রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা

রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

রাজা রামমোহন রায় নিজের প্রতিভা ও অনন্যসাধারণ মণীষার গুণে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ভারতবাসীকে আলোকোজ্জ্বল পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি ভারতের ইতিহাসে আধুনিকতার দূত হিসাবে পরিচিত ও মুঘল বাদশার কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘রাজা’ উপাধি এবং ভারতীয় মনীষীদের দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন ‘ভারত পথিক’ অভিধায়। তাঁর ছিল বিরল ব্যক্তিত্ব।

জন্ম ও শিক্ষা

রামমোহন রায়ের জন্ম হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে ১৭৭২ সালে, মতান্তরে ১৭৭৪ সালের ২২শে মে। তাঁর পিতার নাম রামকান্ত রায় ও মাতার নাম তারিণী দেবী। তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন মুঘল বাদশা ফারুকশিয়রের আমলে বাংলা সুবেদারের আমিন। তাঁরা আগে ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’ ছিলেন এবং বাদশা কর্তৃক ‘রায়’ উপাধি পান। অন্যান্য বালকদের মতো তাঁরও পড়াশোনা শুরু হয়। পরে তাঁকে পাটনায় প্রেরিত হয় আরবি ভাষা শিক্ষার জন্য ও সংস্কৃত শেখেন কাশীতে গিয়ে। জীবনের প্রথম চৌদ্দ বছর গ্রামে কাটলে ও পরবর্তী সময় কাটে বাইরে। পনেরো বছর বয়সে তিনি উধাও হয়ে যান গৃহত্যাগ করে। গৃহে থাকার সময় পালপাড়া গ্রামের নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার ওরফে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামীর সংস্পর্শে আসেন ও তাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিকতার বীজ রোপিত হয়। তাঁর আধ্যাত্মিকতার ভাবনা যেমন ছিল প্রবল তেমনি ছিল প্রখর বিষয়-বুদ্ধি।

কর্মজীবন

উনত্রিশ বছর বয়সে তাঁর পরিচয় হয় সিভিলিয়ান জন ডিগরির সাথে। তিনি কখনও ডিগরীর খাস কর্মচারী, আবার কখনও উডফোর্ডের দেওয়ান হিসাবে কাজ করেন, তিনি ব্রিটিশের কাছে কাজ করলেও সবসময় ছিলেন তেজস্বী, আত্মসম্মান বোধ ছিল খুব বেশি। তিনি পালকিতে করে যাতায়াত করতেন বলে স্যার ফ্রেডারিক হ্যামিলটন নামে এক ইংরেজের সাথে তাঁর বিবাদ বাঁধে। তিনি লর্ড মিল্টোর নিকট প্রতিবাদ করে চিঠি লিখে তেজস্বীকতার নিদর্শন রাখেন।

আধুনিকতা

১৮৪৪ সাল। রামমোহন রায়ের তখন বয়স প্রায় চুয়াল্লিশ বছর। তিনি কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এবং জীবনযাপন ধনীদের মতো, পরনে জোব্বা- চাপকান, খাওয়া-দাওয়া পান-ভোজনে হিন্দুত্বের ছাপ নেই। তিনি চেয়েছিলেন আধুনিকতার প্রসার। গোঁড়া হিন্দুরা প্রচার করতে লাগলেন, তিনি ‘যবন’। তিনি চাইলেন ইংরেজি শিক্ষার প্রসার, কারিগরী বিদ্যার প্রচলন, কলকারখানা শিল্পের উন্নতি, কৃষি-অর্থনীতিতে গতি আনার জন্য নীল চাষের ব্যাপকতা, কুসংস্কার মুক্ত ভারতবর্ষ।

সতীদাহ বিরোধী আন্দোলন

তখন বিধবা নারীদের ‘সতীদাহের’ নামে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হত। এই নারকীয় ঘটনা রামমোহন রায়ের কুসংস্কার বিরোধী মন কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। বিশেষ করে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ব্রাহ্মণ সমাজ চিরাচরিত সংস্কারের অচলায়তনের বাইরে এসে রামমোহন রায়ের চিন্তাধারাকে সমর্থন না করে বিরোধিতা করতে লাগল। তাঁকে সবচেয়ে বেশি সমর্থন করলেন রানি রাসমনির স্বামী রাজচন্দ্র দাস। রামমোহন রায় সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে হিন্দু শাস্ত্রে কোথাও সহমরণের নির্দেশ নেই। গোঁড়া হিন্দুসমাজ হার মানতে বাধ্য হল। তাঁর উদ্যোগে লর্ড বেন্টিক সতীদাহ নিষিদ্ধ করলেন। অজস্র অসহায় নারীর প্রাণ বাঁচল।

ব্রহ্মসমাজ

রামমোহন রায়ের আর একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল ‘ব্রহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা। সেসময়ের হিন্দুসমাজে তামসিক পৌত্তলিকতা তাঁকে আকর্ষণ করত না। তিনি বাইবেল পাঠ করার জন্য হিব্রু ভাষা ও কোরান শরীফ পাঠ করার জন্য আরবি ভাষা শেখেন। এসব এবং উপনিষদও পাঠ করে হিন্দুধর্মে নিরাকার ব্রহ্মোপাসনাই প্রকৃষ্ট, এই সিদ্ধান্তে আসেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্রহ্মসমাজ’। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল গোঁড়া হিন্দুধর্মকে সকলের উপযোগী মুক্ত আলোকে আনা। তাই যেকোনো ধর্মের মানুষের প্রার্থনা সভায় যোগ দেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা ছিল।

বিলাত যাত্রা

রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ তাঁর মতবাদকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। বরঞ্চ বিরুদ্ধাচরণ করে। রামমোহনকে শত বাধাও বিচলিত করতে পারল না। এমন কি স্বয়ং মুঘল বাদশা তাঁকে নিজের দূত করে ইংল্যান্ডে পাঠালেন। তাঁর মানবতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের আদর্শে অনেকে উদ্বুদ্ধ হলেন। ইংল্যান্ডে পৌঁছালে সেখানের গুণীজনদের দ্বারা তিনি সংবর্ধিত হলেন। কিন্তু স্বল্প দিলেন মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

রচিত গ্রন্থ

তিনি প্রায় ত্রিশটি বাংলা গ্রন্থ রচনা করেন। গৌড়ীয় ব্যাকরণ, ব্রহ্মসংগীত প্রভৃতি তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ। আরবি, ইংরেজি ভাষায়ও তাঁর লেখা বই আছে। ‘সংবাদ কৌমুদি’ ও ‘সমাচার দর্পণ’ নামে সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকা তিনি পরিচালনা করতেন।

উপসংহার

রামমোহন রায় বিলেত যাওয়ার জন্য জাহাজে ওঠেন ১৮৩১ সালের ১৯শে নভেম্বর। তিনি মোঘল বাদশাহের দাবিগুলিও আদায় করেন। ফরাসি দেশে যান সম্রাট লুই ফিলিপ্পির আমন্ত্রণে। তিনি পরলোক গমন করেন ব্রিস্টলের ‘স্টেপল টনগ্রোভ’ নামক বাড়িতে। মৃত্যুঞ্জয়ী এই সমাজসংস্কারককে স্মরণ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-

মৃত্যুঞ্জয় যাহাদের প্রাণ, সব তুচ্ছতার ঊর্ধ্বে দীপ যারা জ্বালে অনির্বাণ, তাহাদের মাঝে যেন হয় তোমারি নিত্য পরিচয়।

আরও পড়ুন – মহাত্মা গান্ধী প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment