রবীন্দ্র জীবনে ‘গীতাঞ্জলি পর্ব’-এর গুরুত্ব আলোচনা করো
কাব্যসমূহ
‘গীতাঞ্জলি পর্ব’-এ যে তিনটি কাব্য একসূত্রে গ্রথিত সেগুলি হল-‘গীতাঞ্জলি’ (১৯১০), ‘গীতিমাল্য’ (১৯১৪), ও ‘গীতালি’ (১৯১৫)। অনেক সমালোচক এই পর্বটিকে রবীন্দ্র কবিজীবনের ‘অধ্যাত্ম পর্ব’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
‘গীতাঞ্জলি’
বিশ্বকবির খেতাবলাভ ও জগৎসভায় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা যে কাব্যটিকে ঘিরে, তা হল ‘গীতাঞ্জলি’। গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ ‘Song Offerings’-এর জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। দেশে-বিদেশে সর্বত্র কবি বন্দিত হন এবং পরিচিত হন বিশ্বকবি আখ্যায়। এর আগে পর্যন্ত স্বদেশে কবিকে ঘিরে বিরূপ সমালোচনা থাকলেও নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির পর কবির জনসংবর্ধনার কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। কবির মনে এই নিয়ে দুঃখবোধও কম ছিল না। তাই এই ঘটনার অব্যবহিত পরে কবি লিখেছিলেন-
“এ মণিহার আমায় নাহি সাজে”
এই পর্বের অন্য দুটি কাব্য ‘গীতিমাল্য’ ও ‘গীতালি’-তেও ‘গীতাঞ্জলি’-র ভাবনারই অনুরণন ঘটেছে। কবি এই পর্বে অন্তরতমকে প্রিয়রূপে, সখারূপে, প্রাণেশরূপে উপলব্ধি করেছেন। কবির করুণ আকুতি- “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে।”- আত্মনিবেদনের এমন আন্তরিক সুর আর কোথাও ধ্বনিত হয়নি।
মূলসুর
কবির দেবতা কোনো অদৃশ্য লোকের অধিবাসী নন, বরং তিনি নিভৃত প্রাণের দেবতা, প্রেমিকরূপে ধরা দেন। কবির বিরহবেদনা সার্থক হয়। তাই তিনি বলেন-
“আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে গো ফুল ফুটবে।”
মহর্ষির সান্নিধ্য ও উপনিষদের বাণী কবিজীবনকে যেভাবে প্রাণিত করেছিল তারই প্রকাশ লক্ষ করা যায় ‘গীতাঞ্জলি’ পর্বে। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের মাধ্যমেই পাশ্চাত্য দেশগুলি ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়েছে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর