সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা

সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা
সর্বশিক্ষা অভিযান প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

সর্বশিক্ষা অর্থাৎ সবার জন্য শিক্ষা। এই সর্বশিক্ষাকে অভিযানের স্তরে পৌঁছে দিতে চেয়েছে ভারত সরকার। এই উদ্যোগ সাধুবাদের যোগ্য হলেও এ অভিযান জাতির জীবনের এক কলঙ্কময় দিককেও ইঙ্গিত করে। কারণ স্বাধীনতার মুহূর্তেই সকলের জন্য খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান ও শিক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। স্বাধীনতার ৭৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও সকলের জন্য শিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তাই সর্বশিক্ষা অভিযানকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।

কী ও কেন

সকলের জন্য শিক্ষা, তাই হল সর্বশিক্ষা। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষার সমাধান করার নাম সর্বশিক্ষা অভিযান। স্বাস্থ্যের জন্য যেমন পালস পোলিয়োর অভিযান করা হয়, তেমনি সকল শিশুর শিক্ষার জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান। আসলে সর্বশিক্ষা অভিযান সকলের শিক্ষার জন্য সব শ্রেণির মানুষকে এক করে পথ চলার একটা পদ্ধতিমাত্র। সমাজে যারা শিক্ষিত বলে পরিচিত, তাদের অশিক্ষিত মানুষের প্রতি যে দায়বদ্ধতা আছে, তা সুনিশ্চিত করতে এই সর্বশিক্ষা অভিযান।

বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন

২০০৯ খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশে বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক শিশু শিক্ষার অধিকার আইন প্রকাশিত হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী ৬-১৪ বছর বয়সি প্রত্যেক শিশুকে প্রারম্ভিক শিক্ষার অধীনে আসতে হবে। এই শিক্ষা হবে সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক। এই আইন অনুযায়ী-

  • কোনো বিদ্যালয়ে যদি প্রারম্ভিক শিক্ষা সমাপ্ত করার সুযোগ না থাকে তাহলে অন্য যে-কোনো স্কুলে প্রারম্ভিক শিক্ষা শেষ করার জন্য ভরতি হওয়ার অধিকার থাকবে।
  • অন্য স্কুলে এইভাবে ভরতি হওয়ার প্রয়োজনে যে স্কুলে শিশুটি পাঠরত সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অবিলম্বে বিদ্যালয় পরিবর্তনের নির্দেশপত্র (Transfer certificate) প্রদান করবেন। এই আইনের ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্দেশিত বিধি অনুসারে এলাকায় বা সীমানা নির্দিষ্ট পার্শ্ববর্তী স্থানে স্কুল না থাকলে এই আইন কার্যকর হওয়ার তিন বছর সময়ের মধ্যে তা স্থাপন করবেন। (৪) এই আইনের ধারাগুলি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার সম্মিলিতভাবে দায়বদ্ধ থাকবে।

শিশুশিক্ষা কেন্দ্র

সর্বশিক্ষা অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে। এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পঠনপাঠন। যে সকল গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই বা থাকলেও বিদ্যালয়ে যাওয়ার দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুদের পক্ষে যাতায়াত করার অসুবিধা আছে, কিংবা বিদ্যালয়ের যথেষ্ট জায়গার অভাব শিশু শিক্ষার্থী নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেই সকল গ্রামে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করার লক্ষ্যই হল (৫-৯ বছর বয়সের) যে সকল শিশু প্রথাগত শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা। এমনকি, যারা সার্বিক সাক্ষরতা অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তেমন বেশি বয়সের শিশুকেও শিক্ষার মূলস্রোতে শামিল করানো।

শিক্ষার আলোয় আলোকিত দেশ

সূর্যের আলোতে হয়তো অন্ধকার দূর হয়, কিন্তু মনের অন্ধকার দূর হয় কি? তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কীসের আলোয় আলোকিত হতে পারি আমরা? উত্তর খুব সহজ। জ্ঞানের আলোয়, শিক্ষার আলোয়। সূর্যের আলোয় আমরা দেখতে পারি, চলতে পারি-এ যেমন সত্য তেমনই শিক্ষার আলো দিয়ে অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস সবকিছুই দূর হয়। শিক্ষা হল সভ্যতার রূপায়ণ। অর্থাৎ, শিক্ষার মাধ্যমেই সভ্যতা বিকশিত হয়, মনুষ্যত্ববোধ জেগে ওঠে। কিন্তু আজকের সমাজে দেখা যায় মনুষ্যত্ববোধের অভাব। আর এ অভাব পূরণের জন্যই শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা লাভের জন্য প্রধান অস্ত্রই হল বই এবং শিক্ষক, যাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পারি। আমাদের জগতকে প্রকৃত অর্থে আলোকিত করতে হলে দরকার শিক্ষিত জাতি ও শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা। তবেই সত্যিকার অর্থে এ জগৎ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।

শিক্ষিত মানুষের দায়িত্ব

আমাদের দেশে সামাজিক সংকট মোচনে শিক্ষিত সমাজ সবসময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে। শিক্ষিত মানুষেরাই পারে সকলকে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে সাক্ষরতার আলোয় নিয়ে আসতে। তারাই পারে অবসর সময়ে নিরক্ষর এবং সমাজের মধ্যে যারা পিছিয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে সাক্ষরতার আলো জ্বেলে দিতে। সামাজিক দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য হিসেবে তারা নিরক্ষরতা দূর করার জন্য প্রচার অভিযান করতে পারে অথবা ক্যাম্প করে মানুষজনকে উৎসাহী করতে পারে। প্রয়োজনে তারা সংবাদপত্র পাঠ করে শুনিয়ে নিরক্ষরদের মনে প্রেরণা জাগিয়ে তুলতে পারে।

উপসংহার

সর্বশিক্ষা অভিযান বর্তমানে একটি জাতীয় আন্দোলন হয়ে উঠেছে। এখানে বিদ্যালয়ের গৃহ, ছাত্রছাত্রীদের বসার সুবন্দোবস্ত, শিক্ষকের সংখ্যা-সমস্ত দিকগুলিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। এখন শুধু দেখতে হবে এই বিজ্ঞাপনে যেন প্রকৃত উদ্দেশ্যের মুখ ঢেকে না যায়। তাহলে সর্বশিক্ষা অভিযান সফল হতে পারবে না। তাই শিক্ষাকে জোর করে বাধ্যতামূলক করলে চলবে না, তাকে করে তুলতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত এবং আনন্দময়।

আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment