ভারতীয় নীতিশাস্ত্র অনুয়ায়ী সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিশাস্ত্র অনুয়ায়ী সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিশাস্ত্র অনুয়ায়ী সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র অনুয়ায়ী সাধারণ ধর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

সাধারণ ধর্ম

সমাজে সাধারণ বা সার্বিকভাবে পালনীয় ধর্মকেই বলা হয় সাধারণ ধর্ম। এই ধর্ম সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিগত সামর্থ্য, সামাজিক মর্যাদা (ধনী ও দরিদ্র), বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র), লিঙ্গ (পুরুষ ও স্ত্রী) নির্বিশেষে সব মানুষের ক্ষেত্রে পালন করা বাধ্যতামূলক। সাধারণ ধর্ম কতগুলি সার্বিক নৈতিক নিয়মের কথা বলে যা সমাজকে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করে। সহজ কথায় মানুষ হিসেবে মানুষের যা কর্তব্য তাই হল সাধারণ বা সামান্য ধর্ম। এই সাধারণ ধর্মগুলিকে বলা হয়েছে ঈশ্বর নির্দেশিত বিধান।

মনুসংহিতায় সাধারণ ধর্ম

মনুসংহিতায় দশটি সাধারণ ধর্মের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলি হল- (ক) ধৃতি (নিজের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা), (খ) ক্ষমা (অপরাধ মার্জনা অর্থাৎ অপরাধীর অপরাধকে মার্জনা করলে অপরাধীর মধ্যে অনুশোচনা বোধ জন্মায়, যার ফলে তার বিবেক তাকে সংশোধন হওয়ার কথা বলে), (গ) দম (সহনশীলতা), (ঘ) অস্তেয় (পরদ্রব্য অপহরণ না করা বা পরদ্রব্যে লোভ না করা), (ঙ) শৌচ (দৈহিক ও মানসিক শুচিতা), (চ) ইন্দ্রিয়নিগ্রহ (ইন্দ্রিয়সংযম বা ইন্দ্রিয়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা), (ছ) ধী (বিচারশক্তি), (জ) বিদ্যা (জগৎ সম্পর্কে তথ্যমূলক জ্ঞান, আত্মজ্ঞান), (ঝ) সত্য (জগৎ প্রকাশক রূপ সত্য যা ঋতের ন্যায় অপরিণামী), (ঞ) অক্রোধ (ক্রোধহীনতা)।

এইগুলিকে সামাজিক মানুষের পালনীয় কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কর্তব্যগুলি ব্যক্তিমানুষের উন্নতি ও আত্মশুদ্ধির জন্য পালনীয় বলে মনে করা হয়।

প্রশস্তপাদের মতে সাধারণ ধর্ম

মনুর মতো প্রশস্তপাদও কতগুলি সামান্য ধর্মের উল্লেখ করেছেন। সেগুলি হল-ধর্মে শ্রদ্ধা, অহিংসা, ভূতহিতত্ব, সত্যবচন, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, অনুপধা, ক্রোধবর্জন, স্নান বা অভিষেচন, শুচিদ্রব্য সেবন, বিশিষ্ট দেবতাভক্তি, উপবাস, অপ্রমাদ। এই ধর্মগুলি পালন করার জন্য কর্তার সংকল্প অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন- অহিংসা মানে শুধু হিংসা থেকে নিবৃত্ত হওয়াই নয়, কোনো প্রাণীকূলকে আঘাত না করার সংকল্পই হল প্রকৃত অহিংসা।

যাজ্ঞবাল্ক্যর মতে সাধারণ ধর্ম

ধর্মের আলোচনা করতে গিয়ে যাজ্ঞবন্ধ্য ‘যাজ্ঞবন্ধ্যস্মৃতি’-তে অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, দান, দম, দয়া, শান্তি-এই নয়টি সাধারণ ধর্মের কথা বলেছেন।

সাধারণ বা সামান্য ধর্মের আচরণবিধি

ধর্মশাস্ত্রে সামান্য ধর্মগুলির মধ্যে কোনো প্রধান-অপ্রধান ভেদ করা হয়নি। তবে, এক এক যুগে এক এক ধর্মকে যুগধর্ম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন- সত্যযুগে যুগধর্ম ছিল সত্য, ত্রেতায় তপ, দ্বাপরে যজ্ঞ, আর কলিযুগে দান। সামান্য ধর্মগুলি নিঃশর্তভাবে পালনীয় হলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে এদের ব্যতিক্রমও স্বীকৃত হয়েছে। শাস্ত্রে বিশেষ বিধির মাধ্যমে ব্যতিক্রমগুলি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং যে স্থলে সামান্য বিধি ও বিশেষ বিধি দুই-ই বর্তমান, সে স্থলে বিশেষ বিধিই অনুসরণীয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণভাবে শাস্ত্রে হিংসার নিষেধ করা হলেও যজ্ঞীয় হিংসা দোষের নয়। সাধারণ ধর্ম সাধারণত বর্ণাশ্রমের গন্ডী নির্দেশ করে। অর্থাৎ বর্ণাশ্রম ধর্ম পালন করতে হবে বলে সামান্য ধর্ম উপেক্ষা করা চলে না। যেমন- অতিথি সেবা গৃহীর কর্তব্য। কিন্তু গৃহস্থে চুরি করে অতিথি সেবার সামগ্রী সংগ্রহ করলে সেই কর্ম শুদ্ধ হয় না। অতএব, সামান্য ধর্মগুলিকে বর্ণাশ্রম ধর্ম পালনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বীকার করা প্রয়োজন।

তাই বলা হয় যে ভারতীয় ধর্মনীতির আলোচনায় ধর্মের অপরিবর্তিত প্রসঙ্গ যেমন স্বীকৃত হয়েছে এবং সনাতন ধর্মের পক্ষ সমর্থিত হয়েছে, তেমন আবার ধর্মের সাপেক্ষতাও সমর্থিত হয়েছে।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment