যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- ভূমিকা
- বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিসংঘ
- আধুনিক সমরাস্ত্রের ভয়াবহতা
- অতিসাম্প্রতিককালীন যুদ্ধ
- যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
- উপসংহার
ভূমিকা
আধুনিক কবি দিনেশ দাস ‘যুদ্ধ কেন?’ কবিতায় বলেছেন-
“কেন বারবার হবে এই বর্বর অভিনয়?”
-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্মম লোভ আর সাম্রাজ্য দখলের কারণে পৃথিবী বারবার বিধ্বস্ত হয়েছে যুদ্ধের ভয়াবহতায়। অশুভ দানবীয় শক্তির নিষ্ঠুরতার জন্যই পৃথিবীতে পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ফলে বহু দেশের সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে, অগণিত মানুষের অকালমৃত্যু ঘটেছে। শান্তিকামী মানুষ যুদ্ধ চায় না, তাঁদের লড়াই যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পরিবেশই তাদের কাম্য।
বিশ্বযুদ্ধ ও জাতিসংঘ
পৃথিবীর বুকে পর পর দুটি ভয়ঙ্কর বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে-তার ফলস্বরূপ সাড়া পৃথিবীতেই শোনা গেছে বহু মানুষের আর্তক্রন্দন, আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের উচ্চনিনাদ, জাতীয় সম্পদ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাড়া পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখার জন্য এবং জাতিগত মৈত্রী ও সংহতি বৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাড়া পৃথিবীকে যুদ্ধমুক্ত করার মহা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রসংঘ। সাড়া বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই এই দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সূচনা ঘটেছিল। কিন্তু তার পরেও পৃথিবীর বুকে সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া মাঝে মাঝেই মানবজীবনের তথা রাষ্ট্রীয় প্রশান্তিকে করেছে ব্যাহত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পারমাণবিক শক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলো অনেকক্ষেত্রেই মেতে উঠেছে সমরাস্ত্র উৎপাদনের নেশায়।
আধুনিক সমরাস্ত্রের ভয়াবহতা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশীর্বাদে যখন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্যায়ে মানবসমাজ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে চরমতম উন্নতির দিকে তখন তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ে কম্পমান। কেননা পৃথিবীর বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। নানা জাতীয় রাষ্ট্রনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতা, পারস্পরিক চরম অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারণে- ‘সকলেই আড়চোখে সকলকে দেখে’। আণবিক যুদ্ধ, মহাকাশ যুদ্ধ, জীবাণু যুদ্ধ, রাসায়নিক যুদ্ধ আজ আমাদের কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয় যেন যুদ্ধবাজ মানুষ রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে আছে শান্তিকামী মানুষের দিকে।
অতিসাম্প্রতিককালীন যুদ্ধ
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের শিকার হতে হয়েছিল আমেরিকাকে মাত্র আট বছর আগে। ফলে শুরু হয়েছে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার নামে একের পর এক যুদ্ধ। ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ, ভারত-পাক কার্গিল যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় তামিল গেরিলাদের যুদ্ধ সবই নর-নিধন যজ্ঞের অনুষ্ঠান। কিন্তু কেন সন্ত্রাসবাদের ভূত তো লুকিয়ে আছে শোষণবাদের-পুঁজিবাদের মধ্যেই। তার বিরুদ্ধে লড়বে কে?
যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা দেখে পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। শান্তির পতাকাতলে মৈত্রী ও ভালোবাসার মধ্যে সকলেই বাঁচতে চায়। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে দেখা যায় যুদ্ধবিরোধী মিছিল, শাস্তির সপক্ষে সমবেত জয়গান। পৃথিবীর মানুষ অনুভব করেছে সন্ত্রাসবাদের তথা সাম্রাজ্যবাদের অবসান না ঘটলে পৃথিবীর বুকে কখনোই শান্তির শ্বেত পতাকা উড়তে পারবে না। সেকারণেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জয়গান কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, শান্তিপ্রিয় মানুষ পায়ে পায়ে যুদ্ধবিরোধী মিছিলে সমবেত কণ্ঠে বলে ওঠে- ‘যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই’।
উপসংহার
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন- ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেমন হবে জানিনা, তবে তার পরেও যদি চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে মানুষকে লড়াই করতে হবে পাথর আর গাছের ডালের সাহায্যে।” আধুনিক মানুষ সমাজ বিজ্ঞানের বিজয়মঞ্চে অবস্থান করেও আবার তাকে ফিরে যেতে হবে আদিম চকমকি ঠোকার যুগে। দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবলীলা থেকে এবং বিভিন্ন যুদ্ধ থেকে আমাদের এ শিক্ষা গ্রহণ করতেই হবে যে পৃথিবীর বুকে আর যুদ্ধ নয়, শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হোক মানবতার জয়গানে। আমাদের শপথ হোক যুদ্ধ নয়-যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলুক সর্বদা।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৫। ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৭। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৮। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৯। মোবাইল ফোনের সুফল-কুফল – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
২০। আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা