মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রদত্ত বৌদ্ধিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রদত্ত বৌদ্ধিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রদত্ত বৌদ্ধিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো
মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রদত্ত বৌদ্ধিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

বৌদ্ধিক স্বাধীনতা

আজাদ শিক্ষা এবং বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রকৃত স্বাধীনতা কেবলমাত্র মনের আলোকায়নের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে। তাঁর বৌদ্ধিক স্বাধীনতার বিষয়ে মূল দিকগুলি হল-

  • বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক অনুশাসনের জন্য সমর্থন: আজাদ বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক অনুসন্ধানকে সমর্থন জানান। পাশাপাশি তিনি শিক্ষা ও জনজীবন উভয়ক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও যুক্তিবাদী পন্থা অবলম্বন করতে মানুষকে উৎসাহিত করেছিলেন।
  • শিক্ষা ও জ্ঞান: মৌলানা বিশ্বাস করতেন যে, প্রকৃত বৌদ্ধিক স্বাধীনতা শিক্ষা ও জ্ঞান লাভের মাধ্যমেই শুরু হয়। এ জন্যই তিনি একটি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, যেখানে ঐতিহ্যগত ইসলামীয় শিক্ষার পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা তিনি বলেছিলেন। আজাদ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, শিক্ষাকে কেবল ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়, বরং একটি মুক্ত এবং সমালোচনামূলক মনন বিকাশের জন্য জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করা উচিত। তিনি ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাকেও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।
  • মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা: আজাদের কাছে বৌদ্ধিক বিকাশের অপর অর্থ হল ব্যক্তির মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা। তিনি মুক্ত চিন্তার অবাধ আদান-প্রদানে বিশ্বাসী ছিলেন। এর মধ্যে সমালোচনা ও বিতর্কের অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সমালোচনার অধিকারকে তিনি সমাজের অগ্রগতির অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।
  • ঔপনিবেশিকতা বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদ: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আজাদের সংগ্রাম তার বৌদ্ধিক স্বাধীনতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। তাঁর মতে, প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হতে পারে যখন ভারত ঔপনিবেশিক আধিপত্য থেকে মুক্তিলাভ করবে এবং জনগণ স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারবে, কথা বলতে সক্ষম হবে।
  • সাংস্কৃতিক বিকাশের সঙ্গে সংযোগ: তিনি মনে করতেন সাংস্কৃতিক বিকাশের সঙ্গে বৌদ্ধিক বিকাশ সম্পর্কযুক্ত। তিনি ভারতীয়দেরকে তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি আধুনিকতাকেও গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এই মিশ্রণ জাতির বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত আবশ্যক।
  • ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা গ্রহণ: আজাদ ধর্মীয় সহনশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বৌদ্ধিক স্বাধীনতার রাজনৈতিক অভিব্যক্তি হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি একথা বিশ্বাস করতেন যে, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যক্তিচিন্তার মুক্ত আদান-প্রদান এবং বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য সর্বোত্তম পরিবেশ প্রদান করে। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিপীড়নের ভয় ছাড়াই ব্যক্তি স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও আচার-আচরণ পালনের অধিকার ভোগ করতে পারে।

উপসংহার

উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আজাদের বৌদ্ধিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁর বৃহত্তর দার্শনিক ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনুধাবণ করা যায়। এর সবথেকে বড়ো প্রমাণ হল-আজাদ নিজে তাঁর লেখনী এবং কণ্ঠস্বরকে ব্যবহার করে ভারতের স্বাধীনতা এবং সামাজিক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment