রবীন্দ্রনাথের ঐশ্বর্য পর্ব-এর কাব্যধারা সম্পর্কে আলোচনা করো
কবিজীবনের তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছরের মধ্যে লেখা ঐশ্বর্য পর্বের কাব্যগুলি শিল্পরূপ, আবেগ ও গভীর প্রত্যয়ের বলে চিহ্নিত করা হয়। এই পর্বের কাব্যগুলি হল- ‘মানসী’ (১৮৯০), ‘সোনার তরী’ (১৮৯৪) ‘চিত্রা’ (১৮৯৬) ও ‘চৈতালি’ (১৮৯৬)।
‘মানসী’ কাব্য
‘মানসী’ কাব্যের কবিতাগুলির মধ্যে প্রেম ও প্রকৃতির সুরই প্রাধান্য পেয়েছে। ‘মানসী’ কাব্যে কবি শেষপর্যন্ত পার্থিব মোহবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে অনাদিকালের হৃদয় উৎসের সঙ্গে মিলিত হতে চেয়েছেন। ‘আশা দিয়ে ভাষা দিয়ে, তাহে ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলি মানসী প্রতিমা’- ‘মানসী’ কাব্যের ‘অহল্যার প্রতি’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে পরম ঐক্যকে আবিষ্কার করেছেন কবি।
‘সোনার তরী’ ও ‘চিত্রা’ কাব্য
রবীন্দ্রনাথের কবিজীবনের এক বিশেষ প্রতীক ‘সোনার তরী’ কাব্যটি। এই কাব্যে নিসর্গের অপূর্ব মাধুরী ব্যক্তিমানসের সঙ্গে একীভূত হয়েছে। এই পর্বে কবি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আত্মহারা হয়েও মাটির প্রতি গভীর টান এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছেন। ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি প্রথমে ঠাঁই না থাকার কথা বললেও গ্রন্থের শেষ কবিতা ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’-য় কবির কিন্তু ঠাঁই মিলেছে। অর্থাৎ, কবির অন্তর্জীবন ও বহিজীবনের সঙ্গে মিলনের সূত্রপাত হয়েছে। ‘চিত্রা’ কাব্যের ‘চিত্রা’, ‘জীবনদেবতা’, ‘অন্তর্যামী’ এবং ‘সিন্ধুপারে’ কবিতাগুলির মধ্য দিয়ে কবির জীবনদেবতাতত্ত্ব প্রকাশিত হয়। কবি ক্ষুদ্র আমি-র সঙ্গে বৃহৎ আমি-র দ্বন্দ্ব থেকেই কখনও অন্তর্যামীর, মানসসুন্দরীর কিংবা লীলাসঙ্গিনীর অনুসন্ধানে চলেছেন। সীমার সঙ্গে অসীমের, বৈচিত্র্যের সঙ্গে ঐক্যের এমন নির্দ্বন্দ্ব উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথের অপর কোনো কাব্যে বিশেষভাবে চিত্রিত হয়নি।
‘চৈতালি কাব্য
জীবনের পরিপূর্ণ আনন্দ, ঐশ্বর্য, প্রাচীন ও পুরাতন ভারতের মধ্যে মানস পরিক্রমা-এ সমস্তই প্রকাশিত হয়েছে কবির ‘চৈতালি’ কাব্যে। এই কাব্যের মধ্য দিয়ে কবির মন বিশাল সৌন্দর্যলোকের মধ্যে মুক্তিলাভ করে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর