শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পটভূমি সম্পর্কে লেখো। চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ কী ছিল

শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পটভূমি সম্পর্কে লেখো। চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ কী ছিল

শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পটভূমি সম্পর্কে লেখো। চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ কী ছিল
শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পটভূমি সম্পর্কে লেখো। চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ কী ছিল

পূর্ব ভারতে বৈয়ব ধর্মাচার্যগণের মধ্যে শ্রীচৈতন্য ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। বঙ্গদেশ এবং উড়িষ্যা মূলত তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার দ্বারাই বৈষুব ধর্ম আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের পটভূমি

পূর্ব ভারতে চৈতন্যদেবের আন্দোলন তথা বৈষুব মতবাদের প্রসারের পশ্চাৎপটে সমকালীন বাংলার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। যথা-

(1) তৎকালে সেনবংশীয় রাজারা বাংলায় পৌরাণিক হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠায় জোর দিলে সামাজিক বৈষম্য তীব্রতর হয়।

(2) ব্রাহ্মণদের কর্তৃত্ব সর্বময় হয়ে ওঠে এবং অব্রাহ্মণ ও শূদ্রদের দুরবস্থা বৃদ্ধি পায়।

(3) ধর্মের নামে স্মৃতিশাস্ত্রকারদের কঠোর বিধান অব্রাহ্মণদের সামাজিক স্বাধীনতা ও মর্যাদারক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(4) পাশাপাশি উচ্চবর্ণের মধ্যে তান্ত্রিক ধর্মাচারের জনপ্রিয়তা সামাজিক অবনমনকে দ্রুতগামী করে তোলে।

(1) শ্রীচেতন্যের আবির্ভাব : এমত পরিস্থিতিতে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে অধঃপতন ও নৈতিক দুর্গতি থেকে উদ্ধার এবং ভক্তি ধর্মের নির্মল বারিধারায় সিক্ত করতে শ্রীচৈতন্যদেব ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ

চৈতন্যদেবের জন্মের কিছু বছর আগেই মাধবেন্দ্রপুরী, অদ্বৈতাচার্যের নেতৃত্বে ভাগবতের কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বৈষুব ধর্মের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়েছিল। শ্রীচৈতন্য সেই ধারাকেই বৈষুব ভাবাবেগের সমুদ্রে পরিণত করেন। শ্রীচৈতন্যদেব তাঁর শিষ্যদের উপদেশ দিতেন- “তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিয়ণা অমানিনা মানদেন কীর্তনীয় সদা হরি।” (অর্থাৎ, তৃণের মতো নম্র, তরুর মতো সহনশীল ও নিরহংকারী হয়ে সর্বদা ভগবান হরির গুণকীর্তন করবে।)  তাঁর দর্শন অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব নামে পরিচিত। চৈতন্যদেবের মূলবাণী বা আদর্শ হল-

(1) চৈতন্যদেব বৈয়ব ধর্মের মূলমন্ত্র প্রেম, বৈরাগ্য ও জীবের প্রতি দয়ার কথা প্রচার করেন।

(2) তিনি ঘোষণা করেন যে, জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। একান্ত চিত্তে ভক্তিভাব জাগরণের মাধ্যমে এই আধ্যাত্মিক গুণের বিকাশ সম্ভব।

(3) শ্রীচৈতন্য নামসংকীর্তনের উপর জোর দেন। তাঁর মতে, নামসংকীর্তনের দ্বারা মানুষ পার্থিব জগতের চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ঈশ্বরের সান্নিধ্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।

(4) চৈতন্যদেব মানুষের ঘরে ঘরে নামকীর্তন এবং বিশাল শোভাযাত্রা করে নগর সংকীর্তনের কথা বলেন।

(5) তিনি নিজে ব্রাহ্মণ হয়েও জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের আহ্বান করলে নিম্নবর্ণের বহু মানুষ, এমনকি বহু মুসলমানও তাঁর অনুগামী হন। হরিদাস নামে এক যবন চৈতন্যদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

(6) শ্রীচৈতন্য প্রচলিত কোনও লোকধর্মের বিরোধিতা করেননি। তিনি সহজ-সরল বাংলা ভাষাতেই তাঁর ভক্তিবাদ প্রচার করেন। এ ছাড়া তিনি বৈষুবীয় নাটকও মঞ্চস্থ করেছিলেন বলে জানা যায়।

মূল্যায়ন

মধ্যযুগে ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে শ্রীচৈতন্যের কর্মধারা ও আদর্শসমূহের গুরুত্ব অপরিসীম। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, “শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং একজন অবতার। ভারতে ভক্তি আন্দোলনের নবজাগরণ তিনিই ঘটিয়েছিলেন।” স্বামী বিবেকানন্দও তাঁকে একজন ‘মহান ধর্মগুরু’ আখ্যায় অভিহিত করেছেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment