লালন শাহ্ ফকিরের গান কবিতার নামকরণের সার্থকতা
সাহিত্যের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেন-না নামকরণের মধ্য দিয়ে পাঠক যেমন সাহিত্যের বিষয়ের প্রতি সঠিক ধারণা লাভ করে, ঠিক তেমনই রচয়িতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় ফুটে ওঠে। তাই সাহিত্যের নামকরণ সর্বদা যুক্তিসংগত বা যথাযথভাবে নির্বাচন করা হয়ে থাকে। আমাদের পাঠ্য লালন শাহ-এর সৃষ্টি ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ পদটির নামকরণ যথাযথ বা সার্থক হয়েছে কিনা তা আলোচনা করে দেখা যাক।
পদকর্তা বাউল লালন শাহ নিজে কোনো পদ বা গান লিখে যাননি। তিনি মুখে মুখে সুর-লয়-ছন্দ সহকারে পদ রচনা করতেন আর শিষ্যরা তা লিখে রাখতেন। আমাদের পাঠ্য পদটিও সেভাবেই রচিত। পদটিতে মরমি কবি লালন মানুষের ভজনা, মানবসাধনা বা মানব সেবার মাধ্যমে পরমাত্মার সান্নিধ্যলাভের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, পরমাত্মা অর্থাৎ বাউলদের আরাধ্য দেবতা, মনের মানুষ রয়েছেন মানুষেরই দেহে-মানুষের হৃদয়মন্দিরে। গুরুর কৃপায় মানবভজনার দ্বারা দেহ থেকে দেহাতীত আধ্যাত্ম জ্ঞানলাভের মাধ্যমে সোনার মানুষ বা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠলে সেই পরমাত্মা বা মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। সমগ্র পদটি বা গানটির মধ্য দিয়ে বাউল লালন বাউলদের সাধনা-ভজনা এবং পরমাত্মা বা মনের মানুষের সান্নিধ্যলাভের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। সুতরাং, গানের রচয়িতাকে কেন্দ্র করে গানটির নামকরণ-‘লালন শাহ ফকিরের গান’ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে মনে রাখতে হবে যে, লালন শাহের কোনো পদের বা গানের নামকরণ লালন নিজে বা লিপিকররা দেননি। আমাদের পাঠ্য পদটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সংকলকগণ পদটিকে আমাদের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ‘লালন শাহ ফকিরের গান’ নামকরণ করেছেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর