ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
প্রতি এক মিনিট-দেড় মিনিট অন্তর বেজে উঠছে সাইরেন, অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষিপ্রগতি, সেনাবাহিনীর প্রাণান্তকর প্রয়াস, ভূত্বকের হঠাৎ মোচড়ে মুহূর্তেই বদলে যাওয়া ছবি-ভূ-কম্পনের ফলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বারে বারে ঘটেছে এমন কত-না বিপর্যয়। বড়ো বড়ো শহর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, সাদা কাপড়ে ঢাকা সারি সারি মৃতদেহ, আহত পরিজনদের আর্তক্রন্দনে ভারী হয়েছে আকাশবাতাস। প্রকৃতির তাণ্ডবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বহুতল অট্টালিকা, ধ্বংস হয়ে যায় কত সৌধ মিনার, কত ঐতিহ্যবাহী মন্দির, মসজিদ, গির্জা। প্রকৃতির কাছে মানুষ একেবারে অসহায়। তা ভূমিকম্প প্রকৃতিরই এক ভয়ঙ্কর খামখেয়ালি রূপ।
ভূমিকম্প কী
সাধারণভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠের আকস্মিক কেঁপে ওঠাকে ভূমিকম্প বলা হয়। আকস্মিক এবং ক্ষণস্থায়ী ভূত্বকীয় কম্পনকে ভূবিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প বলে অভিহিত করেছেন। ভূবিজ্ঞানী স্ট্রলার বলেছেন-“An earth- quake is a trembling or shaking of the ground produced by the passage of seismic waves।” ভূকম্পবিদ আর. এন. টিক্কা বলেছেন-“ভূমিকম্প হল পৃথিবীর শিলাস্তরের মধ্য দিয়ে কম্পমান তরঙ্গের গমনের ফলে ভূপৃষ্ঠের কেঁপে ওঠা।”
কেন হয়?
ভূমিকম্প কেন হয় সে বিষয়ে সারা পৃথিবীর ভূবিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ভূত্বকে অনেকগুলি ছোটো-বড়ো পাথরের চাদর থাকে। শিলায় নির্মিত এই চাদরগুলোকে প্লেট বলে। এই পাতগুলো সচল, এই পাতগুলো যখন চলতে চলতে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায় বা হালকা পাতের নীচে যখন ভারী পাতটি প্রবেশ করে তখনই ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূত্বকের শিলাস্তরে যখন কোনো কারণে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয় তখন শক্তির সঞ্চয় ঘটে। এই শিলাস্তরে সঞ্চিত বিপুল শক্তি হঠাৎ মুক্ত হয়েই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।
কিছু কিছু ভূমিকম্প মানুষের দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। যেমন-মাটির নীচে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে ভূত্বকে কম্পন অনুভূত হয়। পাহাড়ের ধস নামলেও ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ভূমিকম্পের সময় যা করণীয়
ক্ষণস্থায়ী বিপর্যয় ভূমিকম্প। প্রস্তুতি পর্ব থাকে না, তাই মুহূর্তের সিদ্ধান্তে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির দিকে নজর দেওয়া দরকার।
ক। বাড়ির ভিতরে থাকলে খোলা জায়গায় এসে দাঁড়ানো।
খ। ভীত হয়ে দিশেহারা না হয়ে পড়া।
গ। গ্যাস/মোমবাতি/স্টোভ জ্বলন্ত অবস্থায় থাকলে তা নিভিয়ে ফেলা।
ঘ। লিফ্ট বা এসকেলেটর না চড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা।
৫। কোনো ঝুলন্ত দেওয়ালের পাশে বা বড়ো পুরোনো বাড়ির পাশে দাঁড়ানো উচিত নয়।
উপসংহার
প্রকৃতির দিকে নজর না দিয়ে যথেচ্ছ অরণ্যধ্বংস এবং অপরিমিত বহুতল বানানোর লোভ আমাদের ঠেলে দিয়েছে আজকের এই ভয়াবহ পরিণতির দিকে। ভ্যালেন্টাইন থেকে বন্যপ্রাণীদিবস ভূদিবস সবই আমরা সাগ্রহে ধুমধাম করে পালন করি, কেবলমাত্র পৃথিবীর কথা মনে হয় ভয়ঙ্কর সুনামি বা প্রবল খরা বা ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পর।
মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, এখানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই সবচেয়ে বড়ো কথা। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত ত্রাণ ও পরিষেবা তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়াই সবচেয়ে বড়ো কর্তব্য হওয়া উচিত। কবির ভাষায়-
"মানুষ বড়ো কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।"
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা