সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা 400+ শব্দে

সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা

সত্যজিৎ রায় প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

বাংলার মাটি রত্নগর্ভা। এখানে জন্মেছেন বিশ্বজয়ী কত মহান ব্যক্তি, যাঁর আলোকে আমরা আলোকিত, গর্বিত, ভারতমাতার মাথায় পরিয়েছেন বিশ্বজয়ীর মুকুট। তাঁরা ক্ষণজন্মা। তাঁরা জন্মগ্রহণ করেন অসীম ক্ষমতা, বিচিত্র প্রতিভা নিয়ে। তাঁদের সৃষ্টি সমৃদ্ধ করেছে সাহিত্য-সংস্কৃতি, জীবনের সমস্ত দিককে। সত্যজিৎ রায় হলেন এরূপ এক অনন্য স্রষ্টা।

জন্ম ও শিক্ষা

সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও সুপ্রভা রায়ের একমাত্র পুত্র-সাত রাজার ধন এক মাণিক সত্যজিৎ রায়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২মে উত্তর কলকাতায় গড়পার রোডে। তিনি চৌদ্দ বছর বয়সে ম্যাট্রিক ও আঠারো বছর বয়সে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন। সত্যজিৎ রায় প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসুর সান্নিধ্যে এলে তাঁর মধ্যের সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশের যেন দ্বার খুলে যায়। তিনি প্রেসিডেন্সিতে বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিষ্টি ও ইকনোমিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর প্রধান পরিচয় ‘বিশ্ববরেণ্য চলচিত্র স্রষ্টা’ হিসাবে।

কিশোর সাহিত্যে অবদান

বাংলা কিশোর সাহিত্যের স্বর্ণোজ্জ্বল সম্ভার তুলে দিয়েছেন পাঠকের হাতে সত্যজিৎ রায়। তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি আন্তজার্তিক পটভূমিকায় সৃষ্ঠ দেশজ চরিত্র প্রফেসর শঙ্কুর কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনি-গোয়েন্দা কাহিনি, ছোটো গল্প স্বতন্ত্রতার দাবি রাখে। তাঁর লেখা বিষয় বৈচিত্র ও কাব্যিক দক্ষতার আকর্ষণে পাঠকের মনকে সহজেই করেছে জয়। তাঁর লেখনিতে ছাপ পড়েছে সব বয়সের মানুষের কথা, শিশু-কিশোর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকল মনের অবাধ বিচরণ ভূমি। তাঁর লেখায় রয়েছে বুদ্ধির উৎকর্ষতা, রসবোধের বিজ্ঞানসন্মত বিশ্লেষণ, অসাধারণ ভাষার মাধুর্য।

সঙ্গীতে অবদান

সত্যজিৎ রায় যেমন সাহিত্যে তেমনি সঙ্গীতে ছিলেন পারদর্শী। সাহিত্যকে তিনি অনুদিত করেছেন, চিত্র-ভাষায়, শিল্পে সুষমভাবে, গভীর মানসিকতার মেলবন্ধন ঘটল, ঘটল সাহিত্যিকের ভাবনায় শিল্পীর শিল্পের সমাহার। তিনি ছিলেন সব্যসাচী, সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পের নতুন যুগের স্রষ্টা।

চলচ্চিত্রে অবদান

সত্যজিৎ রায় যুগপ্রবর্তক ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের। তিনি আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে প্রচলিত ধারার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটিয়ে সৌকর্যে ও বৈশিষ্টে এক সুদূরপ্রসারী দিগন্তের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। প্রযুক্তি ও কারিগরি কলাকৌশলের ক্ষেত্রে নতুন-পথের দিশারী। অভিনব কাহিনি ও অসাধারণ প্রভিতার স্পর্শে শিল্প সৃষ্টি হয়েছে, সাজসজ্জা আলো, শব্দ, রূপ-রঙ সৌকর্যে ভরপুর। তিনি সাঁইত্রিশ বছরের সৃজনশীল জীবনে চলচ্চিত্র দুনিয়াকে করেছেন উজ্জ্বল, প্রতিভার দীপ্তিতে আলোকময়। তিনি পেয়েছেন খ্যাতি ও সাফল্যের সর্বোচ্চ সন্মান। তিনি রবীন্দ্র-চিন্তার সার্থক উত্তর-সাধক-ধ্রুপদী চিন্তায়, কর্মে, নৈতিক আদর্শে। দেশের ইতিহাসের প্রতি তাঁর ছিল অসাধারর আনুগত্য। ‘পথের পাঁচালি’-ই বুঝিয়ে দিয়েছে সিনেমা শুধু বিনোদন নয় তার মধ্যে আছে দেশের শিল্প-সৌকর্যের অপূর্ব সংযোজন যা চিত্রনাট্যের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র শুধু শিল্পের জন্য নয়, তা হল ‘মানুষের প্রতি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল হৃদয় ও বিস্তৃত ভালোবাসা’।

সর্ব্বোচ্চ স্বীকৃতি

১৪ই ডিসেম্বর ১৯৯১, কলকাতার বিশপ লেফ্রয় রোডে এক তারবার্তা এল, যার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতের সর্ব্বোচ্চ সন্নান প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করা হয়। তাঁকে সন্মানিত করা হল ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে বিশ্বের চলচ্চিত্র জগতের সর্ব্বোচ্চ পুরস্কার ‘অস্কার’ দিয়ে। এর আগে যাঁরা এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তাঁরা হলেন গ্রেটা গার্বো, কেরি গ্রান্ট, চার্লি চ্যাপলিন, জোস স্টুয়ার্ট, আকিরা কুরোসোয়া, শিল্পী এবং তাঁর শিল্পের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হল ভারতরত্ন ও ভারতীয় গবেষকের পদ।

উপসংহার

তাঁর অসামান্য সাফ্যলের মূলে ছিল শিল্পীর জন্মগত প্রতিভা, পারিবারিক ঐতিহ্য ও আজীবন সাধনার সংমিশ্রণ। তিনি হলেন সাহিত্যিক, শিল্প সাধক, চিত্র পরিচালক। মহান ব্যক্তিত্ব, দেশগৌরব ভারতরত্ন বিজয়ী সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণ ঘটে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে এপ্রিল। তিনি অমর হয়ে আছেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে।

আরও পড়ুন – রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment