মহানায়িকা সুচিত্রা সেন প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন প্রবন্ধ রচনা

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন

ভূমিকা

শিক্ষা-সম্প্রসারণ ও আনন্দ পরিবেশন এই দ্বৈত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র-শিল্প সমাজের সর্বস্তরে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এর সর্বব্যাপী প্রভাব ও মায়া-মদির আকর্ষণের দুর্বারতার কাছে আমাদের চিরাচরিত রঙ্গমঞ্চে র আকর্ষণ এখন তার জৌলুস হারাচ্ছে। চলচ্চিত্র বা চলন্ত ছবি সর্বপ্রথম এডিসন তাঁর গবেষণাগারে দেখান ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন ছিল অবাক চিত্র। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র পরিণত হল ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিতে। চলচ্চিত্রের আনন্দ বিতরণী ও চিত্ত – বিনোদনী ক্ষমতা অসামান্য।

রক্ষণশীল সমাজে বিশেষ করে মেয়েদের চলচ্চিত্র, নাটক প্রভৃতিতে অভিনয় করাকে সেসময় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত না, বরঞ্চ পুরুষ-শাসিত সমাজের সমাজপতিগণ তা সুনজরে দেখতেন না। যার ফলে চলচ্চিত্র প্রভৃতিতে অভিনয় করার মতো দক্ষ চিত্রাভিনেত্রীর ছিল খুব অভাব। বাংলা চলচ্চিত্রে কাননদেবীর মতো অভিনেত্রীগণ সেই অভাব কিছুটা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে সুবর্ণ যুগের সূচনা হল উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন যখন নায়ক নায়িকার চরিত্রে অভিনয় শুরু করলেন। তখন পুরুষ চরিত্রে বিকাশ রায়, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল প্রভৃতি শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা কিছুটা অভাব পূরণ করলেও নারী চরিত্রে অভিনয়ে শিল্পীর যে অভাব ছিল তা পূরণ করেন সুচিত্রা সেন। সুচিত্রার অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রে আনলেন যুগান্তকারী পরিবর্তন।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দাশগুপ্তের মেজ মেয়ে রমার (সুচিত্রা) জন্ম ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল তাঁর মামার বাড়িতে পাটনায়। মামারা আদর করে তাঁকে কৃষ্ণা ও বাবা-মা তাঁকে রমা নামে ডাকতেন। তাঁর পিতা কর্মসূত্রে থাকতেন বর্তমান বাংলাদেশের পাবনায়। সুচিত্রার ছাত্রজীবন শুরু হয় পাবনা গার্লস স্কুলে।

চলচ্চিত্রে অভিনয়

উপযুক্ত নায়িকার অভাবে বাংলা চলচ্চিত্র যখন পিছিয়ে পড়ছিল তখন রমার (সুচিত্রার) আবির্ভাব ঘটল চলচ্চিত্র জগতে উল্কার মতো হঠাৎ যেন। সুচিত্রা নিজে জানতেন না যে তিনি একদিন অভিনেত্রী হিসাবে চলচ্চিত্র জগতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অলংকৃত করবেন। সুচিত্রা সেনের ইচ্ছে ছিল ছবিতে প্লে-ব্যাক করবেন। গানের প্রতি তাঁর ছিল খুব আকর্ষণ। কিন্তু ভাগ্যের চাকা কখন কোনদিকে ঘুরবে কেউ জানে না। হলও তাই। বিবাহ বন্ধনে তিনি আবদ্ধ হন দিবানাথ সেনের সাথে।

সুচিত্রা সেন প্রথম অভিনয় করেন ‘শেষ কোথায়’ নামে একটি ছবিতে, তাঁর অভিনীত প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ (১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি)। এই ছবির পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী রমা সেনের নাম রাখেন সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা উত্তম কুমারের সাথে প্রথম অভিনয় করেন ‘কাজরী’ ও ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ নামে ছবিতে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ও ‘ওরা থাকে ওধারে’র পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন মুক্তি পাওয়া ‘মরণের পরে’ ছবি থেকে শুরু করে ‘প্রিয় বান্ধবী’ পর্যন্ত তিনি আঠাশটি ছবিতে উত্তমকুমারের সাথে অভিনয় করেছেন।

অগ্নি পরীক্ষার পর শাপমোচন, সাগরিকা, শিল্পী, হারানো সুর, চন্দ্রনাথ, পথে হল দেরি, (প্রথম বাংলা রঙিন ছবি), জীবন তৃষ্ণা, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, ইন্দ্রাণী, সূর্যতোরণ, চাওয়া পাওয়া, সপ্তপদী, গৃহদাহ, আলো আমার আলো প্রভৃতি ছবির অভিনয় দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য, দেবকী কুমার বসু পরিচালিত বিষ্ণুপ্রিয়া ছবির অভিনয় সুচিত্রাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। একই ভাবে চুলি, সদানন্দের মেলা, অগ্নিপরীক্ষা, সাঁঝের প্রদীপ, শাপমোচন, সবার উপরে প্রভৃতি ছবি সুপার হিট হয় সুচিত্রার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য। সুচিত্রা তিপান্নটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে ত্রিশটিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার। আঁধিতে সঞ্জীবকুমার, দেবদাসে দিলীপকুমার, সাতপাকে বাঁধা ছাড়া আরও দুটি ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, হসপিটাল ছবিতে অশোককুমারের সাথে অভিনয় করে তিনি যে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তা আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে।

পুরস্কার

মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সাত পাকে বাঁধা’য় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা সেন।

উপসংহার

বাংলা ছায়া ছবির ক্ষেত্রে সুচিত্রা ও উত্তমকুমারের অভিনয় সুবর্ণ যুগের সৃষ্টি করেছিল। ফরিয়াদ, দেবী চৌধুরানি, দত্তা প্রভৃতি ছবি হিট হয়েছিল সুচিত্রার অভিনয়ের জোরে। সুচিত্রা শুধু অভিনয়ে নয় সংগীতেও অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মেগাফোন কোম্পানি তাঁর দুটো পুজোর গান রেকর্ড করেছিল। বাংলা ছবি ছাড়াও হিন্দী ছবিতে অভিনয় করেছেন। আঁধি ছবির সূত্র ধরে পরিচালক ও গীতিকার গুলজারের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। দেবদাস, মুসাফির, চম্পাকলি, বোম্বাইকা বাবু, শহরদ, মমতা প্রভৃতিতে সুচিত্রার অভিনয় দর্শক মহলে এক অনন্য আবেদনের সৃষ্টি করতে পেরেছিল। সুচিত্রা শেষ জীবনে অভিনয় থেকে অবসর নিয়ে অবশিষ্ট জীবন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে কাটাতে থাকেন। তিনি পরলোক গমন করেন তিরাশি বছর বয়সে ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে।

আরও পড়ুন – মিড-ডে মিলের প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment