শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা

শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা
শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা

শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজের সাথে যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা পরাজিত হলেন। ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্ত গেল। ভারতের ভাগ্যাকাশে ঘনিয়ে এল গভীর তমিস্রা। শুরু হল ইংরেজ শাসন। ইংরেজের অত্যাচার ও শোষণ মানুষকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। শুরু হল স্বাধীনতার আন্দোলন। তরুণেরাও এগিয়ে এলেন দেশমায়ের মুক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে। ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন তরুণ বিপ্লবী।

জন্ম

মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনি গ্রামে ক্ষুদিরামের জন্ম ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বরে। কথিত আছে যে ক্ষুদিরামের মা বিষ্ণুপ্রিয়া হত্যা দিয়ে পড়েন হবিবপুরের জাগ্রত কালীমন্দিরে। তিনি দেবীর দেখা পান এবং আশীর্বাদ করেন। ক্ষুদিরামের জন্ম মুহূর্তে তাঁর বড়দিদি অপরূপা তিন মুঠো ক্ষুদের বিনিময়ে মায়ের কাছ থেকে মৃত্যুঞ্জয়ী ভাইটিকে কিনে নেন। ক্ষুদের বিনিময়ে কিনে নেন বলে তাঁর নাম রাখেন ক্ষুদিরাম। ক্ষুদিরামের পিতার নাম ত্রৈলক্যনাথ বসু।

শৈশব

ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র ছ’বছর তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। তাঁকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেন তাঁর দিদি অপরূপা। ক্ষুদিরামকে ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তমলুক হ্যামিলটন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি বা সেভেন্থ স্ট্যান্ডার্ডে ভর্তি করা হয়। তখন থেকে তাঁর মধ্যে গভীর দেশাত্মবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভর্তি হন মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুলে চতুর্থ স্ট্যান্ডার্ড বা সপ্তম শ্রেণিতে এবং এই স্কুলের শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সাহচর্যে আসেন। ক্ষুদিরাম গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালো বাসতেন। এছাড়া গীতা, সখারাম দেয়স্করের লেখা ‘দেশের কথা’ ছিল তাঁর প্রিয় বই।

দেশপ্রেম

জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু ও তাঁর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ বসু মেদিনীপুরের কর্ণেল গোলায় ‘আনন্দমঠ’ নামে গুপ্ত সমিতি স্থাপন করেন। এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মাধ্যমে দেশমায়ের পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচন করা। ক্ষুদিরাম এই বিপ্লবীদের আদর্শে দীক্ষিত হন। তিনি স্বপ্ন দেখছেন দেশ স্বাধীন হবে, বিদেশীর শাসন ও অত্যাচার বন্ধ হবে। বিপ্লবের পথ খুবই কঠিন, যেকনো মুহূর্তে বিপদ হতে পারে; এমন কি মৃত্যুও। ক্ষুদিরাম মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে নিজেকে নিয়োজিত করলেন বিপ্লবের কাজে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে

যোগদান

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জন বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার আদেশ জারি করেন। শুরু হল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। ক্ষুদিরাম ছাত্রদের সাথে নিয়ে নুন, চিনি, বিদেশী বস্ত্র প্রভৃতি বয়কট করার জন্য পিকেটিং-এ যোগ দেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরে কৃষি-শিল্প প্রদর্শনীতে বন্দেমাতরম নামে পামপ্লেট বিলি করার সময় পুলিশ তাঁকে ধরতে এলে তিনি পুলিশকে ঘুষি মেরে পালিয়ে গেলেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় ধরা দেন। তাঁর হয়ে কোর্টে লড়েন ব্যারিস্টার বীরেন্দ্রনাথ শাসমল আরও অনেকে। অবশেষে তাঁকে বিচারক ছেড়ে দেন। ক্ষুদিরাম খদ্দরের জামা ও ধূতি পরতেন। কারণ বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পোশাক ছিল চরকায় তৈরি সূতোয় প্রস্তুত খদ্দরের জামা-কাপড়।

বোমার আঘাত ও ক্ষুদিরাম ধৃত

ক্ষুদিরামের বাড়ির পাশে থাকতেন কুসুম কুমারী নামে এক দরিদ্র মহিলা। তিনি ক্ষুদিরামকে খুব ভালোবাসতেন এবং বিপ্লবের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নানাভাবে ক্ষুদিরামকে উৎসাহ দিতেন। কুসুমকুমারী নিজেও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। মেদিনীপুরের বিপ্লবী সমিতিকে না জানিয়ে কলকাতার বিপ্লবীদের আড্ডায় ক্ষুদিরামকে ডেকে পাঠান হয়। তাঁকে বিপ্লবীরা পাঠিয়ে দেন মজঃফরপুরে অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য। সাথে ছিলেন আর এক তরুণ তাঁর নাম প্রফুল্ল চাকী। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল। রাত আটটা। তাঁরা ভুল করে কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে মিসেস ক্যানেডির গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন। প্রফুল্ল চাকী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মুহূর্তের মধ্যে কোমরে রাখা রিভলবার বের করে নিজের রিভলভারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

বিপ্লবীর ফাঁসি

ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়লে মজঃফরপুর আদালতে তাঁর বিচার হয়। তিনি যে বিপ্লবী তা বিচারক উডম্যানের সামনে নির্ভয়ে ও স্বেচ্ছায় স্বীকার করেন। বিচারক স্তম্ভিত হলেন ক্ষুদিরামের নির্ভীকতা দেখে। বিচারে তাঁর ফাঁসির অর্ডার হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট ভোর ছটায় মজঃফরপুর জেলে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়।

বিপ্লবের অগ্নিশিখা

তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ স্বাধীনতা বিপ্লবীদের মনে বিপ্লবের আগুনকে তীব্রতর করে। ভারতবাসী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ক্ষুদিরামের মৃত্যুতে মানুষের মন গভীর বেদনায় ভরে গেল। চারণ কবিদের কণ্ঠে ধ্বনিত হল গান,

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি

হাসি হাসি পরব ফাঁসি

দেখবে ভারতবাসী।

উপসংহার

দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগ বিফলে যায় না। একজন বিপ্লবীর রক্তে জন্ম নেয় অজস্র বিপ্লবী-এই প্রচলিত উক্তি বাস্তবে প্রতিফলিত হল। মুক্তির সোপান তলে বলিদান করা হয় আরও অনেককে। বীরের রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা ব্যর্থ হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমরা ভুলতে পারি না ক্ষুদিরামের মতো দেশপ্রেমিকদের ত্যাগ ও মহান আদর্শের কথা। তাইতো তাঁদের আদর্শে নিজেদেরও উজ্জিবীত করি।

আরও পড়ুন – মহাত্মা গান্ধী প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment