এই সাধারণ ধর্মগুলিকে ঈশ্বর নির্দেশিত ধর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশেষ ধর্ম বা স্বধর্ম বলতে সনাতন আচার বা শাস্ত্রোচিত কর্মকে বোঝায়। বিশেষ ধর্ম বিশেষ বিশেষ কর্তব্যের নির্দেশ দেয়। এই কর্তব্যগুলির উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিস্বার্থ ও বৃহত্তর সামাজিক স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য সাধন করা এবং অসামাজিক কাজ করা থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখা ইত্যাদি।
সামান্য ধর্মগুলি বর্ণাশ্রম ধর্ম পালনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বীকার করা হয়। তাই সাধারণ ধর্ম বিশেষ ধর্মের ভিত্তিস্বরূপ। সাধারণ ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ধর্মগুলি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ ধর্ম বলতে বর্ণাশ্রম ধর্মকেই বোঝায়। সমাজে চারটি বর্ণ আছে- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। বর্ণাশ্রম ভেদে যে বেদবিহিত কর্মের অনুষ্ঠান, তাই বিশেষ ধর্ম। জন্মভিত্তিক বর্ণ চারটি, এগুলি নিত্য বা সর্বকালীন। এই অর্থে এগুলি অপরিবর্তনীয়। প্রত্যেকটি বর্ণের জন্য নির্দিষ্ট কর্মের উল্লেখ আছে। যেমন- ব্রাহ্মণের আশ্রমধর্ম হল- অধ্যয়ন, জ্ঞান-বিতরণ, শাস্ত্র রচনা, যাগযজ্ঞ, পূজার্চনা ইত্যাদি। ক্ষত্রিয়ের স্বধর্ম হল- যুদ্ধবিগ্রহ করা, প্রজাপালন করা ইত্যাদি। বৈশ্যের কর্তব্যকর্ম হল- ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ, পশুপালন ইত্যাদি। এবং শূদ্রের কর্তব্যকর্ম হল- অপর তিন বর্ণের মানুষের সেবা করা। এই কর্তব্যগুলির অনুষ্ঠানই বিশেষ ধর্ম বা বর্ণাশ্রম ধর্ম।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ
পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর