“মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।”-এ কথা কার, কেন মনে হবে? এই মনে হওয়ার কারণ কী?
অথবা, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে কীভাবে তেলেনাপোতা ও যামিনীর স্মৃতি কথকের মন থেকে ক্রমশ বিলীন হয়ে যায়, তা আলোচনা করো।
অথবা, “অস্ত যাওয়া তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা স্বপ্ন বলে মনে হবে।”-এখানে বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
যার, যে কারণে মনে হবে
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ ছোটোগল্পের কথকের উদ্ধৃত অনুভূতি হবে। কথকের স্মৃতিপট থেকে তেলেনাপোতার উজ্জ্বল স্মৃতি যখন ক্রমে হারিয়ে যেতে থাকে তখন তার রোগগ্রস্ত চেতনা থেকে বিলীন হয়ে যায় যামিনী, তার মা। সেই পরিস্থিতিতে কথকের এ কথা মনে হবে।
মনে হওয়ার কারণ
শহরের কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তির মাঝে ক্ষণিক অবসরে কথক তেলেনাপোতায় যায়। সেখানে ভগ্ন অট্টালিকার জীর্ণ বাতায়নপ্রান্তে রাতের বেলা যে ছায়ামূর্তি দেখে তার ‘মায়াপুরীর কোন গোপন প্রকোষ্ঠে বন্দিনী রাজকুমারী’ মনে হয়- দিনের বেলায় পুকুরঘাটে তারই সপ্রতিভ, আড়ষ্টতাহীন উপস্থিতি কথকের মনে স্বপ্নময়তা তৈরি করে। যামিনীর মায়ের প্রসঙ্গে নিরঞ্জনের প্রতারণার কথা শুনে কথক সহানুভূতিবোধে যামিনীকেই বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। কিন্তু ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রথম ভাগ এই রোমান্টিকতায় উজ্জ্বল হলেও দ্বিতীয় ভাগ রূঢ় বাস্তবের।
বিশ শতকের মহাভয়ংকর, অস্থির নাগরিক জীবনের কথাকার প্রেমেন্দ্র মিত্র। এ দশকে মানুষ যন্ত্রশাসিত সভ্যতায় আবদ্ধ। নিরঞ্জন হতে চাওয়া কথকও তাই শহরে এসে বদলে যান। মহানগরের আলোকোজ্জ্বল রাজপথে তেলেনাপোতার স্মৃতি প্রথমে ‘অতি অন্তরঙ্গ তারার মতো উজ্জ্বল’ থাকে। কিন্তু ক্রমশ সেই স্মৃতির পটে কুয়াশা জমে। ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগভোগ এবং বাস্তব জীবনের রূঢ়তায় তেলেনাপোতা কথকের চেতন-অবচেতনের মধ্যবর্তী জিজ্ঞাসা হয়ে যায়। সেই আচ্ছন্নতায় তেলেনাপোতা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। ধূসর উপেক্ষায় তেলেনাপোতা ‘অস্ত যাওয়া তারা’-য় রূপান্তরিত হয়।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর