ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
ভারতীয় সংবিধানের 324(1) নং ধারা অনুযায়ী ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন
লোকসভা ও বিধানসভার প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের প্রাক্কালে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশোধন নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
[2] নির্বাচনি কর্মী নিয়োগ
লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনগুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচনি কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে অনুরোধ করে থাকে।
[3] ভোটদাতাদের সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান
ভোটদাতাদের সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করা এবং সেগুলি যথাযথভাবে বিলি করা নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
[4] নির্বাচনি প্রতীক বণ্টন
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচনি প্রতীক বণ্টন করা এবং প্রতীক নিয়ে কোনো দলের মধ্যে বিরোধের নিষ্পত্তির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।
[5] দলীয় স্বীকৃতি প্রদান বা প্রত্যাহার
প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী নথিভুক্ত হতে হয়। নির্ধারিত মান অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলিকে জাতীয়, রাজ্য বা আঞ্চলিক এবং অন্যান্য স্বীকৃত দল-এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতাও নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।
[6] নির্বাচন বা উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা
প্রতিটি নির্বাচন বা উপনির্বাচনের দিনক্ষণ স্থির করা ও ঘোষণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনারের।
[7] মনোনয়নপত্র পেশ ও নাম প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা
নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হওয়ার পর কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশ ও নাম প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণা করে থাকে। মনোনয়নপত্রগুলি পরীক্ষা করে দেখার পর বৈধ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম দায়িত্ব।
[৪] নির্বাচনি আচরণ-বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি আচরণবিধি প্রণয়ন করে থাকে। এই আচরণবিধি যাতে যথাযথভাবে মেনে চলা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে কমিশন।
[9] নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ
নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে থাকে।
[10] নির্বাচন স্থাগিত বা বাতিল ঘোষণা
নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট অনুসারে কোনো কেন্দ্রে বুথ দখল, জাল ভোট প্রদান ইত্যাদি ঘটনা ঘটে থাকলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রে বা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল ঘোষণা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার ক্ষমতাও কমিশনের হাতে রয়েছে।
[11] ভোটগণনা ও ফলাফল প্রকাশ
নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ভোটগণনা ও ভোটের ফলাফল প্রকাশ এবং প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার শংসাপত্র প্রদান নির্বাচন কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
[12] পরামর্শদান
সংসদের কোনো সদস্য বা রাজ্য আইনসভার কোনো সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি অথবা রাজ্যপালকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন।
[13] রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন
রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে কমিশন।
[14] কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষের নির্বাচন
কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা) এবং রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ (বিধান পরিষদ)-এর সদস্য নির্বাচনের যাবতীয় ব্যবস্থা কমিশন করে।
[15] প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় পরীক্ষা
নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁদের নির্বাচনি ব্যয় পরীক্ষা করা কমিশনের কাজ।
আরও পড়ুন – ভারতে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটি উদাহরণ-সহ আলোচনা করো