রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ (Marks 2) | XI 2nd Semester Political Science 1st Chapter WBCHSE
1. আইন বলতে কী বোঝ?
▶ উইলসন আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, আইন বলতে মানুষের আচরণ ও চিন্তার সেইসব অংশকে বোঝায় যাকে আনুষ্ঠানিক-ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং যা সুস্পষ্ট ও সরকার দ্বারা সমর্থিত।
2. হল্যান্ড আইন বলতে কী বুঝিয়েছেন?
▶ হল্যান্ড বলেছেন যে, সার্বভৌম মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণের ওপর নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা যেসব নিয়মকানুন প্রয়োগ করে তাকেই বলা হয় আইন।
3. ব্যাপক অর্থে আইন বলতে কী বোঝ?
▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হল আইন। কিন্তু ব্যাপক এবং সংকীর্ণ উভয় অর্থেই ‘আইন’ শব্দটির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। ব্যাপক অর্থে আইন বলতে সামাজিক আইন, নৈতিক আইন, ধর্মীয় আইন, প্রাকৃতিক আইন প্রভৃতিকে বোঝায়।
4. সংকীর্ণ অর্থে আইন বলতে কী বোঝ?
▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যাপক অর্থে ‘আইন’ শব্দটি প্রযুক্ত হয় না। কারণ, মানুষের রাজনৈতিক কার্যকলাপ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
5. নৈতিক আইন কাকে বলে?
▶ নৈতিক আইন হল সেইসব আইন যা মানুষের আচার-আচরণ, ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত প্রভৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সেইসব বিষয়ে সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সৃষ্ট নিয়মকানুনসমূহ।
6. বার্কার ন্যায়ের কোন্ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন?
▶ বার্কারের মতে, রাষ্ট্রের সাহায্যে মানব-সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করার নীতি হল ন্যায়। এই কারণে ন্যায়ের শাসন অক্ষুণ্ণ রাখা রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্যে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় আইনকে মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত করা দরকার বলে তিনি মনে করতেন।
7. মার্কস-এঙ্গেলস আইন বলতে কী বুঝিয়েছেন?
▶ মার্কস-এঙ্গেলস মন্তব্য করেছেন, “যেসব ব্যক্তি শাসন করে, তারা কেবল রাষ্ট্রের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা সংগঠিত করে না, তারা নিজেদের ইচ্ছাকেই সর্বজনীন ইচ্ছা হিসেবে, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ইচ্ছা বা আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।”
৪. স্টোইকরা প্রাকৃতিক আইনের কী সংজ্ঞা প্রদান করেছেন?
▶ স্টোইক দার্শনিকরা ‘প্রাকৃতিক আইন’ (‘Natural Law’)-কে প্রকৃত আইন বলে মনে করতেন। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রীয় আইনের ঊর্ধ্বে প্রাকৃতিক আইনের অবস্থান। প্রাকৃতিক আইন বলতে তাঁরা এমন এক ধরনের আইনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যার ভিত্তি হল ‘বিশুদ্ধ যুক্তি’ (‘pure reason’) অথবা এমন এক নিয়ম, যা ‘বিশ্ব-প্রকৃতিতে অভিব্যক্ত’।
9. সরকারি এবং বেসরকারি আইন বলতে কী বোঝ?
▶ রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত আইনকে সরকারি আইন বলে। কিন্তু রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত নয়, এমন আইনকে বেসরকারি আইন বলে অভিহিত করা হয়।
10. সাংবিধানিক আইন বলতে কী বোঝ?
▶ অধ্যাপক গিলক্রিস্টের মতে, যেসব নীতির ওপর ভিত্তি করে সরকার দাঁড়িয়ে থাকে, সেগুলি হল সাংবিধানিক বা শাসনতান্ত্রিক আইন। সাংবিধানিক আইন ① লিখিত এবং ② অলিখিত-এই দু- ধরনের হতে পারে।
11. প্রশাসনিক আইন বলতে কী বোঝ?
▶ অধ্যাপক ডাইসি প্রশাসনিক আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, প্রশাসনিক আইন হল এমন ‘কতকগুলি নিয়মের সমষ্টি’, যেগুলি ‘ব্যক্তিগত নাগরিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রান্সে এরূপ আইন প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
12. ফৌজদারি আইন বলতে কী বোঝ?
▶ সরকারি আইনের তৃতীয় ধরন হল ফৌজদারি আইন। সমাজে আইনশৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা, নাগরিকজীবনে নিরাপত্তা প্রদান ও অপরাধীদের দণ্ডাজ্ঞা দেওয়ার জন্য যে-আইন প্রণীত হয়, সেগুলিকে ফৌজদারি আইন বলে।
13. রাষ্ট্রীয় আইনকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?
▶ জাতীয় অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় আইনকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ① সরকারি আইন (Public Law) এবং② বেসরকারি আইন (Private Law)।
14. আইনের প্রকৃতি সম্পর্কে বার্কারের অভিমত কী?
▶ কেবল রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, ঘোষিত ও প্রযুক্ত হলেই কোনো আইনকে আদর্শ আইন বলে গণ্য করা উচিত নয় বলে বার্কার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে, আইনের মধ্যে ‘বৈধতা’ ও ‘নৈতিক মূল্য’ উভয়ই বর্তমান থাকা প্রয়োজন। ‘বৈধতা’ বলতে আইনের পেছনে সার্বভৌম শক্তির অধিকারী রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও সমর্থনকে বোঝায়। আবার, সামাজিক ন্যায়নীতিবোধের ওপর আইনের প্রতিষ্ঠাকে ‘নৈতিক মূল্য’ বলা হয়।
15. আইনকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
▶ আইনের শ্রেণিবিভাজনের প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। কেউ কেউ আইনকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন, যথা-① প্রাকৃতিক আইন (Natural Law), ② জাতীয়/রাষ্ট্রীয় আইন (National/Municipal Law) এবং ③ আন্তর্জাতিক আইন (International Law)।
16. সরকারি আইনকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
▶ সরকারি আইন তিনভাগে বিভক্ত, যথা-① সাংবিধানিক আইন (Constitutional Law), ② প্রশাসনিক আইন (Administrative Law) এবং ③ ফৌজদারি আইন (Criminal Law)।
17. সরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলতে কী বোঝায়?
▶ সরকারি আন্তর্জাতিক আইন হল সেইসব নিয়ম, যেগুলি আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কার্যকলাপ ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের সঙ্গে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
18. সরকারি আন্তর্জাতিক আইনকে ক-ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
▶ সরকারি আন্তর্জাতিক আইন তিনভাগে বিভক্ত, যথা-① শান্তি- সংক্রান্ত আইন (Laws of Peace), ② যুদ্ধ-সংক্রান্ত আইন (Laws of War) এবং ③ নিরপেক্ষতা-সংক্রান্ত আইন (Laws of Neutrality)।
19. বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলতে কী বোঝ?
▶ কোনো ব্যক্তির অধিকার বা স্বার্থকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিক রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ বাধলে তার নিষ্পত্তির জন্য যেসব আইন রয়েছে, সেগুলিকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন বলা হয়।
20. আন্তর্জাতিক আইনকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?
▶ আন্তর্জাতিক আইনকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যথা- ① সরকারি আন্তর্জাতিক আইন (Public International Law) এবং ② বেসরকারি আন্তর্জাতিক আইন (Private International Law)।
21. আন্তর্জাতিক আইনকে কারা আইন বলে স্বীকার করেন?
▶ যাঁরা আন্তর্জাতিক আইনকে আইন পদবাচ্য বলে মনে করেন, তাঁদের মধ্যে হেনরি মেইন, স্যাভিনি প্রমুখ ঐতিহাসিক এবং হল (Hall), লরেন্স, ওপেনহাইম, ব্রিয়ারলি, ফেনউইক, কেলসেন (Kelsen), পোলক প্রমুখ আন্তর্জাতিক আইনবিদ রয়েছেন।
22. আন্তর্জাতিক আইনকে আইন বলে কারা স্বীকার করেন না?
▶ হক্স, অস্টিন, হল্যান্ড, সলসবেরি প্রমুখ আইনের বিশ্লেষণমূলক মতবাদের প্রবক্তা আন্তর্জাতিক আইনকে আদৌ আইন বলে মনে করেন না।
23. ‘A Theory of Justice’-কে, কবে প্রকাশ করেন?
▶ নয়া উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা জন রল্স 1971 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘A Theory of Justice’ গ্রন্থে ন্যায়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এক নতুন ধারণার অবতারণা করেন।
24. আইনের উৎসগুলি কী কী?
▶ আইন হঠাৎ-ই রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা গড়ে ওঠেনি। আইন গড়ে ওঠার পেছনে কতকগুলি উৎস কাজ করেছে। যেমন-① প্রথা, ② ধর্ম, ③ আদালতের সিদ্ধান্ত, ④ বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, ⑤ ন্যায়নীতি, ⑥ আইনসভা।
25. আইনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
▶ আইনের বৈশিষ্ট্য হল-① আইন বলতে এমন কতকগুলি নিয়মকানুনকে বোঝায় যা সকলে মেনে চলে। ② মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ③ আইন সর্বজনীন। ④ আইন সার্বভৌম শক্তির দ্বারা প্রযুক্ত হয়।⑤ আইন সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট।
26. আইন ও নৈতিক বিধির মধ্যে দুটি পার্থক্য উল্লেখ করো।
▶ আইন ও নৈতিকবিধির মধ্যে দুটি পার্থক্য হল-① আইন সব সময়েই সুসংবদ্ধ এবং সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। কিন্তু নৈতিকবিধি তা নয়। কারণ নৈতিক বিধির সঙ্গে মানসিক অনুভূতি, মননশীলতা, মানুষের চিন্তাভাবনা প্রভৃতি জড়িত থাকে। ② আইন হল সর্বজনীন বিষয়। কারণ সার্বভৌম শক্তি সকল মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা প্রণয়ন করে। অপরদিকে নৈতিক বিধি সর্বজনীন বিষয় নয়, তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নৈতিক বিধির সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত বিবেকবোধ জড়িত থাকে।
27. প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক আইন কাকে বলে এবং কেন?
▶ প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক আইন (Natural Law) বলতে সেইসব আইনকে বোঝায় যার দ্বারা প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে সংঘটিত কার্যকারণের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষিত হয় এবং কার্যকর করে। মানুষ বা সার্বভৌম শক্তি এই আইনের সৃষ্টিকর্তা নয়। তাছাড়া এই আইন সার্বভৌম শক্তি দ্বারা সমর্থিত নয়। সার্বভৌম শক্তি একে প্রয়োগও করে না। এই আইন দ্বারা মানুষের ন্যায়নীতিবোধের প্রকাশ ঘটে বলে একে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন বলে।
28. স্বাভাবিক আইনের কয়েকজন প্রবক্তার নাম করো।
▶ প্রাচীন যুগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল এবং আধুনিক যুগে বোদাঁ, হবস, লক, রুশো প্রমুখ স্বাভাবিক আইনের প্রবক্তা।
29. আইনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
▶ আইনের বৈশিষ্ট্য হল-① আইন বলতে এমন কতকগুলি নিয়মকানুনকে বোঝায় যা সকলে মেনে চলে।② মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
30. আন্তর্জাতিক আইন কাকে বলে?
▶ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম, রীতিনীতি, প্রথা প্রভৃতি সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক আইন। ওপেনহাইম বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সভ্য দেশগুলি পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যেসব প্রথা, রীতিনীতি, নিয়মকানুন মেনে চলে সেগুলিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক আইন।
31. আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকজন প্রবক্তার নাম করো।
▶ আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকজন প্রবক্তা হলেন-ওপেনহাইম, ফেনউইক, লরেন্স, হেনরি মেইন প্রমুখ।
32. আন্তর্জাতিক আইনের কয়েকটি উৎসের উল্লেখ করো।
▶ আন্তর্জাতিক আইনের উৎসগুলি হল-① আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে রচিত নিয়মাবলি। ② সভ্য রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা সমর্থিত আইনের সাধারণ নিয়মসমূহ। ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ। ④ বিভিন্ন আইন বিশারদ কর্তৃক রচিত আইনের রচনা। ⑤ আন্তর্জাতিক প্রথা ইত্যাদি।
33. আন্তর্জাতিক আইনের সপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ আন্তর্জাতিক আইনের সপক্ষে দুটি যুক্তি হল-① বিশ্বের সকল রাষ্ট্র যাতে আন্তর্জাতিক আইন মান্য করে সে ব্যাপারে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তৎপর। নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ② আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কখনো-কখনো কোনো কোনো রাষ্ট্র আইন ভঙ্গ করলেও আন্তর্জাতিক আইনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় না।
34. আন্তর্জাতিক আইনের বিপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ আন্তর্জাতিক আইনের বিপক্ষে দুটি যুক্তি হল-① রাষ্ট্রীয় আইন অমান্যকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। এই শাস্তি বল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্ত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন অমান্যকারী রাষ্ট্রকে বল প্রয়োগ দ্বারা শাস্তি দেওয়া যায় না। ② কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় আইনসভা আইন প্রণয়নে কাজ করতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নের ব্যাপারে এরূপ কোনো আইনসভা নেই।
35. আন্তর্জাতিক আইনকে সমর্থন করেনি এমন কয়েকজনের নাম করো।
▶ হবস, জন অস্টিন, সলসবেরি, হল্যান্ড প্রমুখ আন্তর্জাতিক আইনকে ‘আইন’ হিসেবে সমর্থন করতে চাননি।
36. রোমান আইন ব্যবস্থায় কত ধরনের আইনের অবস্থিতি লক্ষ করা যায়?
▶ রোমান আইন ব্যবস্থায় তিন ধরনের আইনের অবস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন-① পৌর আইন, ② সর্বজনীন আইন, (3) প্রাকৃতিক আইন বা স্বাভাবিক আইন।
37. ‘A Theory of Justice’ কার রচিত? গ্রন্থটি কবে প্রকাশিত হয়?
▶ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা জন রসের বিখ্যাত গ্রন্থটি হল ‘A Theory of Justice’।
► ‘A Theory of Justice’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় 1971 খ্রিস্টাব্দে।
38. সাম্য কী?
▶ সাম্য শব্দটি কয়েকটি অর্থকে প্রকাশ করে। যেমন-① সাম্যের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের দৃষ্টিতে সমান, ② রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা সকল নাগরিকের সমান সুযোগসুবিধা প্রদান, ③ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান, ④ কোনোপ্রকার সুযোগসুবিধা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীই ভোগ করে না-তা সকলের।
39. ‘নেতিবাচক সাম্য’ ও ‘ইতিবাচক সাম্য’ বলতে কী বোঝ?
▶ ‘নেতিবাচক সাম্য’ হল কোনো বিশেষ সুযোগসুবিধা না-দেওয়া। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশমর্যাদা, স্ত্রীপুরুষ, সম্পত্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সকলপ্রকার বৈষম্যের অবসানই হল ‘নেতিবাচক সাম্য’।
▶ সকলের মধ্যে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাকে বলা হয় ইতিবাচক সাম্য।
40. সাম্যের শ্রেণিবিভাগ করো।
অথবা, সাম্য কয়প্রকার ও কী কী?
▶ সাম্য বিভিন্নপ্রকার হতে পারে। তবে প্রধানত সাম্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-① স্বাভাবিক সাম্য, ② সামাজিক সাম্য এবং ③ আইনগত সাম্য। আবার আইনগত সাম্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-[a] ব্যক্তিগত সাম্য, [b] রাজনৈতিক সাম্য এবং [c] অর্থনৈতিক সাম্য।
41. স্বাভাবিক সাম্য বলতে কী বোঝ?
▶ সাম্যের যে ধারণা এ কথা ব্যক্ত করে যে, ‘সমস্ত মানুষ সমান হয়ে জন্মেছে’, তাকে বলে স্বাভাবিক সাম্য। স্বাভাবিক সাম্যের মূল কথা হল-সমাজে কৃত্রিম কোনোপ্রকার বৈষম্য থাকবে না।
42. সামাজিক সাম্য বলতে কী বোঝায়?
▶ সাম্যের যে ধারণা অনুসারে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশমর্যাদা অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষ সমাজের কাছে সমান, তাকে বলে সামাজিক সাম্য। অর্থাৎ সামাজিক সাম্য অনুসারে জাতিগত বিভেদ, বর্ণগত বৈষম্য ও ধর্মীয় কারণে কোনোরূপ পার্থক্য করা হয় না।
43. অধ্যাপক বার্কার সাম্য বলতে কী বুঝিয়েছেন?
▶ অধ্যাপক বার্কার বলেছেন, সাম্য হল এমন একটি প্রাপ্তমূল্য যা ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য আহরণ করে। তিনি সাম্যকে এমন একটি পরিবর্তনশীল ধারণা বলেছেন, যা পরিবেশের আকারের পরিবর্তন ও নতুন রূপ নিতে পারে।
44. মার্কসবাদীদের মতে সাম্য কী?
▶ মার্কসবাদীরা মনে করেন, বৈষম্যমূলক সমাজে সাম্য থাকতে পারে না। দাস সমাজ, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ, ধনতান্ত্রিক সমাজ-প্রতিটি স্তরেই রয়েছে এক শ্রেণি থেকে অপর শ্রেণিকে শোষণ করার প্রয়াস। সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষমতা হাতে পেলে ধীরে ধীরে রাষ্ট্রকাঠামোটির পরিবর্তন ঘটবে এবং শেষে শ্রেণিবিরোধ মিটে গিয়ে শ্রেণির অবসান ঘটবে-রাষ্ট্র থাকবে না, তখনই প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
45. আইনগত সাম্য বলতে কী বোঝ?
▶ সাম্যের যে ধারণা অনুসারে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমমর্যাদার অধিকারী, তাকে বলে আইনগত সাম্য। এই সাম্য অনুসারে সংবিধানে উল্লিখিত অধিকারসমূহ যেমন সকলে সমভাবে ভোগ করতে পারবে, তেমনই বিচারের ক্ষেত্রে কোনো অপরাধীকে বিশেষভাবে শাস্তিভোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না।
46. ব্যক্তিগত সাম্য বলতে কী বোঝ?
▶ যখন কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি প্রভৃতি নির্বিশেষে সমাজের সকলেই নিজ নিজ ব্যক্তিত্ব বিকাশের অধিকারগুলি সমভাবে ভোগ করতে পারে, তখন তাকে বলা হয় ব্যক্তিগত সাম্য।
47. রাজনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝ?
▶ নারী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতি নির্বিশেষে যখন প্রতিটি ব্যক্তি রাষ্ট্রের কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার সম-অধিকার লাভ করে, তখন তাকে বলে রাজনৈতিক সাম্য। যেমন-① রাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের নির্বাচন করার অধিকার, ② নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, ③ সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার প্রভৃতি।
48. অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝায়?
▶ অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কয়েকটি বিষয়কে বোঝায়। যথা- ① সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে সাম্যনীতির অনুসরণ, ② প্রত্যেক মানুষের পছন্দ ও যোগ্যতা অনুসারে জীবিকা অনুসন্ধানের সুযোগ, ও ধনী শ্রেণি বা গোষ্ঠীর শোষণের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবিকা- নির্বাহের সুযোগ।
49. হ্যারল্ড ল্যাস্কি সাম্যের কী ধারণা দিয়েছেন?
▶ হ্যারল্ড ল্যাস্কি সকলের জন্য সমান সুবিধা বা সুযোগকে সাম্য বলেননি। তাঁর কাছে সাম্য হল-মৌলিকভাবে বৈষম্যের অবসানের কার্যকর প্রক্রিয়া। তিনি সাম্যনীতির তিনটি অর্থ প্রকাশ করেছেন।
① সাম্য হল বিশেষ সুযোগসুবিধার বিলোপসাধন। ② সাম্য হল সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা পাওয়ার অধিকার। ③ অনুপাত নির্ণয়ের একটি সমস্যা হল সাম্য।
50. আন্তর্জাতিক সাম্য বলতে কী বোঝ?
▶ সাম্যের নীতিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ করাকে আন্তর্জাতিক সাম্য (International Equality) বলা হয়। ক্ষুদ্রবৃহৎ, শক্তিধর শক্তিহীন ও সম্পদশালী-সম্পদহীন রাষ্ট্রসমূহকে সমমর্যাদা প্রদান করা হলে এরূপ সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
51. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ?
▶ সাধারণভাবে স্বাধীনতা হল এমন কাজের ক্ষমতা যা সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ইচ্ছানুসারে করতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এরূপ স্বাধীনতার অর্থ হল-স্বেচ্ছাচারিতা বা উচ্ছৃঙ্খলতার নামান্তর। স্বাধীনতা বলতে বোঝায় এমন এক সামাজিক পরিবেশ, যেখানে প্রত্যেকে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটিয়ে সমান সুযোগসুবিধা লাভ করে।
52. হবহাউস স্বাধীনতা সম্পর্কে কী বলেছেন?
▶ হবহাউস স্বাধীনতার বণ্টনে বিশ্বাসী। তাঁর মতে, স্বাধীনতা সকলের কাছে বণ্টন করে দিতে হবে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তা সমভাবে ভোগের সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে আইনকে স্বাধীনতার শর্ত বলা যায় (Law is a condition of liberty)। এর ফলে① সমান সুযোগসুবিধা লাভ সম্ভব এবং② প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ ক্ষমতার বিকাশসাধনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকা দরকার।
53. বার্কার-প্রদত্ত স্বাধীনতার সংজ্ঞাটি কী?
▶ বার্কারের অভিমত হল-“রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বা আইনসংগত স্বাধীনতা কখনোই প্রত্যেকের অবাধ স্বাধীনতা হতে পারে না; তা হল সব সময় সকলের জন্য শর্তসাপেক্ষ স্বাধীনতা।” সুতরাং কেবল রাষ্ট্রের মধ্যে থেকেই স্বাধীনতার উপলব্ধি সম্ভব। এদিক থেকে বিচার করে স্বাধীনতাকে একটি আইনগত ধারণা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
54. স্বাধীনতা বলতে ল্যাস্কি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
▶ অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, স্বাধীনতা বলতে এমন একটি বিশেষ “পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তাকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পায়।”
55. স্বাধীনতা সম্পর্কে মতেস্ক কী বলেছিলেন?
▶ ফরাসি দার্শনিক মতেস্কু মন্তব্য করেছিলেন, “স্বাধীনতার মতো অন্য কোনো ধারণা এত বিচিত্র তাৎপর্য বহন করেনি এবং মানবমনে এত বিচিত্র প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি করেনি।”
56. রুশোর মতে স্বাধীনতা কী?
▶ ফরাসি দার্শনিক রুশোর মতে, সব মানুষের ‘প্রকৃত ইচ্ছা’ (‘Real Will’)-র সমন্বয়ে গঠিত ‘সাধারণ ইচ্ছা’ (‘General Will’)-র অনুবর্তী হলেই কেবল ব্যক্তি তার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে।
57. গ্রিনের মতে স্বাধীনতা কী?
▶ ভাববাদী দার্শনিক গ্রিনের মতে, স্বাধীনতা বলতে কেবল বাধানিষেধের অনুপস্থিতিকেই বোঝায় না, মানুষের সদিচ্ছা ও নৈতিকতার পরিপূর্ণ বিকাশের উপযোগী পরিবেশকেও বোঝায়।
58. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কে বার্কার কী বলেছেন?
▶ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্কার মনে করেন যে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে মানুষের কাছে অন্যান্য স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। বার্কারের মতে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাধীন শ্রমিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কখনোই স্বাধীন হতে পারে না।
59. রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
▶ রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার গঠনে অংশগ্রহণ এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারকে বোঝায়। নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, নির্বাচন করার অধিকার, নিরপেক্ষভাবে সরকারি কাজকর্মের সমালোচনা করার অধিকার প্রভৃতি রাজনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত।
60. আইনসংগত স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ?
▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হল আইনসংগত স্বাধীনতা (Legal Liberty)। আইনসংগত স্বাধীনতা বলতে সেই স্বাধীনতাকে বোঝায়, যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এরূপ স্বাধীনতার প্রবক্তাদের মতে, কোনো স্বাধীনতাই নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে না। সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে প্রত্যেকের স্বাধীনতার ওপর কিছু-না-কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। এরূপ স্বাধীনতা প্রকৃতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
61. স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলতে কী বোঝ?
▶ রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকার করে নিলেও সরকার তার ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে স্বাধীনতার অপব্যবহার করতে পারেন। স্বাধীনতা যাতে সরকার দ্বারা ক্ষুণ্ণ না হয় তার জন্য স্বাধীনতা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব বিশেষ ব্যবস্থা গৃহীত হয়, তাকে বলা হয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচ (Safeguards of Liberty)।
62. স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি উল্লেখ করো।
▶ স্বাধীনতার অপব্যবহার হতে না দিয়ে তাকে সংরক্ষণের যে পদ্ধতি, তা হল স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি হল- ① সংবিধানে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, ② বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ও ক্ষমতা-স্বতন্ত্রীকরণ নীতি, ④ আইনের অনুশাসন, ⑤ দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা, ⑥ গণভোট, গণ উদ্যোগ, পদচ্যুতি, ⑦ সদাজাগ্রত জনমত প্রভৃতি।
63. ভোটদানের অধিকার কোন্ ধরনের অধিকার?
▶ ভোটদানের অধিকার হল একটি রাজনৈতিক অধিকার। ব্যক্তি রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে এই অধিকার রাষ্ট্রের কাছে দাবি করে।
64. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কাকে বলে?
▶ যার দ্বারা ব্যক্তি তার জীবনধারণের অনিশ্চয়তাগুলিকে অপসারণ করতে পারে এবং অভাব থেকে মুক্তি লাভ করে, তাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কয়েকটি উদাহরণ হল- যোগ্যতার বিচারে কাজ পাওয়ার স্বাধীনতা, উপযুক্ত পারিশ্রমিকলাভের স্বাধীনতা, পীড়িত ও বার্ধক্য অবস্থায় রাষ্ট্রীয় সাহায্যলাভের স্বাধীনতা ইত্যাদি।
65. ইতিবাচক স্বাধীনতা ও নেতিবাচক স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
▶ স্বাধীনতার যে ধারণায় স্বশাসন ও স্ব-নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় ইতিবাচক স্বাধীনতা। অর্থাৎ ইতিবাচক স্বাধীনতা বলতে বোঝায় এমন একটি নিয়ন্ত্রণবিহীন পরিবেশকে, যেখানে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশে কোনোরূপ বাধা থাকে না।
▶ নেতিবাচক অর্থে স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণের অপসারণ।
66. পৌর স্বাধীনতার দুটি উদাহরণ দাও।
▶ ব্যক্তি সমাজবদ্ধভাবে যে স্বাধীনতা ভোগ করে, তা-ই হল পৌর স্বাধীনতা। দুটি পৌর স্বাধীনতা হল-① বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ② পরিবার গঠনের স্বাধীনতা।
67. স্বাধীনতা সম্পর্কে উদারনৈতিক ধারণাটি কোন্ অর্থ বহন করে?
▶ লাতিন শব্দ ‘Liber’ থেকে ইংরেজি ‘Liberalism’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হল ‘স্বাধীনতা’। তাই ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে ‘উদারনীতিবাদ’ হল ‘স্বাধীনতা’র একটি মতবাদ। উদারনীতিবাদ বলতে এমন এক ধারণা ও মূল্যবোধের সমষ্টিকে বোঝায়, যেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যক্তির পছন্দ- অপছন্দ, সহিষুতা, আইনের শাসন প্রভৃতিকে গুরুত্ব প্রদান করে।
68. জন রল্স কবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন? তিনি কোন্ দেশের লোক?
▶ জন রল্স 1921 খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
▶ জন রল্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোক ছিলেন।
69. ‘আদি অবস্থান’ বলতে জন রল্স কী বুঝিয়েছেন?
▶ ‘আদি অবস্থান’ বলতে সামাজিক চুক্তির ঐতিহ্যের অনুসরণকে বোঝায়। অর্থাৎ, এ হল ‘প্রাকৃতিক অবস্থা’র ধারণার পরিশ্রুত রূপ, যার কোনোরূপ ঐতিহাসিক বাস্তবতা নেই। সুতরাং ‘আদি অবস্থান’ বা Original Position বলতে রল্স এমন এক কাল্পনিক অবস্থার কথা বলেছেন, যার দ্বারা সকলের মধ্যে চুক্তি সম্পর্কিত ন্যায্যতা ঠিক করা হয়।
70. রল্স সামাজিক চুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন কেন?
▶ রল্স মনে করেন, সমাজে ন্যায়ের সমস্যার মূলে আছে বিভিন্ন সামাজিক সহযোগের মধ্যে দাবি সংক্রান্ত বিরোধ। এই দাবিগুলির বিরোধের ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধভাবে যদি সব মিটিয়ে দেওয়া যায়, তবে বিরোধের অবসান ঘটতে পারে। আর বিরোধ সমাজ থেকে অবলুপ্ত হলে ন্যায়প্রতিষ্ঠাও সম্ভব হবে। এই কারণেই রল্স সামাজিক চুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
71. ‘ন্যায়ের স্বচ্ছতা’ বলতে কী বোঝায়?
▶ রল্স ‘ন্যায়’ এবং ‘ন্যায্যতা’ বা ‘স্বচ্ছতা’ ধারণা দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করেননি। তিনি মনে করেন ন্যায়ের জন্য চুক্তি হবে ‘ন্যায্য’ বা ‘স্বচ্ছ’। অর্থাৎ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ন্যায়বিচার বা Justice হবে স্বচ্ছ পদ্ধতির দ্বারা স্বচ্ছ বণ্টন।
72. রল্স ‘ম্যাক্সিমাইন’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
▶ রল্স ‘ম্যাক্সিমাইন’ (Maximin) বলতে সর্বাধিক নীতিকে বুঝিয়েছেন। সমাজের সকলপ্রকার বৈষম্যের অবসান, সুবিধাভোগীদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ প্রভৃতি বোঝাতে গিয়েই তিনি এই শব্দটি ব্যবহার করেন।
73. এমন চার জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম লেখো যাঁরা স্বাধীনতাকে সাম্যের পরিপন্থী বলেছেন।
▶ যাঁরা স্বাধীনতাকে সাম্যের পরিপন্থী বলেছেন, তাঁরা হলেন-লর্ড অ্যাক্টন, টভিল, লেকি প্রমুখ।
74. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব ঘটে কবে? কোন্ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব ঘটে?
▶ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব ঘটে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে।
▶ অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ব্যক্তির ওপর ‘রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ’-এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের উদ্ভব ঘটে।
75. Greek Political Theory বইটি কে লিখেছেন? কবে তা প্রকাশিত হয়?
► Greek Political Theory বইটি লিখেছেন বার্কার।
▶ বইটি প্রকাশিত হয় 1917 খ্রিস্টাব্দে।
76. রাজনৈতিক স্বাধীনতা কাকে বলে?
▶ যে স্বাধীনতার মাধ্যমে ব্যক্তি সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রীয় কার্যে অংশগ্রহণ করে সিদ্ধান্তগ্রহণের সুযোগসুবিধা লাভের স্বাধীনতা ভোগ করে, তাকে বলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। রাজনৈতিক স্বাধীনতার কয়েকটি উদাহরণ হল-① প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ভোটদানের স্বাধীনতা, ② নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যোগদানের স্বাধীনতা, ও সভা গঠনের স্বাধীনতা, ④ ব্যক্তির পছন্দ অনুসারে মতাদর্শে বিশ্বাসের স্বাধীনতা প্রভৃতি।
77. ধনতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীনতার ধারণাটি কীরূপ?
▶ ধনতান্ত্রিক সমাজে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির স্বাধীনতাভোগের আকাঙ্ক্ষা এত প্রবল যে, সমাজের অধিকাংশ মানুষ স্বাধীনতা ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ধনতান্ত্রিক সমাজে পৌর ও রাজনৈতিক অধিকারই স্বীকৃত, আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উপেক্ষিত। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না-থাকায় ধনতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট। এরূপ সমাজে কয়েকটি স্বাধীনতা হল-① বাস্বাধীনতা, ② নির্বাচিত হওয়ার স্বাধীনতা, ③ ভোটদানের স্বাধীনতা, ④ পছন্দ অনুসারে মতাদর্শ গ্রহণের স্বাধীনতা প্রভৃতি।
78. সমাজতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীনতার প্রকৃতিটি উল্লেখ করো।
▶ সমাজতান্ত্রিক সমাজ ধনতান্ত্রিক সমাজকে ধ্বংস করে গড়ে ওঠে। তবে এরূপ সমাজে শ্রেণিবিরোধ একেবারে বিলুপ্ত হয় না। এখানে উৎপাদনের উপকরণগুলির উপর থেকে ব্যক্তিমালিকানার উচ্ছেদের কাজ চলতে থাকে। মানুষের কাছে বস্তুজগৎ জানার জন্য নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাই সাম্যে রূপান্তরকরণের প্রচেষ্টা চালানোর জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হয়। সুতরাং, সমাজতান্ত্রিক সমাজে স্বাধীনতা পুরোপুরি ব্যক্তি ভোগ করতে না পারলেও পূর্ববর্তী অবস্থা বা স্তরগুলি অপেক্ষা উন্নততর।
79. রল্স তাঁর ‘আদি অবস্থান’-এর ধারণাটি কোথা থেকে নিয়েছেন?
▶ রল্স তাঁর ‘আদি অবস্থান’ (Original Position)-এর ধারণাটি কান্ট-এর ধারণা থেকে নিয়েছেন।
৪০. ‘অজ্ঞতার অবগুণ্ঠন’ বলতে কী বোঝ?
▶ ‘অজ্ঞতার অবগুণ্ঠন’ (Veil of Ignorance) বলতে রল্স বুঝিয়েছেন যে, এটি হল একটি প্রতীকী বিষয় যা আদি অবস্থায় অবস্থিত সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আদি অবস্থানে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের স্বার্থবুদ্ধি ও যুক্তিবোধ থাকলেও তাদের সচেতনতা না থাকায় তারা ‘অজ্ঞতার অবগুণ্ঠন’-এ থেকে যায়।
81. ন্যায়ের ধারণার কয়টি উৎস ও কী কী?
▶ ন্যায়ের ধারণার চারটি উৎস। যথা-① ধর্ম, ② প্রকৃতি ③ অর্থনীতি এবং ④ নীতিশাস্ত্র।
82. ‘ন্যায়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ উল্লেখ করো।
▶ লাতিন শব্দ ‘Jus’ থেকে ‘ন্যায়’ শব্দটি এসেছে। অধ্যাপক বার্কার ‘ন্যায়’-এর ধারণা দিতে গিয়ে তিনটি শব্দের উল্লেখ করেন। যথা- ‘Jus’ ‘Justus’ এবং ‘Justitia’। যার অর্থ হল সংযুক্ত করা বা খাপ-খাওয়ানো। অতএব ব্যুৎপত্তিগত অর্থে, ন্যায় বলতে এমন এক বন্ধন সূত্রকে বোঝায় যা মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপন করে।
83. গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল কত ধরনের ন্যায়ের কথা বলেছেন?
▶ গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল তিন ধরনের ন্যায়ের কথা বলেছেন। যথা-① বণ্টনমূলক ন্যায়, ② সংশোধনমূলক ন্যায় এবং ③ বিনিময়ভিত্তিক ন্যায়।
84. ন্যায় সম্পর্কে ইমানুয়েল কান্ট-এর বক্তব্য কী?
▶ ন্যায় সম্পর্কে ইমানুয়েল কান্ট-এর বক্তব্য-ন্যায় হল সেই সমস্ত শর্তগুলির সমষ্টি যার অধীনে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অন্যের ইচ্ছার সঙ্গে স্বাধীনতার সর্বজনীন আইন অনুসারে যুক্ত হয়।
85. অধ্যাপক বার্কার কোন্ গ্রন্থে ন্যায়ের ধারণাটি দিয়েছেন?
► Principles of Social and Political Theory নামক গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদে অধ্যাপক বার্কার ন্যায়ের ধারণাটি দিয়েছেন।
86. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা কী?
▶ রাষ্ট্র পরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা।
87. আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে কী বোঝায়?
▶ আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা এবং কর্মপদ্ধতির স্বতন্ত্রীকরণকে বোঝায়।
৪৪. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দুটি বৈশিষ্ট্য হল-① শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয়। ② অন্য বিভাগের কাজে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করা।
89. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কয়েকজন প্রবক্তার নাম লেখো।
▶ অ্যারিস্টট্ল, পলিবিয়াস, সিসেরো, বোদাঁ, জন লক, মঁতেস্কু, ব্ল্যাকস্টোন প্রমুখ হলেন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা।
90. বর্তমানে কোন্ কোন্ দেশের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয়েছে?
▶ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয়েছে।
91. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দুটি সমালোচনা লেখো।
▶① ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ যেমন দুরূহ, তেমনি এর বাস্তব প্রয়োগও কাম্য নয়। ② বাস্তবে এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয়।
92. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচকের নাম করো।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচক হলেন স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট, ল্যাস্কি ও লিপ্সন।
93. সরকারের ক-টি ভাগ ও কী কী?
▶ সরকারের তিনটি বিভাগ, যথা-① আইন বিভাগ, ② শাসন বিভাগ এবং ও বিচার বিভাগ।
94. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে দুটি যুক্তি হল-① এটি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। ② এই নীতি কর্মকুশলতা বৃদ্ধি করে।
95. গণতান্ত্রিক সরকার কোন্ কোন্ বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে?
▶ গণতান্ত্রিক সরকার শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে।
96. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাকে বলে?
▶ সরকারের তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।
97. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কত প্রকার অর্থ করা যায়? প্রথম অর্থ কী?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিন প্রকার অর্থ করা যায়।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রথম অর্থ হল সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজ করবে না।
98. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্থ কী?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বিতীয় অর্থ হল সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তৃতীয় অর্থ হল একই ব্যক্তি সরকারের একাধিক বিভাগের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত থাকবে না।
99. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চরম বিকাশ কার হাতে ঘটে? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে প্রয়োগের স্তরে উন্নীত হয় কোন্ সময়ে?
▶ ফরাসি দার্শনিক মতেস্ক এবং ইংরেজ দার্শনিক ব্ল্যাকস্টোনের হাতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চরম বিকাশ ঘটে।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে প্রয়োগের স্তরে উন্নীত হয় আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ফরাসি বিপ্লবের সময়ে।
100. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান হিসেবে কোন্ রাষ্ট্রকে মনে করা হয়? ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে কীরূপ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে?
► মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান মনে করা হয়।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
101. কোন্ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়? কারা মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে?
▶ সংসদীয় বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
▶ জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লুন্টসলি, ফাইনার ল্যাস্কি প্রমুখ মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে।
102. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে কারা সম্মত নয়?
▶ স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট প্রমুখ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে সম্মত নয়।
103. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে জৈব মতবাদের সমর্থকরা কী বলেন?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে জৈব মতবাদের সমর্থকরা বলেন জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি যেমন পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না, তেমনই সরকারের বিভাগগুলি কখনোই স্বতন্ত্রভাবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে পারে না।
104. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে সমাজতন্ত্রবাদীরা কী বলেন?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে সমাজতন্ত্রবাদীরা বলেন যে সরকার প্রভুত্বকারী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে, সেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগও একই কাজ করবে। সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অর্থহীন।
105. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচকগণ ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে কীসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচকগণ ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে স্বাধীনতার অনুকূল পরিবেশ এবং স্বাধীনতাকামী সদাসতর্ক জনগণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
106. দুটি বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসনবিভাগের উদাহরণ দাও।
► দুটি বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসনবিভাগের উদাহরণ হল এথেন্স, স্পার্টা।
107. মতেস্কু কোন্ গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আলোচনা করেছেন? “চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য এবং সাহসিকতাই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র” কার উক্তি?
► মন্তেস্কু The Spirit of the Laws গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আলোচনা করেছেন।
▶ “চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য এবং সাহসিকতাই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র”-এটি পেরিক্লিসের উক্তি।
108. উইলোবির মতে সরকারের বিভাগ ক-টি? পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব কি?
▶ উইলোবির মতে সরকারের বিভাগ পাঁচটি।
▶ না, পূর্ণ ক্ষমতা স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভব নয়।
109. কোন্ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন? সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে কী বলে?
▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোঁদা প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন।
▶ সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।
110. মার্কিন সংবিধান রচনাকালে কারা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান?
▶ মার্কিন সংবিধান রচনাকালে হ্যামিলটন, ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান।
111. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য কোন্ দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়?
▶ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।
112. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির শর্ত তিনটি কী কী?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত হল-① সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার) নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ কাজ করবে। ② এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। (3) একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না।
113. The Spirit of the Laws এবং A Theory of Justice গ্রন্থ দুটির রচয়িতার নাম উল্লেখ করো।
► The Spirit of the Laws গ্রন্থটির রচয়িতার নাম হল মন্তেস্কু এবং A Theory of Justice গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন জন রল্স।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর