মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব - মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

"অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু 
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।"

পৃথিবীর বুকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন এক সুস্থ পরিবেশ। মানুষ তার আপন পরিবেশে ও পারিপার্শ্বিক জগতে প্রাণের আনন্দে মনের উচ্ছ্বলতায় বেঁচে থাকতে চায়। তাই মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। স্নিগ্ধ-সবুজ-শ্যামল এক অনন্য পরিবেশ দেয় মানুষের বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী মন্ত্র। আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু পেতে হলে পরিবেশকেও হতে হবে নির্মল-কলুষমুক্ত। নবজাতকের কাছে দূষণমুক্ত পরিবেশ যেন প্রকৃতই আশীর্বাদ।

প্রাকৃতিক পরিবেশ

প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে ভূমি, অরণ্য, নদ-নদী, পাহাড়-উপত্যকাবেষ্টিত অঞ্চলকেই বোঝানো হয়। সভ্যতার উষালগ্নে আদিম মানুষ ছিল সম্পূর্ণভাবেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের পথে মানুষ অরণ্য ধ্বংস করে সৃষ্টি করেছে জনপথ। অভিযানে মত্ত হয়েছে মরু থেকে মেরুতে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে, পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে নগরায়ণের ফলে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের স্নিগ্ধতাও হয়েছে ব্যাহত। কিন্তু মানুষ প্রকৃতি থেকেই পেয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, জীবনে এগিয়ে চলার বিচিত্র উপকরণ। উর্বর কৃষিভূমি থেকে উৎপাদিত শস্য, বনাঞ্চলের সংগৃহীত নানা উপকরণ, পার্বত্য অঞ্চলের বিবিধ বৈচিত্র্যে সাজানো প্রাকৃতিক উপাদানে নির্ভরশীল সমাজ হরণ করেছে জীবনের পাথেয়। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ মানবজীবনের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন-ধ্বংসের চোরাস্রোতে যা আজ বিপন্ন।

সামাজিক পরিবেশ

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আদিম অরণ্যে জীবন থেকে সে পেয়েছে সমাজের হাতছানি। তাই গড়ে তুলেছে সমাজব্যবস্থা। মানুষ যে সমাজে বাস করে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশকেই সামাজিক পরিবেশ বলে অভিহিত করা হয়। সামাজিক পরিবেশের সবচেয়ে বড়ো তাৎপর্য হল সেই পরিবেশ সম্পর্কে তীব্র সচেতনতাবোধ। কেন-না প্রতিদিনের এগিয়ে চলার প্রতিমুহূর্তে জীবনের ওপর পরিবেশের গভীরচারী প্রভাব অনস্বীকার্য। সুস্থ সামাজিক পরিবেশ শিশুর বড়ো হয়ে ওঠার এক অনন্য উপাদান যা ভবিষ্যৎকে করে তোলে আনন্দ উজ্জ্বল। সামাজিক পরিবেশের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য সমাজে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এক গভীর মেলবন্ধন, গ্রামে-গঞ্জে-নগরে-মহানগরের সামাজিক পরিবেশের সৌন্দর্যায়ণ আধুনিক জীবনের অন্যতম কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। সুস্থ সামাজিক চেতনা ও নাগরিকবোধের উজ্জীবন মন্ত্রে সামাজিক পরিবেশ হতে পারে অনন্য সুন্দর।

সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও মানবজীবন

সংস্কৃতিচেতনা তথা সংস্কৃতিবোধ মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তিগুলির জাগরণ ঘটাতে সহায়ক হয়। মানুষের জীবনে সাংস্কৃতিকবোধের যথোচিত বিকাশ না ঘটলে জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না-শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ ও মানসিক বিকাশের সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশের ভূমিকা অনন্য। সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য এক অনন্য উপাদান যা মানবজীবনে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করে। শিল্প-সাহিত্য-ভাস্কর্য-স্থাপত্য-বিজ্ঞান আমাদের সংস্কৃতির এক একটি ধারাপ্রবাহ, জাতির সামগ্রিক পরিচয় বহন করে। তাই মহামনীষীদের জীবনধারা তাঁদের সুমহান আদর্শ মানবজীবনে সাংস্কৃতিক পরিবেশ রচনায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক হয়। কোনও জাতির জীবনে শিল্পচেতনার বিকাশ না ঘটলে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল পুরোপুরি রচিত হয় না। সে কারণেই নানা সঙ্গীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, নাটকাভিনয় ও নানা জাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এক সচেতন নাগরিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। জাতির কৃষ্টি বা সংস্কৃতিবোধ সাংস্কৃতিক পরিবেশের চেতনার সহায়ক উপকরণ।

পরিবেশ সৃষ্টিতে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

জীবনধারণের উপযোগী সুস্থ পরিবেশ রচনা না করতে পারলে একদিন পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। সুন্দর জীবনের ভিত্তিভূমি রচিত হয় দূষণহীন সুস্থ পরিবেশে, তাই পরিবেশ সৃষ্টিতে আমাদের বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

  • ক। যথেচ্ছাচারে অরণ্য ধ্বংস ও প্রাকৃতিক সম্পদের বিনষ্টিসাধন প্রতিরোধ করতে হবে।
  • খ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ এক অপরিহার্য কর্তব্য।
  • গ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য ও সামাজিক মেলবন্ধনের জন্য অরণ্যসপ্তাহ পালন, বৃক্ষরোপণ উৎসব প্রভৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
  • ঘ। সামাজিক পরিবেশ সুস্থ রাখার জন্য ও পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য জঞ্জাল যথোপযুক্ত স্থানে জমা করতে হবে।
  • ঙ। সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ রচনার জন্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান তথা রবীন্দ্রজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস প্রভৃতি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।
  • চ। যাবতীয় সংকীর্ণতা দূর করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পারস্পরিক মিলনের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
  • ছ। পরিশেষে বলা যায়, সুস্থ চেতনার জাগরণ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রসারের একান্ত প্রয়োজন।

উপসংহার

যে পরিবেশ আমাদের শৈশবের তীর্থক্ষেত্র, যৌবনের উপবন আর বার্ধক্যের বারাণসী সেই পরিবেশকে বেঁচে থাকার উপযোগী রাখার দায়িত্ব প্রত্যেকের। বিষাক্ত বাতাসে মৃত্যুর ভয়ংকর হাতছানি-সেই হাতছানিকে উপেক্ষা করে বেঁচে থাকার সুতীব্র বাসনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে। তাই একান্ত প্রার্থনা হোক- “বাঁচো এবং বাঁচাও।”

আরও পড়ুন – 

১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment