মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনে কর্মযোগের ভূমিকা আলোচনা করো
কর্মযোগ বা নিষ্কাম কর্ম হল চারটি আধ্যাত্মিক পথের একটি, যেটি ক্রিয়াযোগের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কর্মযোগ ছাড়া আরও তিনটি আধ্যাত্মিক পথ হল রাজযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ। সনাতন ধর্মে আধ্যাত্মিক মুক্তির পথগুলির মধ্যে কর্মযোগ হল নিঃস্বার্থ ক্রিয়ার পথ। কর্মযোগের মূলকথা হল একজন অধ্যাত্ম সন্ধানীর উচিত ব্যক্তিগত ফলাফলের উপর আসক্ত না হয়ে স্বধর্ম অনুযায়ী কর্ম করা। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল কর্মফলের প্রতি অনুসন্ধিৎসু হয়ে পড়া। কিন্তু শুধুমাত্র ফলের প্রতি আসক্তি থেকে নৈতিক কর্মের সঙ্গে আপস করা উচিত নয়। কর্মযোগ হল নৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত কর্ম।
আধ্যাত্মিক জীবনে কর্মযোগের ভূমিকা
কর্মযোগে বা নিষ্কাম কর্মে যেহেতু ফলাফলের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে কর্মের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাই আধ্যাত্মিক জীবনে কর্মযোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেগুলি হল-
আসক্তিবর্জিত কর্ম
যে ব্যক্তি কর্মযোগী হবেন তিনি জীবনে যে সকল কর্ম করবেন তা সর্বদাই নিরাসক্ত কর্ম হবে। অর্থাৎ কর্মযোগে সর্বদা আসক্তিবর্জিত কর্মের কথা বলা হয়। কোনো বস্তু তা সে যত প্রিয়ই হোক্ না কেন, তাকে ত্যাগ করতে যত তীব্র বিয়োগ অনুভব হোক্ না কেন, প্রয়োজনকালে তাকে পরিত্যাগ করার মতো মানসিক শক্তি ও দৃঢ়তা সঞ্চয় করতে হবে। অর্থাৎ, আত্মত্যাগের জন্য মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। নিরাসক্ত হয়ে কাজ করার জন্য দেহ ও মনের শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। কর্মযোগীকে নির্ভীক হতে হবে। ভয় হল দুর্বলতার লক্ষণ। দুর্বলতাই সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক দুঃখের কারণ। একজন নির্ভীক কর্মযোগী স্ব-শক্তিতে বলীয়ান।
ত্যাগ ও সেবাই কর্ম
নিষ্কাম কর্মে ত্যাগ ও সেবার কথা বলা হয়েছে। ত্যাগ বলতে ব্যক্তির নিজের ক্ষুদ্র সত্তা বা অহং-এর সম্পূর্ণ নাশকে বোঝায়। ত্যাগ বলতে বোঝায় ‘ক্ষুদ্র আমি’ থেকে ‘বৃহৎ আমি’-তে উত্তরণ। ‘বৃহৎ আমি’-র উপলব্ধিকে উপনিষদে বলা হয়েছে অমৃতত্ব। নিষ্কাম কর্মযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি মানুষের এই অহংবোধের বিনাশ ঘটে। তখনই সে সকল মানুষকে সমদৃষ্টিতে দেখতে শেখে।
আকাঙ্ক্ষাবর্জিত কর্ম
কর্মযোগীর লক্ষ্য হল স্বার্থশূন্য হয়ে পরহিতে কর্ম করা। এই লক্ষ্যে উপনীত হতে হলে কর্মের প্রতি আসক্তি যেমন ত্যাগ করতে হবে, তেমনি আকাঙ্ক্ষা বর্জন করতে হবে।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ