ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজির অবদান

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নেতা ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ছাত্রজীবন থেকেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা তাঁকে এক আপোসহীন দেশপ্রেমিকে পরিণত করেছিল। তিনি স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের জীবনদর্শন দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।

  • জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান: সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধিজির অহিংস মতাদর্শ মেনে নিতে না পারলেও পরে তা মেনে নেন এবং জাতীয় কংগ্রেসে এর মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটে। জাতীয় কংগ্রেসে থাকাকালীন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। চিত্তরঞ্জন দাসের প্রভাবে তাঁর রাজনৈতিক ভাবধারায় পরিবর্তন ঘটে। চিত্তরঞ্জন দাসের অনুগামী হিসেবে তিনি বিভিন্ন স্বদেশী কাজের সঙ্গে যুক্ত হন।
  • কারাবাস: সুভাষচন্দ্র বসু ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকার প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাকে নাকচ করেন। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে গান্ধিজির মতবিরোধের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ব্রিটিশ পুলিশ কর্তৃক তিনি কারারুদ্ধ হন।
  • কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন: ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এ সময় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বললে তা নিয়ে গান্ধিজির সঙ্গে তার বিরোধ বাধে। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরী কংগ্রেস অধিবেশনে গান্ধিজির সঙ্গে মতবিরোধ সত্ত্বেও পুনরায় সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এই সময় আদর্শগত বিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দলত্যাগ করেন। সুভাষচন্দ্র বসু প্রায় কুড়ি বছর জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
  • ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা: কংগ্রেস ত্যাগের পর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলটির মাধ্যমে তিনি ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করে তাঁর কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
  • জার্মানির সমর্থন লাভ: ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সুভাষচন্দ্র বসু পুনরায় ব্রিটিশ কর্তৃক কারারুদ্ধ হন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ছদ্মবেশে কলকাতা পরিত্যাগ করেন। প্রথমে তিনি কাবুল তারপর সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং শেষে জার্মানিতে গিয়ে পৌঁছান এবং জার্মানির সমর্থন লাভ করেন এবং জার্মানিতে বন্দি ভারতীয়দের নিয়ে ফ্রি ইন্ডিয়ান লিজিয়ান গঠন করেন।
  • আজাদ হিন্দ ফৌজ: জার্মানি ত্যাগ করে নেতাজি জাপানে পৌঁছান। সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠনের জন্য জাপান তাকে সহায়তা করে। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু ক্যাপ্টেন মোহন সিং গঠিত আজাদ হিন্দ বাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক হিসেবে তিনি ইংরেজ সরকারকে নোটিশ দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের অভিযান ব্যর্থ হলেও আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মত্যাগ এবং নেতাজির নেতৃত্ব ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল।

পরিশেষে বলা যায়, নেতাজির রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ অহিংস পদ্ধতির বিকল্প একটি দৃষ্টি প্রদান করেছিল। নেতাজি ব্রিটিশের হাতে ১১ বার কারারুদ্ধ হয়েও তার পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসেননি। তিনি সার্বভৌম ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “স্বাধীনতার জন্য কোনো রাজপথ নেই, এ হল কন্টকময় পথ, তবু এপথ গৌরবের দিকে অমরত্বের দিকে চালিত করে।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment