রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের কাছে এক পরম বিস্ময়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর নাম সোনার অক্ষরে লেখা আছে। কেবল কবি শ্রেষ্ঠ হিসাবে নয়, সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদরূপেও তিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত। মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই, এমন কোন ভাব-ভাবনা নেই যা তাঁর লেখায় স্থান পায়নি। তিনি ছিলেন মানুষের সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনার সঙ্গী, তাঁর কাব্যে উচ্ছ্বল। ব্যথাহত আনন্দ নিকেতনের সুখ, দার্শনিক সত্যের সন্ধান, রাজনীতিবীদের নির্ভুল পথের ঠিকানা, মৃত্যুপথযাত্রীর অমৃতকুম্ভের সন্ধান, নৈরাশ্য-পীড়িত সামাজিক পটভূমিকায় তিনি আমাদের কাছে এগিয়ে চলার পথপ্রদর্শক।

জন্ম

কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬১ সালেরা ৭ই মে (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ সাল) সাহিত্য, কাব্য-কবিতা, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা থেকে জাতীয় জাগৃতির শুভ উদ্বোধনে এই পরিবারের অবদানের কথা চিরস্মরণীয়। তাঁর পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতার নাম সারদা দেবী। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জ্যোতির্ময় ঔপনিষধিক সাধনা, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মেলবন্ধন। নবোন্মোষিত স্বাদেশিকতার পরিবেশ রবীন্দ্রনাথের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর লেখায়।

শিক্ষা

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষারম্ভ হয় যখন তাঁর বয়স চার বছর। ছোটবেলা থেকে তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ভর্তি হলেন ওরিয়েন্টাল সেমিনারী নামক বিদ্যালয়ে। কিন্তু বিশ্ব-প্রকৃতির উদার আহ্বানে তার মন স্কুলের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকতে চাইল না। গৃহের তত্ত্বাবধানে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা হল। স্কুল-কলেজের শিক্ষাধারার সীমাবদ্ধতা তাঁর চেতনাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। তাঁর সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় বিশ্ব-বিদ্যার সমস্ত দ্বার। তিনি নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কিছুদিন পড়াশোনা করেন। সতেরো বছর বয়সে তিনি ব্যারিষ্টারি পড়ার জন্য বিলেত যাত্রা করেন। কয়েক বছর পরে সাহিত্য-সংস্কৃতি, পাশ্চাত্য সংগীতের সুরমূর্ছনা নিয়ে স্বদেশে ফিরে এলেন। তাঁর দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রেরণায় প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংগীত চর্চা যোগ-সূত্র সূচিত হল।

সাহিত্য সাধনা

বাংলা কাব্য সাহিত্যের তিনি প্রথম রূপশিল্পী। যৌবনের নবীন প্রভাতে তাঁর মধ্যে মর্মরিত ঝঙ্কারে অনুরণিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করল বাল্মীকির প্রতিভা, সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাত সংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, ভানুসিংহের পদাবলী, মানসী, সোনার তরী। সোনার তরীর সোনার আলোয় মঞ্জরিত হল, তারপরে বলাকা, পলাতকা, পূরবী, বনবানী, মহুয়া, পরিবেশ, পুনশ্চ, শেষসপ্তক, পত্রপুট। শ্যামলীর ধারার সৃষ্টি হল কাব্যতরী নবজাতক, সানাই, জন্মদিনে প্রভৃতি। শুধু কাব্যে নয়; নাটক, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, সমালোচনা, উপন্যাস, ছোটগল্প, শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞান, সংগীত, ভ্রমন-কাহিনী-সাহিত্যের সব বিভাগে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য বিহার। ১৯১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন গীতাঞ্জলি কাব্য (ইংরেজিতে) লেখার জন্য।

রবীন্দ্র-সংগীত

রবীন্দ্রনাথ সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। নিজের লেখা সংগীতের সুর-সংযোজন করে অনবদ্য সৃষ্টি রবীন্দ্র সংগীত উপহার দিলেন সমগ্র জাতিকে। এই সংগীত প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংগীতের মেলবন্ধন। সংখ্যায় যেমন বিপুল তেমনি বৈচিত্রময়। কথা এবং সুরের সমন্বয়ে বিরল এই ঘটনা নজির বিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

স্বদেশ প্রেম

সহধর্মিনী মৃনালিনী দেবী, প্রিয় কন্যা রেণুকা, পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের প্রয়ান ঘটেছে। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গদেশকে দ্বিখণ্ডিত করলেন শাসন কাজ চালাতে সুবিধা হবে এই যুক্তি দেখিয়ে। মানুষের বুঝতে অসুবিধা হল না যে চতুর ইংরেজদের বঙ্গবিভাজনের আসল উদ্দেশ্য বাঙ্গালীর ভাবাবেগ ও ঐক্য বিনষ্ট করা। রবীন্দ্রনাথের অন্তর তখন প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল।

সমস্ত দুঃখ-বেদনা ভুলে তিনি যোগ দিলেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে। পথে পথে গেয়ে বেড়ালেন, বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল…. বাঙ্গালীর ঘরে যত ভাই বোন এক হউক, এক হউক হে ভগবান’ ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করল শাসক ইংরেজ। ইংরেজের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ফিরিয়ে দিলেন। ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, সমবায়, কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে দেশে সবুজ বিপ্লব রবীন্দ্রনাথের মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা থেকে উদ্ভব হয়েছে। ভারতের জাতীয় সংগীত জনগনমন-অধিনায়ক জয় হে’ এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও তাঁর রচনা।

শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা

রবীন্দ্রনাথ শুধু বিশ্বকবি রূপে পূজিত হননি, সংগঠনমূলক কার্যে ও বিস্ময়কর তাঁর কৃতিত্ব। বোলপুরে ভারতীয় আদর্শে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন শান্তিনিকেতন। কালক্রমে সেখানে গড়ে উঠল বিশ্বভারতী নামে বিশ্ববিদ্যালয়। শিশুদের প্রকৃতি অনুসারি ভাবাদর্শে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং শিক্ষাবতী।

উপসংহার

রবীন্দ্রনাথ যেন ভারত-আত্মার মূর্ত প্রতীক, বৈদিক ঋষির মতো তাঁর অতলান্ত প্রজ্ঞা-দৃষ্টি, বাল্মীকি, বেদব্যাস-কালিদাসের মতো লোকোত্তর কবি-প্রতিভা, গেটে, টলস্টয়ের মতো সুগভীর সমাজ চেতনা, সুন্দরের পুজোয়, মানবতার আরাধনায় যেন ঈশ্বরপ্রেরিত দূত।

মহাপ্রয়ান

১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবন) এই মহান কবির প্রয়ান ঘটে। আজও আমরা যখন ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি বা পাখির ডাকে প্রভাতে জেগে ওঠি-সব কিছুর মধ্যে দেখতে পাই রবীন্দ্রনাথের ভাষা-চিন্তনের প্রতিচ্ছবি।

আরও পড়ুন – মিড-ডে মিলের প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment