শিশুরাই সমাজের ভবিষ্যৎ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- ভূমিকা
- শিশুরাই সমাজের ভবিষ্যৎ
- বিশ্ব শিশুদিবস
- শিশুশ্রমিক এবং ভারতে শিশুশ্রমিক সৃষ্টির কারণ
- শিশুশ্রমিক সমস্যার সমাধানের পথ
- উপসংহার
ভূমিকা
শিশুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে জাতির ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। তাই শিশুসমাজের গড়ে ওঠার ওপরেই নির্ভর করে দেশ বা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। সেকারণেই মানবসমাজের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব হল শিশুদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও সার্বিক সুস্থ পরিবেশ রচনা করা। ভালোবাসার আশার ভবিষ্যতের কুশীলবদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেওয়াই রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম প্রধান কর্তব্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় শিশুর পক্ষে আজও বাসযোগ্য নয় এই পৃথিবী।
শিশুরাই সমাজের ভবিষ্যৎ
‘Child is the father of man’ ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’-একথা দিনের আলোর মতো সত্যি যে শিশুরাই দেশের একমাত্র ভবিষ্যৎ। আজকের শিশুর মধ্যেই আগামী দিনের বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ আরও কত-না ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় লক্ষ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যৎ। এ দুর্ভাগা দেশে অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজের বুকেই হারিয়ে যায় বিপুল সম্ভাবনা। শিশুশ্রমের নামে মানবসম্পদের এক চরম অপচয় দেশ ও জাতিকে করে দুর্বল। সমাজের ভবিষ্যৎ তথা দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে।
বিশ্ব শিশুদিবস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক শিশুদিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাষ্ট্রসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তরফে পরবর্তীকালে অনেক কথা বলা হয়েছে কিন্তু শিশুদের অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি ঘটেনি। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে জেনেভাতে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের শ্রমমন্ত্রীদের যে সম্মেলন হয়েছিল সেখানে শিশুশ্রমের অবসানকল্পের জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন কলকারখানায় বা অন্য কোনও কর্মক্ষেত্রে শিশুশ্রমিক নিয়োগ বে-আইনি বলে ঘোষিত হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে যে, ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের অর্থের বিনিময়ে শ্রমে লাগানো যাবে না। প্রতি বছর ১৭ নভেম্বর সাড়ম্বরে বিশ্ব শিশুদিবস উদ্যাপিত হয়। সাম্প্রতিককালে ভারতবর্ষে ২০ লক্ষ শিশুর জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শিশুশ্রমিক এবং ভারতে শিশুশ্রমিক সৃষ্টির কারণ
শিশুশ্রমিক সমস্যা দীর্ঘকালের সমস্যা। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই এই সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। ভারতে শিশুশ্রমিক সৃষ্টির সবচেয়ে বড়ো কারণ হল সীমাহীন দারিদ্র্য। এখনও ভারতে বিরাট অংশের মানুষ অশিক্ষিত আর দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। চরমতম আর্থিক দূরবস্থার কারণে অনেক পরিবারের শিশুরাই অন্নসংস্থানের জন্য শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে। দরিদ্র অসহায় পিতামাতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানকে শ্রমিকে পরিণত করে। সেকারণেই অতি অল্প অর্থে তারা নিযুক্ত হল হোটেল-রেস্তোরাঁয়, কলকারখানায়, চায়ের দোকানে।
অর্থবান এক শ্রেণির মানুষের সীমাহীন অর্থলোভের জন্য শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে চলে। অশিক্ষা আর দারিদ্র্যই শিশুদের টেনে আনে মায়ের উয় কোল থেকে কঠিনতম কর্মের জগতে।
শিশুশ্রমিক সমস্যার সমাধানের পথ
শিশুশ্রমিক সমস্যার প্রকৃত সমাধান করতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ নিমজ্জিত হবে গভীরতম অন্ধকারে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তাই কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
ক। আমাদের দেশে শিশুশ্রমিক নিয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এই আইন তখনই কার্যকরী হবে যখন সামাজিক চেতনা পুরোপুরি জাগরিত হবে।
খ। শিশুশ্রমিক প্রথার অবসানের জন্য সমাজকল্যাণ পর্ষদ ও সমাজকল্যাণ বিভাগকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
গ। সমাজের সব ধরনের শিশুদের জন্যই প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিক বিভাগে বিভিন্নধরনের খেলাধুলার সরঞ্জাম কিনে দিতে হবে ও তাদের আহারাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প (I.C.D.S.)। এই প্রকল্পের অধীনে সমস্ত শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬। বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে শিশুদের স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের উন্নয়নের জন্য।
চ। পথশিশুদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্য, পোশাক ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
ছ। পরিশেষে বলা যায়, অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলোর পাশে সরকার যদি সঠিকভাবে সহায়তা করে তবেই শিশুশ্রমের অবসান ঘটবে। কেন-না দরিদ্র অশিক্ষিত অভিভাবকরাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে কায়িক শ্রমে বাধ্য করেন।
উপসংহার
শিশুরা সমাজের ভবিষ্যৎ হলেও আজও তৃতীয় বিশ্বের এক গভীরতর সমস্যা শিশুশ্রমিক সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানে সরকার যেমন দায়িত্বশীল তেমনি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে এর সমাধানকল্পে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের শুভচেতনার জাগরণে শিশুশ্রমিক সমস্যার ইতিবাচক সমাধান সম্ভব হতে পারে। তাই কেবলমাত্র সভা-সমিতি করে, নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিশুদিবস পালন করলেই হবে না। গভীর মানবিক আবেদন নিয়ে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যার অবসানকল্পে, এ পৃথিবী তীর্থভূমিতে পরিণত হবে শিশুর উজ্জ্বল মুখ আর ফুসফুস-ভরা হাসিতে।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৫। ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৭। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৮। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৯। মোবাইল ফোনের সুফল-কুফল – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২০। আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২১। বাংলার উৎসব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২২। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৩। প্লাস্টিক দূষণ-একটি ভয়াবহ সমস্যা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৪। গাছ আমাদের বন্ধু – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২৫। শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা