সত্যাগ্রহীদের আচরণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো
সত্যাগ্রহীদের আচরণ পদ্ধতিসমূহ
শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সত্যাগ্রহের ধারণা আবদ্ধ না রেখে সামাজিক পরিসরে এর প্রয়োগ করলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশ হতে পারে বলে গান্ধিজি মত পোষণ করতেন। ক্ষেত্র বিচারে চারটি দিক থেকে তা আলোচনা করা যেতে পারে।
- ব্যক্তিরূপে আচরণ : সত্যাগ্রহী ব্যক্তিকে মূলত ৯টি আচরণবিধি মান্য করে চলতে হয়।
- সত্যাগ্রহীরা কোনোরকম ক্রোধ বা রাগ প্রকাশ করবে না।
- বিরোধীদের ক্রোধের প্রতিক্রিয়া তাঁকে সহ্য করতে হবে।
- আইন অমান্যের সময় বিপক্ষ শক্তির অত্যাচারও তাঁকে সহ্য করতে হবে। তবুও তিনি কখনো শত্রুকে প্রত্যাখান করতে পারবেন না। আবার ক্রোধবশত কেউ কোনো হুমকি দিলে শাস্তির ভয়ে তিনি তার কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
- প্রশাসন কোনো সত্যাগ্রহীকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে তিনি স্বেচ্ছায় ধরা দেবেন এবং তারা তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে চাইলে তিনি তাতেও বাধা দেবেন না।
- অছি (Trustee) হিসেবে আইন অমান্যকারীর যদি কোনো সম্পত্তি থাকে তাহলে তিনি সেই সম্পত্তি কখনোই দেবে না এবং কথাবার্তাও প্রত্যাঘাতের মধ্যে পড়ে। বিদ্বেষমূলক কথা বলা যাবে না। তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনে মৃত্যুবরণ করবেন।
- কটূক্তি বা অভিশাপমূলক অপরকে অপমান করা বা কোনো আন্দোলনকারী যেমন ইউনিয়ন Jack (ব্রিটিশ জাতীয় পতাকা) কে অভিবাদন জানাবে না, তেমনই আবার যে-কোনো রকম অসম্মানজনক কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
- আন্দোলন চলাকালে কেউ ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের অপমান বা আক্রমণ করলে আইন অমান্যকারী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তাকে রক্ষা করবেন।
- বন্দিরূপে আচরণ : বন্দি অবস্থায় আন্দোলনকারীকে যে বিষয়গুলি মেনে চলতে হয় সেগুলি হল-
- জেলের কর্মচারীদের সঙ্গে সুব্যবহার রক্ষা করা,
- আইন অমান্যকারী ও সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। কোনো বিশেষ সুবিধা চাওয়া যাবে না। তবে নিজের দৈহিক ও মানসিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দাবি করতে পারবে।
- যে সব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় না, সেগুলির দাবিতে আইন অমান্যকারীরা অনশন করতে পারবে না।
- দলীয় সদস্যরূপে আচরণ: দলীয় সদস্য হিসেবে গান্ধিজি সত্যাগ্রহী কে ৩টি আচরণ মেনে চলার কথা বলেছেন। এগুলি হল-
- ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগুক বা মন্দ লাগুক, নেতৃত্বের নির্দেশ আন্দোলনকারীকে আনন্দে মেনে নিতে হবে।
- দলীয় নেতার কোনো আদেশ অপমানজনক, বিদ্বেষপূর্ণ বা মূর্খতাপূর্ণ হলেও প্রথমে আন্দোলনকারীকে তা মেনে নিতে হবে, তারপর মনে হলে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে।
- সামগ্রিকভাবে দলের ভূমিকা কোনো আইন অমান্যকারীর কাছে অন্যায় বা অনৈতিক বলে মনে হলে তিনি দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে থাকা অবস্থায় দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করার কোনো অধিকার তার নেই।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকালীন আচরণ : সাম্প্রদায়িক অস্থিরতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে সত্যাগ্রহীদের কিছু আচরণ মেনে চলতে হয়। তা হল,
- কোনো সত্যাগ্রহী জেনে-শুনে কোনো সাম্প্রদায়িক বিরুদ্ধতার কারণ হবে না।
- এরূপ বিরোধ তৈরি হলে আন্দোলনকারী কোনো পক্ষকে সমর্থন করবে না। যে পক্ষ ন্যায়ের পথ গ্রহণ করেছেন, কেবল তাদেরই সাহায্য করবেন। নিজে হিন্দু বা মুসলিম হলেও ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়ে নৈতিকতাসম্পন্ন সঠিক ব্যক্তির জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করতেও প্রস্তুত থাকবেন।
- সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণ তৈরি হতে পারে, এরূপ পরিস্থিতিকে আইন অমান্যকারীরা এড়িয়ে যাবেন।
- সত্যাগ্রহীদের খেয়াল রাখতে হবে যে, তাদের মিছিলের ফলে যেন কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না লাগে।
আরও পড়ুন – সরকারের বিভিন্ন রূপ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর