সকাম কর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
সকাম কর্মের বৈশিষ্ট্য
কর্মের কর্তা যখন কর্মফল লাভের আকাঙ্ক্ষায় কোনো কর্ম সম্পাদন করেন তখন সেই কর্মকে বলে সকাম কর্ম। সকাম কর্মের যে বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে সকাম কর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায় সেগুলি হল-
ফলাকাঙ্ক্ষাযুক্ত কর্ম
সকাম কর্মের ক্ষেত্রে কর্মের তুলনায় ফললাভ বেশি প্রধান্য পায়। কর্মের ফললাভ করার আশায় সম্পাদিত কর্মই হল ফলাকাঙ্ক্ষাযুক্ত সকাম কর্ম।
কর্মসম্পাদান ঈশ্বরের ভূমিকা অস্বীকার
সকাম কর্মের ক্ষেত্রে কর্মসম্পাদন ও ফললাভের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কোনো ভূমিকা নেই। কর্মের কর্তা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় কেবলমাত্র কর্মের ফললাভের আশায় এইরূপ কর্ম সম্পাদন করে থাকেন।
ফলদায়ী কর্ম
সকাম কর্মের ক্ষেত্রে সৎ কর্মজনিত শুভ ও অসৎ কর্মজনিত অশুভ ফল উৎপন্ন হয়। কর্মের ফল কর্মকর্তাকে অবশ্যই ভোগ করতে হয়, যার অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ পুনর্জন্ম এবং তার ফলস্বরূপ দুঃখভোগ করতে হয়।
পুনর্জন্মগ্রহণ
সকাম কর্মের সঙ্গে কর্মফলভোগ ও পুনর্জন্ম সম্পর্কিত। সাংসারিক জীব সকাম কর্মের অধীন বলে তাকে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়। সকাম কর্ম বিষয়ের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে। এই আসক্তি কামনার জন্ম দেয়। কামনা পূর্ণ না হলে মানুষের ক্রোধ, মোহ ও বুদ্ধিনাশ হয়। বুদ্ধিনাশের পরিণামে মানুষ দুঃখ ভোগ করে এবং জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে ঘুরপাক খায়। সকাম কর্মের ফলভোগ করতে আত্মাকে বারবার দেহধারণ করতে হয় এবং সংসারে আবদ্ধ হয়ে সে দুঃখ ভোগ করে।
কর্তৃত্বাভিমানযুক্ত কর্ম
কর্মকর্তা নিজের কামনা-বাসনা সিদ্ধির উদ্দেশ্যে নিজেই কাজটি করছেন-এইরূপ বোধই হল কর্তৃত্বাভিমান। আর এই কর্তৃত্বাভিমানযুক্ত কর্মই হল সকাম কর্ম।
মুক্তির প্রতিবন্ধক বা বাধাস্বরূপ
সকাম কর্ম মুক্তিলাভের পথে বাধাস্বরূপ। কেন-না এই কর্ম থেকে উৎপন্ন ফলভোগ করার জন্য কর্মের কর্তাকে বারংবার জন্মগ্রহণ করতে হয়। ফলে জন্ম-মৃত্যুর আবহ থেকে ব্যক্তি নিস্তার পেতে পারে না।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ