সাক্ষরতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
যেকোন দেশের অগ্রগতি নির্ভর করে সেই দেশের জনগণের শিক্ষার ওপর, শিক্ষার অগ্রগতি ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। মানুষের অন্তরে যে শক্তি সুপ্ত থাকে তাকে জাগ্রত করার সহজ পথ শিক্ষার বিস্তার যা মানুষকে অন্ধকার জগৎ থেকে জ্ঞানালোকে উত্তীর্ণ করে। অন্ধত্বের মতো নিরক্ষরতা আমাদের দেশের নিষ্ঠুরতম এক অভিশাপ। সেই অভিশাপ দূর না হলে মানুষের অন্তর্নিহিত দূর্বার শক্তির জাগরণ সম্ভব নয়। মানুষকে শিক্ষার আলোকে উদ্ভাসিত করতে পারলে সে জানবে নিজেকে, পৃথিবীকে, চোখের সামনের থেকে সরে যাবে সংর্কীনতার পর্দা, সারা বিশ্ব ধরা দেবে জ্ঞান-চোখের দৃষ্টিতে।
নিরক্ষরতা অভিশাপ
অক্ষর-জ্ঞান মানুষকে চিনতে সাহায্য করে অজানা বিশ্বকে।নিরক্ষরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে দীর্ঘ শতাব্দী ধরে এক শ্রেণির মানুষ সমাজকে শোষণে মেতে উঠেছে। এই চক্রান্তের ফলে মানুষকে যুগ যুগ ধরে সমাজের ভোগ-সুখ থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলেছে। মানুষ হয়েছে প্রতারিত, তারা সর্বহারা দলে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শোষণতন্ত্র। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘আমাদের ভদ্রসমাজ আরামে আছে, কেননা আমাদের লোকসাধারণ নিজেকে বোঝে নাই। এজন্যই জমিদার তাহাকে মারিতেছে, মহাজন তাহাদিগকে ধরিতেছে, পুলিশই তাহাদিগকে শুষিতেছে, গুরু-ঠাকুর তাহাদের মাথায় হাত বুলাইতেছে, মোক্তার তাহাদের গাঁট কাটিতেছে, আর তাহারা কেবল সেই অদৃষ্টের নামে নালিশ করিতেছে যাহার নামে সমন-জারি করিবার জো নাই।’ মানুষকে শোষণের মূলে যে নিরক্ষরতা তা আজ সকলে স্বীকার করেন।
ভারতে নিরক্ষরতার কারণ
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে সিরাজ-উদ্-দৌল্লার পরাজয়ের পরে ভারতের শাসনক্ষমতা চলে যায় ব্রিটিশের হাতে। সুশিক্ষিত ব্রিটিশরা জানত যে ভারতবাসী যদি শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয় তাহলে তাদের মধ্যে জাগ্রত হবে আত্মচেতনাবোধ এবং সোচ্চার হবে ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে। তাই মানুষকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহন করে। পরবর্তী সময়ে অফিসের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য কেরানির প্রয়োজনে কিছু মানুষকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। শিক্ষিত মানুষের মনে জেগে উঠল আত্মপ্রত্যয়, দেশাত্মবোধ, শোষণকারী বিদেশীদের প্রতি ঘৃণা। মানুষ যোগ দিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে, দেশ স্বাধীন হল। এখন মানুষ উপলব্ধি করেন, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে নিরক্ষরতা দূরীকরণ খুবই প্রয়োজন।
শিক্ষার প্রসার সুনাগরিক গড়ে তোলার সহায়ক
গনতন্ত্রের সাফল্যের প্রয়োজনে সচেতন নাগরিকতা দরকার, সচেতনতার প্রকাশ শিক্ষা ও সাক্ষরতা ছাড়া সম্ভব নয়। তাই দেশব্যাপী নিরক্ষরতা-দূরীকরণের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে, বিশেষ ভাবে রাষ্ট্রের উদ্যোগে। ইউনাইটেড নেশাস (ইউ এন ও) সারা পৃথিবীর মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে বদ্ধ পরিকর। শুধু গনতন্ত্রের প্রয়োজনে নয়, আদর্শ পরিবার, আদর্শ জাতীয় চরিত্রগঠন, উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রয়োজনেও সাক্ষরতায় নতুন যুগের ভূমিকা সূচিত হচ্ছে।
সাক্ষরতা নতুন যুগের সূচক
সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষ-কৃষক, কুটির- শিল্পী, শ্রমিক এমন কি একজন মুচিকেও জানতে হয় বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারকে, জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তোলার জন্য। সাক্ষরতা ছাড়া এসব জানা সম্ভব নয়। তা না হলে আধুনিক জীবনযাত্রার প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বে। সুতরাং জগৎকে জানতে হলে এবং সমাজের সাথে তাল রেখে নিজের অস্তিত্বকে সঠিক ভাবে বিকশিত করতে হলে নিরক্ষরতা দূরীকরণ বা সাক্ষরতা অভিযান খুবই দরকার।
উপসংহার
এখন সারা দেশব্যাপী সাক্ষরতা অভিযান চলছে। মানুষ এগিয়ে ‘আসছে এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করতে। নবসাক্ষররা বুঝতে পারছে যে তারা নিরক্ষর থাকায় প্রতি পদে পদে স্বার্থপরের জাঁতাকলে পড়ে কিভাবে সামাজিক সুখ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দেশ ও জাতিকে সঠিকভাবে গঠন করতে স্বনির্ভরশীল করতে নিরক্ষরতা নিমূর্লকরতে হলে সরকার, শিক্ষিত মানুষ, বুদ্ধিজীবি ও ছাত্রছাত্রীদের মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে যাতে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর হয়ে সমস্ত মানুষ অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় প্রভাবিত হয়।
আরও পড়ুন – নেলসন ম্যান্ডেলা প্রবন্ধ রচনা