যুগসন্ধির যে পটভূমিকায় আধুনিক যুগের বিকাশ সেই প্রেক্ষাপটটি সংক্ষেপে বিবৃত করো
সামগ্রিক পরিবর্তন
১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে সিরাজ-উদ্দ্দ্দৌলার পরাজয় বাংলার রাজনৈতিক পটভূমিতে এক বড়ো রদবদল ঘটাল। বণিক ইংরেজ রাতারাতি রূপান্তরিত হল দেশের রাজায়। অন্যদিকে, ১৭৬৯-এ কবি ভারতচন্দ্রের জীবনাবসান বাংলা সাহিত্যেও বাঁক বদলের ইঙ্গিত বয়ে আনল। ইংরেজদের পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশি ভাষা, বিদেশি সাহিত্য, বিজ্ঞান-যুক্তি-বুদ্ধি তাদের ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে হলেও এদেশে এসে প্রবেশ করল। গড়ে উঠল শ্রীরামপুর মিশন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় পুথিপত্র ইংরেজদের ছাপাখানা স্থাপনের দৌলতে মুদ্রিত হরফে প্রকাশ পেল। সাহিত্যের সংরূপে লাগল পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি সমাজে এক বাবু শ্রেণির আবির্ভাব ঘটল, কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ বা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নববাবুবিলাস’ -এ তাদের বর্ণনা পাওয়া গেল। পাশ্চাত্য স্রোত প্রথাসর্বস্ব কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাংলার অলিতেগলিতে আলোকায়ন ঘটাল। জনমানসের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন সূচিত হল। শিল্প-বাণিজ্যক্ষেত্রেও জোয়ার এল। জমিদারি ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যাবসার সূত্রে এগিয়ে এলেন কার-টেগোর কোম্পানির আধিকারিক প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। এ ছাড়াও মতিলাল শীল, রামদুলাল দে প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। দেবদেবীনির্ভর বাংলায় ক্রমে মানুষ প্রাধান্য পেতে শুরু করল।
উপসংহার
আসলে ‘আধুনিকতা’ শব্দটি খুব আপেক্ষিক। নদীর গতানুগতিক স্রোতোধারা যেমন হঠাৎই বাঁক বদল করে, প্রবহমান সময় ও সমাজেও সেই বাঁক বদলের ইশারাই আধুনিকতা। দুর্ধর্ষ ব্রিটিশ রাজশক্তি, শাসন-শোষণ অত্যাচারের ফাঁকে অচিরেই বাঙালি মননে যুক্তি-বুদ্ধি, মুক্তচিন্তার যে পরিযায়ী হাওয়া এনে উপস্থিত করেছিল, তা-ই বাঙালির নবজাগরণ ঘটিয়েছিল। আর এই নবজাগরণ বাংলা তথা ভারতবর্ষে যুগান্তর এনেছিল। সূচনা হয়েছিল আধুনিক যুগের।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর