রবীন্দ্রনাথের কাব্যজীবনের ‘অন্তর্বর্তী পর্ব’-এর কাব্যের গুরুত্ব আলোচনা করো
অন্তর্বতী পর্ব -এর কাব্যসমূহ
রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের উন্মেষ পর্বে যেমন প্রকৃতির বিশালতার প্রতি, ঐশ্বর্য পর্বে জীবনদেবতার প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছিল তেমনই অন্তর্বর্তী পর্বে প্রাচীন ভারতকে নতুনরূপে আবিষ্কারের প্রয়াস তাঁর লেখনীতে লক্ষ করা যায়। তাঁর এই পর্বের কাব্যগুলি হল- ‘কণিকা’ (১৮৯৯), ‘কথা’ (১৯০০), ‘কাহিনী’ (১৯০০), ‘কল্পনা’ (১৯০০), ‘ক্ষণিকা’ (১৯০০), ‘নৈবেদ্য’ (১৯০১), ‘স্মরণ’ (১৯০২-০৩), ‘শিশু’ (১৯০৩), ‘উৎসর্গ’ (১৯০৩-১৯০৪), ‘খেয়া’ (১৯১০)।
‘কথা’ ও ‘কাহিনী’ কাব্য দুটি আখ্যানমূলক। ‘কল্পনা’ কাব্যের মধ্যে প্রাচীন ভারতকে আবিষ্কারের ব্যাকুলতা আছে। ‘ক্ষণিকা’ কাব্যের মধ্যে কবি ক্ষণমুহূর্তকেই অনন্তের রসে পূর্ণ করে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ। ‘নৈবেদ্য’ কাব্যে তদানীন্তন ভারতের দাসত্বের নিন্দা করে তিনি ভোগলোলুপ সভ্যতার সুকঠোর সমালোচনা করেন। এরই পাশাপাশি প্রাচীন ভারতের সাধনামগ্ন জীবনাদর্শকে কবিতার মাধ্যমে আধুনিক ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরলেন কবি। তিনি স্ত্রীবিয়োগজনিত ব্যথাভার লাঘব করার জন্য রচনা করেন ‘স্মরণ’ কাব্যটি। ‘শিশু’ কাব্যটি পরবর্তীকালে শিশুদের জন্য রচনা করেন। এই কাব্যে কবি অনায়াসে শিশুমনের অন্তঃপুরে প্রবেশ করেছেন।
এই পর্বের শেষ কাব্য ‘খেয়া’, যার মধ্য দিয়ে কবির রাজনৈতিক চেতনা ও বিক্ষুব্ধ মনের দ্বন্দ্ব প্রকাশিত। স্বদেশপ্রেমের নামে দলাদলি, বিশ্বাসঘাতকতা কবিকে রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করেছিল। তারই ছাপ পড়েছে কবিতায়। এই সময় কবির চিন্তার জগৎ ও ভাবনার জগতের খেয়াতরি পাড়ি দেয় অসীমলোকের অপরূপ সৌন্দর্য তথা অধ্যাত্মসাধনার জ্যোতির্ময়লোকে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর