লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Second Semester
লালন শাহ ফকিরের গান ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
১। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’-কার লেখা কোন্ মূল গ্রন্থের অন্তর্গত গানটি?
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গানটির রচয়িতা মহাসাধক সত্যসন্ধানী মরমি কবি লালন শাহ্।
লালনের গানগুলি মূলত সংখ্যাদ্বারা চিহ্নিত। তাঁর বিক্ষিপ্ত গানগুলিকে একত্রিত করে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড. আবুল আহসান চৌধুরী ‘লালন-সমগ্র’ নামে একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ গানটি ‘লালন-সমগ্র’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ড. মতিলাল দাশ ও পীযূষকান্তি মহাপাত্র সম্পাদিত ‘লালন-গীতিকা’ গ্রন্থে ৩৯১ সংখ্যক গান হিসেবে এটি গৃহীত হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ উক্ত গানটিকে ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ নামে পাঠ্য কবিতা হিসেবে সংকলিত করেছেন।
২। লালন ফকিদের পরিচয়সহ তাঁর জন্মস্থান ও জন্মকাল লেখো।
বাউল সম্রাট মহাসাধক সত্যসন্ধানী পরমপুরুষ লালন শাহ্ ছিলেন মানবপ্রেমের মূর্ত প্রতীক।
তাঁর জন্মস্থান ও জন্মকাল নিয়ে বহু মতান্তর আছে। তবে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর।
৩। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- ‘সোনার মানুষ’ কীভাবে হওয়া যায়?
পরম সাধক বাউল তাত্ত্বিক লালন শাহ্ ফকির মনে করতেন, যিনিই পরমাত্মা তিনিই ঈশ্বর। মানবের মাঝেই ঈশ্বর বিরাজমান। মানুষই হলেন ভক্তি ও পরম গুরুজ্ঞানের আধার। মানুষ ভজার মধ্য দিয়ে সিদ্ধিলাভ ও পরমাত্মার সঙ্গে মিলন হয়। জগতে মানুষকে ভজলে, মানুষকে নমস্য জানালে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য হয়ে ‘সোনার মানুষ’ হওয়া যায়।
৪। ‘মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।’- ‘মানুষ ছেড়ে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
বাউল তত্ত্ব দর্শনে মানুষই মুখ্য। আবার মানুষের মধ্যেই পরম ঈশ্বরের অবস্থান। আমাদের পাঠ্যাংশ ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় মানবতাবাদী দার্শনিক কবি লালন ফকির তাই মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন। মানুষকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুধাবন করা সম্ভব। মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটিয়ে স্রষ্টার প্রতি অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই বিরাজমান। তাই মানুষকে ছাড়লে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়।
৫। ‘মানুষ-গুরু কৃপা হ’লে/জানতে পাবি।।’-সরলার্থ করো।
উত্তর: লালন বলেন মানবদেহের ভিতর ‘অচিনপাখি’ তথা মনের মানুষের বাস। গুরু কৃপায় তাঁকে পাওয়া যায় কিন্তু তাঁকে লাভ করা এত সহজ নয়। জ্ঞানসাধনা, যোগসাধনা ও বামাচারের কষ্টসাধ্য কাঁটা বিছানো পথ অতিক্রম করে তবেই পদ্মাসনে আসীন সেই মানুষরতনকে পাওয়া যাবে। কিন্তু তারজন্য দরকার মনের মানুষের সায়। ‘মানুষ-গুরু’ কৃপা করলে সেই দুর্লভ ধনকে পাওয়া যায়।
৬। বাউল মতে নিজেকে চেনার উপায় কী?
বাউল তত্ত্ব ও বাউল সাধনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল মানবদেহ। বাউল সাধকেরা মনে করেন, গুরুবাদী দর্শনের দ্বারা মানবদেহকে বশে আনতে পারলে, খন্ড থেকে অখন্ডের পথে যাত্রা করলে, রূপসাধনে সাঁতার দিতে পারলে, নিরিখ বেঁধে সাধন করতে পারলে তবেই একান্তে নিজেকে চেনা যায়। লালনের সাধন-ভজনের মূল মন্ত্রই ছিল নিজেকে চেনো বা জানো অর্থাৎ ‘আত্মংবিদ্ধিং’।
৭। লালনের দর্শন বর্তমানে কতটা প্রাসঙ্গিক?
লালনের পুণ্যবাণী ছিল, সত্য পথে চলো, সত্য কথা বলো, মানুষকে ভালোবাসো। মানুষকে ভজলেই ‘সোনার মানুষ’ হওয়া সম্ভব। সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নানা অন্যায়, অত্যাচার, ব্যাভিচার, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি বন্ধ করতে হলে লালনের দেখানো পথই আমাদের একমাত্র অবলম্বন হওয়া উচিত। লালন-দর্শন মানুষকে সুপথে চলার পরামর্শ দেয়। লালনের দেখানো পথই প্রকৃত আলোর পথ। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে শান্তির পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
৮। লালন কোন্ মানুষকে ‘সোনার মানুষ’ বলেছেন?
সোনা উজ্জ্বল ও মূল্যবান ধাতু-বিশেষ। শরীরে ধারণ করলে ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। দুই পাপড়ির পদ্মে সোনার মতো আলোকিত করে থাকা মানুষকেই। লালন ‘সোনার মানুষ’ বলেছেন। লালন বলেন, এই ‘সোনার মানুষ’-কে লাভ করা অত্যন্ত কঠিন, তবুও মানুষ ভজন করার মতো দুঃসাধ্য ও জটিল কাজটি যাঁরা করে থাকেন ও মনের মানুষের সন্ধান পান, লালনের কাছে। তাঁরাই ‘সোনার মানুষ’।
৯। লালনের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কী জান?
লালন আত্মদর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। লালন-দর্শনে মূলত মানুষ ও মানবতাবাদ মুখ্য। লালন অধার্মিক ছিলেন না। ধর্মকে তিনি সম্মান করতেন। কিন্তু ধর্মের গোঁড়ামি মানতেন না। কোনো বিশেষ ধর্মের রীতিনীতি পালনে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। সব ধর্মের বন্ধন ছিন্ন করে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন জীবনে। তিনি মনে করতেন মানুষের মাঝেই ঈশ্বরের অবস্থান। তাই মানুষকে ভালোবাসার কথা বারবার বলেছেন তাঁর গানে।
১০। লালন তাঁর গানে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে লালন মানবতার বার্তা • দিয়েছেন তাঁর গানে। তিনি মনে করতেন, মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মানবতাই • মানুষের মুক্তির পথ, মানুষের মানুষ হওয়ার সাধনার চাবিকাঠি। লালনের আত্মদর্শন হল দেহ-মন, আত্মা-পরমাত্মা, রূপ, আকার, সাকার প্রভৃতি। তাই স্রষ্টাকে লাভ করতে গেলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে।
১১। জীবনদর্শন সম্পর্কে বাউলের মত কী?
বাউল সাধকের মূল প্রতিপাদ্য মানবদেহ। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাঁদের মতে, আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পাওয়া যায়। আত্মার বাস যেহেতু মানবদেহে, তাই দেহকে তাঁরা পবিত্র জ্ঞান করেন। দেহের মাঝেই তাঁরা খোঁজেন ‘অচিনপাখি’-র ঠিকানা। সাধারণত স্বল্প শিক্ষিত হলেও বাউলরা জীবনদর্শন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও তত্ত্বকথা বলেছেন তাঁদের গানে। তাঁদের দর্শন ও মতামত বাউল গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
লালন শাহ ফকিরের গান ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
১। বাউল কারা এবং বাউল সংগীতের পথিকৃৎ-ই বা কে?
বাউল হল বিশেষ একটি লোকাচার ও ধর্মমত। প্রচলিত ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও সংস্কার থেকে মুক্ত সম্প্রদায়বিশেষকে বাউল নামে চিহ্নিত করা হয়। বাউল সংগীত মূলত মানুষের জীবনদর্শনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন এবং একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাঁদের অভ্যাস। উদার ও অসাম্প্রদায়িক এই ধর্মসাধকেরা মানবতার বাণী প্রচার করেন।
লালন শাহ্ ছিলেন বাংলার বাউল সংগীতের অগ্রদূত। বাউল সংগীত সতেরো শতকে জন্ম নিলেও লালনের গানের জন্য ঊনিশ শতকে বাউল গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
২। লালন তাঁর গানে কাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং কেন?
লালন তাঁর চিন্তা-চেতনায়, ভাবে-ভাবনায় ও বিশ্বাসে মূলত মানুষকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, মানুষের জয়গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন মনবতার পূজারি। লালন-দর্শনে মানুষ ও মানবতাবাদই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
আধ্যাত্মিক কবি লালন গুরুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী। তিনি মনে করতেন মানুষের অন্তরেই পরমাত্মার অধিষ্ঠান। তাই মানুষকে ভালোবাসতে পারলে, মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটিয়ে মানবিকতায় উন্নীত হতে পারলে ‘মনের মানুষ’ অর্থাৎ পরমাত্মার সন্ধান লাভ করা যায়। সাধন-ভজনের মাধ্যমে গুরুতত্ত্ব আশ্রয় করে মানুষকে ভজলে ঈশ্বর লাভ সম্ভব।
৩। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’-কোন্ কবিতায় কবি কেন মানুষ ভজতে বলেছেন?
বাউল সাধক লালন শাহ্ রচিত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নির্ধারিত পাঠ্য কবিতা ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
বাউলসাধনার মূল তত্ত্বই হল মানবসাধনা। বাউল মতে, সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টা নিহিত, মানবের মাঝেই বিরাজ করেন পরমাত্মা। তাই মানুষকে ভালোবাসলে ঈশ্বরের উপাসনা হয়, মানুষকে ভজনা করলে স্রষ্টাকেই ভজন করা হয়। কবি তাই মনুষ্যত্ববোধে উদ্দীপ্ত হয়ে মানবিকবোধের জাগরণ ঘটিয়ে মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন।
৪। ‘মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।’-অর্থ পরিস্ফুট করো।
বাউল সাধকরা ভবসংসারে ঘরছাড়া, পরমাত্মার সন্ধানে অবিরাম রত। কবি ‘ক্ষ্যাপা’ বলতে বাউলসাধনায় রত বাউল সাধকের বাউল মনকে বুঝিয়েছেন। লালন ফকির মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর মানব সন্তানের মধ্যে অধরা মনের মানুষের বাস। নিরিখ বেঁধে সত্য মনে তাঁকে সাধনা করতে পারলে তবেই প্রকৃত সিদ্ধিলাভ ও পরমাত্মার সঙ্গে মিলন হতে পারে। নইলে মূল হারাতে হবে, সাধের মানব জনম একেবারে বিফলে যাবে, অমূলের অন্ধকারে দিবানিশি হাবুডুবু খেতে হবে। অকূলে আর কূল পাওয়া যাবে না।
৫। ‘দ্বি-দলের মৃণালে/সোনার মানুষ উজ্জ্বলে’-উক্তিটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করে অর্থ লেখো।
বাউলসম্রাট লালন ফকির মনে করতেন, মানবদেহের ভিতর পরমাত্মার বসতি। সবাই টের পেলেও সেই পরমাত্মাকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না কিংবা মানবচক্ষে দেখতে পায় না। মনের মানুষের অবস্থান প্রসঙ্গে কবি উক্তিটির অবতারণা করেছেন।
বাউলগণ দেহতত্ত্ববাদী। ফকিরের মতে, মানবদেহের ভিতরে আছে আঠারো মোকাম (অর্থাৎ আঠারোটি ঘর), ছয় লতিফা (ষড়চক্র), বারো বরজ, চারচন্দ্র (মল, মূত্র, শুক্র, রজ), চৌদ্দো ভুবন, ষড়রিপু ও দশ ইন্দ্রিয়ের মতো দ্বি-দল মৃণাল অর্থাৎ দুই পাপড়ির পদ্ম। দেহের মধ্যে সেই দ্বি-দল পদ্মেই আলোকিত হয়ে আসীন রয়েছেন সোনার মানুষ। সূর্যকিরণবিম্বিত অথই রূপসাগরে ডুব দিয়ে সাধন-ভজনের দ্বারা তাকে লাভ করতে হবে। কবি সেই সোনার মানুষের কথা এখানে বলেছেন।
৬। ‘এই মানুষে মানুষ গাথা’-মানুষে কীভাবে মানুষ গাথা আছে?
মরমি কবি লালন শাহ্ রচিত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নির্ধারিত পাঠ্য কবিতা ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।
মানুষের স্বরূপ উপলব্ধিই বাউলজীবনের একমাত্র লক্ষ্য। লালন ফকির আজীবন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাতহীন এক মানবিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন, যে সমাজে মানুষই সব, মানুষের মানবিক মূল্যবোধই সমাজের সহায়ক। মানুষের প্রকৃত পরিচয় মানবিক মূল্যবোধে বা মনুষ্যত্বে। এই মনুষ্যত্ববোধ থেকেই উদ্ভূত হয় মানবিকতাবোধ। মানবতাই প্রকৃতপক্ষে মুক্তির পথ, মানুষ হওয়ার সাধনার চাবিকাঠি। লালন গুরুবাদী ধর্মে সাধন-ভজনে মানুষের সেই মনুষ্যত্ববোধকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষকেই ভালোবাসলে ঈশ্বরের সন্ধান মেলে। মানুষের ভিতরেই তো ঈশ্বর বিরাজমান। তাই মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক গভীর ও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন।
৭। ‘জেনে শুনে মুড়াও মাথা/জাতে তরবি।।’-উক্তিটির অর্থ নিরূপণ করো।
উদ্ধৃতাংশটি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
লালন তাঁর গানে জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে এই সমাজে মানবিক বার্তা দিয়েছেন। প্রচলিত ধারণা ও নানা সংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্বে মন্তক মুণ্ডন বা মাথা মুড়ানোর রেওয়াজ প্রচলিত। ঈশ্বরের স্বরূপ উপলব্ধির জন্য এই চূড়ান্ত বাস্তবতার পথ অবলম্বন করতে হয়। সেই ‘চূড়ান্ত বাস্তবতা’-র স্বরূপ হল লালনের ‘মনের মানুষ’- যিনি দেহখাঁচার মধ্যে অচিনপাখি বা আত্মারূপে বিরাজমান। ‘অচিনপাখি’-রূপী সাঁই সর্বদা সেখানে লীলায় মগ্ন। তাঁকে জানার মাধ্যমেই জাতে উঠে এক মহিমান্বিত আধ্যাত্মিক স্তরে পৌঁছোনো যায়। আসলে যে মানুষ নিজেকে চিনেছে, সে ঈশ্বরকেও চিনেছে।
৮। ‘মানুষ ছাড়া মন আমার/পড়বি রে তুই শূন্যকার’-এই ‘মানুষ’-এর পরিচয় দিয়ে ‘মানুষ ছাড়া মন’ শূন্য কেন বুঝিয়ে দাও।
লালন ফকির তাঁর গানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করেছেন। মানুষের ভিতরেই তিনি সন্ধান করেছেন ‘অরুপ রতন’। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে ‘মানুষ’ বলতে সেই অরূপ রতন স্বরূপ ‘মনের মানুষ’-কে বোঝানো হয়েছে।
বাউল সাধকেরা বিশ্বাস করেন, মানুষ প্রতি মুহূর্তে যে শূন্যতার বোধ উপলব্ধি করে তা আসলে ‘মনের মানুষ’-এর বিহনে। মনের মানুষকে উপলব্ধি করতে না পারলে সবই শূন্য মনে হয়। অন্তর যেন হাহাকার করে, সবই অসার আর নিরর্থক মনে হয়। এই শূন্যতা মানুষের সহ্যের অতীত। তাই সেই নিরালম্ব শূন্যতা ভরিয়ে তুলতেই মানুষ ভজনে ব্রতী হয়। সেই মানুষের অলীক স্পর্শ লাভ হলে তবেই পরম আনন্দ আর গভীর চিত্তসুখ লাভ হয়। তাই কবির মতে, ‘মানুষ ছাড়া মন’ শূন্যকার।
লালন শাহ ফকিরের গান ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
১। লালন ফকিরের পরিচয় দাও। লালন তাঁর গানে কী বার্তা দিতে চেয়েছেন?
বাউল সম্রাট মহাসাধক সত্যসন্ধানী পরমপুরুষ লালন শাহ্ ছিলেন মানবপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। তাঁর জন্মস্থান ও জন্মকাল নিয়ে বহু মতান্তর আছে। তবে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে লালন মানবতার বার্তা দিয়েছেন তাঁর গানে। তিনি মনে করতেন, মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। মানবতাই মানুষের মুক্তির পথ, মানুষের মানুষ হওয়ার সাধনার চাবিকাঠি। লালনের আত্মদর্শন হল দেহ-মন, আত্মা-পরমাত্মা, রূপ, আকার, সাকার প্রভৃতি। তাই স্রষ্টাকে লাভ করতে গেলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুধাবন করা সম্ভব। সত্যের পথে সাধন-ভজনের মাধ্যমে মানবতাবাদের জাগরণ ঘটিয়ে ঈশ্বরলাভের পন্থা দেখিয়েছেন লালন তাঁর গানে।
২। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’-লালনের ‘সোনার মানুষ’-এর পরিচয় দাও। তাঁর মতে ‘সোনার মানুষ’ কীভাবে হওয়া যায়?
লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত প্রশ্নের পঙ্ক্তিটিতে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে ‘সোনার মানুষ’ কথাটি প্রযোজ্য হয়েছে। সোনা উজ্জ্বল ও মূল্যবান ধাতু-বিশেষ। শরীরে ধারণ করলে ঔজ্জ্বল্য বাড়ে। দুই পাপড়ির পদ্মে সোনার মতো আলোকিত করে থাকা মানুষকেই লালন ‘সোনার মানুষ’ বলেছেন। লালন বলেন, এই ‘সোনার মানুষ’-কে লাভ করা অত্যন্ত কঠিন, তবুও মানুষ ভজন করার মতো দুঃসাধ্য ও জটিল কাজটি যাঁরা করে থাকেন ও মনের মানুষের সন্ধান পান, লালনের কাছে তাঁরাই ‘সোনার মানুষ’।
পরম সাধক বাউল তাত্ত্বিক লালন শাহ্ ফকির মনে করতেন, যিনিই পরমাত্মা তিনিই ঈশ্বর। মানবের মাঝেই ঈশ্বর বিরাজমান। মানুষই হলেন ভক্তি ও পরম গুরুজ্ঞানের আধার। মানুষ ভজার মধ্য দিয়ে সিদ্ধিলাভ ও পরমাত্মার সঙ্গে মিলন হয়। জগতে মানুষকে ভজলে, মানুষকে নমস্য জানালে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য হয়ে ‘সোনার মানুষ’ হওয়া যায়।
৩। ‘মানুষ ছেড়ে ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি।।’-‘মানুষ ছেড়ে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? মূল হারানোর অর্থ কী?
বাউল তত্ত্ব ও বাউল সাধনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হল মানবদেহ। দেহের মধ্যেই থাকে আত্মা। আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার সন্ধান মেলে। পবিত্র জ্ঞান করা এই দেহের মাঝেই বাউল সাধকরা খোঁজের ঈশ্বররূপী ‘অচিনপাখি’-র ঠিকানা। আমাদের পাঠ্যাংশ ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতায় মানবতাবাদী দার্শনিক কবি লালন ফকির তাই মানুষকে ভালোবাসতে বলেছেন। মানুষকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুধাবন করা সম্ভব। মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটিয়ে স্রষ্টার প্রতি অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই বিরাজমান। তাই মানুষকে ছাড়লে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়।
লালন ফকির মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, পৃথিবীর মানব সন্তানের মধ্যে অধরা মনের মানুষের বাস। নিরিখ বেঁধে সত্য মনে তাঁকে সাধনা করতে পারলে তবেই প্রকৃত সিদ্ধিলাভ ও পরমাত্মার সঙ্গে মিলন হতে পারে। নইলে মূল হারাতে হবে, সাধের মানব জনম একেবারে বিফলে যাবে, অমূলের অন্ধকারে দিবানিশি হাবুডুবু খেতে হবে। অকূলে আর কূল পাওয়া যাবে না।
৪। ‘দ্বি-দলের মৃণালে/সোনার মানুষ উজ্জ্বলে’-কার লেখা কোন্ কবিতার অংশ এটি? প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উদ্ধৃত অংশের অর্থ পরিস্ফুট করো।
উদ্ধৃতাংশটি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ শীর্ষক কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
বাউলসম্রাট লালন ফকির মনে করতেন, মানবদেহের ভিতর পরমাত্মার বসতি। সবাই টের পেলেও সেই পরমাত্মাকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না কিংবা মানবচক্ষে দেখতে পায় না। মনের মানুষের অবস্থান প্রসঙ্গে কবি উক্তিটির অবতারণা করেছেন।
বাউলগণ দেহতত্ত্ববাদী। ফকিরের মতে, মানবদেহের ভিতরে আছে আঠারো মোকাম (অর্থাৎ আঠারোটি ঘর), ছয় লতিফা (ষড়চক্র), বারো বরজ, চারচন্দ্র (মল, মূত্র, শুক্র, রজ), চৌদ্দো ভুবন, ষড়রিপু ও দশ ইন্দ্রিয়ের মতো দ্বি-দল মৃণাল অর্থাৎ দুই পাপড়ির পদ্ম। দেহের মধ্যে সেই দ্বি-দল পদ্মেই আলোকিত হয়ে আসীন রয়েছেন সোনার মানুষ। সূর্যকিরণবিম্বিত অথই রূপসাগরে ডুব দিয়ে সাধন-ভজনের দ্বারা তাকে লাভ করতে হবে। কবি সেই সোনার মানুষের কথা এখানে বলেছেন।
৫। ‘বাউল’ কাদের বলা হয়? জীবনদর্শন সম্পর্কে বাউলের মত কী?
বাউল হল বিশেষ একটি লোকাচার ও ধর্মমত। প্রচলিত ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও সংস্কার থেকে মুক্ত সম্প্রদায়বিশেষকে বাউল নামে চিহ্নিত করা হয়। বাউল সংগীত মূলত মানুষের জীবনদর্শনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। বাউলরা সাদামাটা জীবনযাপন করেন এবং একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানোই তাঁদের অভ্যাস। উদার ও অসাম্প্রদায়িক এই ধর্মসাধকেরা মানবতার বাণী প্রচার করেন।
বাউল সাধকের মূল প্রতিপাদ্য মানবদেহ। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাঁদের মতে, আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পাওয়া যায়। আত্মার বাস যেহেতু মানবদেহে, তাই দেহকে তাঁরা পবিত্র জ্ঞান করেন। দেহের মাঝেই তাঁরা খোঁজেন ‘অচিনপাখি’-র ঠিকানা। সাধারণত স্বল্প শিক্ষিত হলেও বাউলরা জীবনদর্শন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও তত্ত্বকথা বলেছেন তাঁদের গানে। তাঁদের দর্শন ও মতামত বাউল গানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
৬। ‘দেখনা যেমন আলেক লতা’-আলেক লতা কী? কোন্ প্রসঙ্গে কবি উক্তিটি ব্যবহার করেছেন?
উদ্ধৃত অংশটি লালন শাহ্ রচিত ‘লালন শাহ্ ফকিরের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘আলেক লতা’ হল উজ্জ্বল সোনালি রঙের এক ধরনের ভেষজগুণসম্পন্ন পরজীবী বিরুৎ উদ্ভিদ, যা বাংলা দেশে শীতকালে দেখতে পাওয়া যায়।
আলেক লতা পরজীবী হওয়ায় অন্য উদ্ভিদকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠে। একইভাবে এই সমাজের মানুষ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় মানুষ জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে সাম্যের পথ অবলম্বন করে। মানবিকতা পরমধর্ম। মানবতাবোধে উত্তীর্ণ হয়ে বৈষম্য ভুলে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বোঝাতে কবি উক্ত প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন। সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, নির্মমতা, নৃশংসতা প্রভৃতি বিষ দূর করতে লালনের দেখানো প্রেমের পথই শ্রেষ্ঠ। মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। লালন ফকির তাইতো বলেন, “এই মানুষে মানুষ গাথা”।
৭। লালন শাহ্ কে ছিলেন? পাঠ্য লালনগীতিকা অবলম্বনে মূল বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।
বাউল সম্রাট মহাসাধক সত্যসন্ধানী পরমপুরুষ লালন শাহ্ ছিলেন মানবপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। তাঁর জন্মস্থান ও জন্মকাল নিয়ে বহু মতান্তর আছে। তবে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে লালন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর মৃত্যু হয় ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর।
লালন শাহের গানগুলি মূলত আত্মতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, দেহতত্ত্ব ও জাতিভেদ বিষয়ক। তিনি ছিলেন মানবধর্মের চিরন্তন প্রতীক। মানুষের মধ্যেই তিনি সন্ধান করেছিলেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব। তিনি মনে করতেন সৃষ্টি আর স্রষ্টা একে অপরের প্রতিরূপ। স্রষ্টা বিরাজ করেন মানুষের অন্তরেই। তাই লালন মানুষকে ভজতে বলেছেন, “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”। মানুষ ভজার মধ্য দিয়েই প্রকৃত সিদ্ধিলাভ ও আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন। তবে সত্যের পথ অবলম্বন করে সাধন-ভজনে অগ্রসর হতে হবে। নইলে মূল হারিয়ে অমূলে কাঁদতে হবে। লালনের ‘সোনার মানুষ’ লুক্কায়িত দুই পাপড়ির পদ্মে। মানুষ-গুরুর কৃপা হলে তাঁর স্বরূপ উপলব্ধি করা সম্ভব হবে।
লালন মনে করতেন, মনুষ্যত্ববোধই একমাত্র মানবতা সৃষ্টি করতে পারে। মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। আলেক লতার মতো মানুষকে অবলম্বন করেই মানুষের স্বরূপ বুঝতে হবে। প্রচলিত কুসংস্কার ও জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে লালন সমুন্নত মানবতাবোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁর গানে। সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে সাম্য, মৈত্রি, প্রেম ও ভালোবাসার এক আকাশের নীচে মানুষকে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষের বিহনে মন শূন্যতার বোধ উপলব্ধি করে। এই তিক্ত শূন্যতা মানুষের সহ্যের অতীত। লালন তাই বলেন, “মানুষ ছাড়া মন আমার/পড়বি রে তুই শূন্যকার”।
৮। চন্ডীদাস ও লালনের মধ্যে মিল কোথায়?
চন্ডীদাস ও লালন ফকির উভয়েই মধ্যযুগের বিশিষ্ট পদকর্তা। চৈতন্য- পূর্ববর্তী যুগের কবি চন্ডীদাস তাঁর গানে উচ্চারণ করেছিলেন, “শুনহ মানুষ ভাই/সবার উপরে মানুষ সত্য/তাহার উপরে নাই।” মানব ইতিহাসের সর্বশ্রষ্ঠ এই মানবিক বাণী উচ্চারণ করে চন্ডীদাস মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাউল সাধক লালন তাঁর গানে বললেন, “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।” অর্থাৎ মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয়। মানবপ্রেমের এই অমোঘ সত্য মধ্যযুগের দুই কবি নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করে মানবতাবাদের বাণী প্রচার করেছিলেন।
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার মনুষ্যত্বে। মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। যুগ যুগ ধরে চন্ডীদাস ও লালনের মতো মহামানবেরা এই মানবতার জয়গানে মুখর ছিলেন। উভয় কবি মূলত জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মানবধর্মকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলেছেন।
আরও পড়ুন – ছুটি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর