ভারতীয় নীতিবিদ্যা প্রশ্ন উত্তর | Class 11 2nd Semester Philosophy
ভারতীয় দর্শনে নীতিবিদ্যা কি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে আলোচিত হয়েছে?
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র হল চিত্তশুদ্ধির উপায়স্বরূপ, যা ব্যক্তির মুক্তিলাভের সহায়ক। তাই সেখানে অহিংসা, অনাসক্তি, সহানুভূতি এবং শ্রদ্ধা প্রভৃতি নৈতিক গুণাবলি উচ্চ প্রশংসিত। ভারতীয় দর্শনে নীতিবিদ্যা স্বতন্ত্রভাবে আলোচিত না হলেও ভারতীয় দর্শন ও ধর্মের আলোচনাতেই তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারতীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি সংশ্লেষণাত্মক। সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ভারতীয় দার্শনিকগণ নীতি, ধর্ম ইত্যাদিকে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করেননি, দর্শনের অঙ্গীভূত বিষয়রূপে আলোচনা করেছেন। তাই নৈতিক ভালো-মন্দের আলোচনা, তত্ত্ব আলোচনার মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেনি। ফলে অধিবিদ্যা এবং জ্ঞানবিদ্যার সঙ্গেই নীতিবিদ্যা ও আধ্যাত্মিক আলোচনা সমান গুরুত্ব পেয়েছে।
ভারতীয় নীতিতত্ত্বে কর্মবাদ ও নৈতিকতার সম্পর্ক সংক্ষেপে আলোচনা করো।
নৈতিক কর্তব্য ও কর্মবাদ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। ভারতীয় দর্শনে কর্মবাদকে নিয়ন্ত্রণবাদের সমর্থক হিসেবে দেখা হয়। কর্মবাদের নিয়ম অনুযায়ী মানুষের সমস্ত কর্মই পূর্বকর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কর্মফলের দ্বারাই জীবের বন্ধন সূচিত হয়। জীবকে নিজের চেষ্টার দ্বারাই সেই কর্মফলকে ক্ষয় করতে হবে এবং মোক্ষের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এর জন্যই প্রয়োজন নৈতিকতার বা নৈতিক জীবনযাত্রার। নৈতিক জীবনযাত্রার ফলে মানুষের কর্মের বন্ধন শিথিল হয়। নৈতিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই ব্যক্তি উদাসীনতাকে ত্যাগ করে এবং মুক্তির পথে অগ্রসর হয়।
কর্মবাদ কী? ভারতীয় নীতিশাস্ত্র তাত্ত্বিক না ব্যাবহারিক?
কর্মবাদ
চার্বাক ব্যতীত ভারতের সমস্ত দার্শনিক সম্প্রদায় কর্মবাদ স্বীকার করেন। কর্মবাদ অনুসারে কর্মের ফল বিনষ্ট হয় না, যে যেমন কর্ম করবে তাকে সেই কর্মের ফলভোগ করতে হবে। যদি এই জীবনে কর্মের ফল ভোগ শেষ না হয় তাহলে জন্মান্তরের মাধ্যমে পরজন্মে সেই কর্মের ফল ভোগ করতে হবে।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের প্রকৃতি
বিভিন্ন ভারতীয় দর্শন সম্প্রদায়ের সমর্থক তাদের নিজ নিজ সত্য জ্ঞানের আলোকে জীবনকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত করেন। জৈন, বৌদ্ধ, মীমাংসা, বেদান্ত প্রভৃতি দার্শনিকগণ তাদের নিজ নিজ সত্য উপলব্ধি অনুসারে জীবনযাত্রা প্রণালী নির্বাহ করেন এবং ওই প্রকার জীবনযাত্রা নির্বাহের সঙ্গেই তারা ইষ্ট-অনিষ্ট, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি নৈতিক বিশেষণকে যুক্ত করেন। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের মূল লক্ষ্য হল সত্যকে অনুসন্ধান করে সেই সত্যের আলোকে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করা। কাজেই ভারতীয় নীতিশাস্ত্র একইসঙ্গে তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক।
‘বেদ হল ভারতীয় নীতিবিদ্যার আকরগ্রন্থ’ – ব্যাখ্যা করো।
প্রাচীন ভারতের মূলগ্রন্থ হিসেবে বেদকে মানা হয়। বেদের চারটি অংশ। যথা – ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদের বিভিন্ন অংশে যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যজ্ঞের বিধি রয়েছে তেমনি নৈতিকতার মূলনীতি রয়েছে সমগ্র বেদে। বেদের মাধ্যমেই আমরা ধর্মীয় দর্শন, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞানলাভে সমর্থ হই। ভারতীয় নীতিবিদ্যার বীজমন্ত্র রয়েছে বেদেই। নৈতিক আচরণবিধি ও বিচারবোধের আদর্শ বেদেই নিহিত রয়েছে। বেদের শাস্ত্রবিহিত কর্ম নৈতিকরূপে গ্রাহ্য কর্ম বলে বিবেচিত হয়। এ ছাড়াও বেদের দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানের মাধ্যমেই নৈতিক আদর্শে ব্যক্তি উন্নীত হতে পারে। শুধু বেদ নয়, শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রেও রয়েছে নীতিবিদ্যার মন্ত্র। বেদের থেকেই যেহেতু ভারতীয় নীতিবিদ্যা-সহ সমগ্র সাহিত্যের প্রকাশ, তাই বেদকে ভারতীয় নীতিবিদ্যার আকরগ্রন্থ বলা হয়।
ঋত কী?
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র এক সর্বকালব্যাপী নৈতিক নিয়মশৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। এই পূর্বস্বীকৃতি ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের আধ্যাত্মিকতার দিকটিরই প্রতিফলন। আধ্যাত্মিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে উইলিয়াম জেম্স তাঁর- ‘Pragmatism’ নামক গ্রন্থে বলেছেন- “আধ্যাত্মিকতা এক চিরন্তন নৈতিক নিয়ম শৃঙ্খলার স্বীকৃতি।” (“Spiritualism means the affirmation of an eternal moral order”) এখানে লক্ষণীয় যে ওই নৈতিক নিয়ম সব ভারতীয় চিন্তায় একই নামে অভিহিত হয়নি। যেমন ঋগ্বেদে এই চিরন্তন ও অলঙ্ঘ্য জাগতিক শৃঙ্খলাকে ‘ঋত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই শৃঙ্খলা জাগতিক ও নৈতিক উভয়ই; শুধু মানুষকেই নয়, সর্বজীবে এমনকি দেবতাদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে হয়। ঋগ্বেদে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে ঋত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব আচরণেরই নিয়ন্ত্রক, অর্থাৎ ঋত অপরিবর্তনীয় এক সার্বিক নিয়ম যা সমগ্র বিশ্বের প্রবহমানতার পশ্চাতে বিদ্যমান। ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে এই নিয়ম শৃঙ্খলাকে বলে অদৃষ্ট এবং মীমাংসা দর্শনে বলা হয় অপূর্ব।
শ্রেয় ও প্রেয়-এর মধ্যে শ্রেয়ই শ্রেষ্ঠতর আলোচনা করো।
আমাদের জীবনধারা মূলত দুটি পথের মাধ্যমেই চালিত হয়। বৈদিক যুগে প্রাচীন ঋষিরা এই দুটি পথকে শ্রেয় ও প্রেয় নামে অভিহিত করেছেন। ‘শ্রেয়’ বলতে কল্যাণকর ও ‘প্রেয়’ বলতে প্রিয় বস্তুকে বোঝানো হয়। সাধারণভাবে মানুষ প্রিয় বা কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের দিকে ধাবিত হয়, যা কম পরিশ্রমের মাধ্যমে লাভ করা সম্ভব। শ্রেয়-এর পথকে অবলম্বন করলে মুক্তি বা কল্যাণের পথ অনেক সময়সাপেক্ষ হয়। তাহলে এখন প্রশ্ন ওঠে, আমরা কেন শ্রেয়কে গ্রহণ করব? যেটি আমাদের কাছে কম সময়সাপেক্ষ অর্থাৎ প্রেয়, আমরা সেই পথকেই অনুসরণ করব না কেন?
উত্তরে বলা যায়, প্রেয়-এর পথ ধরে যে সুখ মানুষের জীবনে প্রবেশ করে তা ক্ষণিকের। সুতরাং, ক্ষণিকের সুখ কারোর কাম্য হতে পারে না। কিন্তু শ্রেয়-এর পথ অবলম্বন করে মানুষ যে চিত্তশুদ্ধি বা আত্মজ্ঞানের অধিকারী হয়, তা চিরন্তন বা শাশ্বত। তাই মানুষের উচিত চিরন্তনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আর এই চিরন্তন বা শাশ্বত কল্যাণের পথ হল শ্রেয়। তাই শ্রেয় সর্বদাই প্রেয় অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে চিত্তশুদ্ধি বলতে কী বোঝোনো হয়েছে? নৈতিক কর্তব্য ও আদর্শ পালনে চিত্তশুদ্ধির ভূমিকা কী?
চিত্তশুদ্ধি
ভারতীয় নীতিবিদ্যা শুধুমাত্র নৈতিক জ্ঞান দান করে না, ব্যক্তি-মানুষকে নীতিনিষ্ঠ হওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের জীবনচর্চাকে অনুসরণ করার কথা বলে। অহিংসা, অনাসক্তি, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা প্রভৃতি নৈতিক গুণাবলির মাধ্যমে ব্যক্তির আত্ম বা চিত্তশুদ্ধি হয়। যা মানুষকে উচ্চতর নৈতিক জীবনে উত্তরণে সাহায্য করে। অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্তিতে সহায়ক হয়।
চিত্তশুদ্ধির ভূমিকা
ধ্যানের মাধ্যমে আত্মিক শুন্দি বা চিত্তশুদ্ধি আসে। মন থেকে হিংসা, দ্বেষ, মিথ্যাচার অপহিত করার জন্যই আত্মসংযম বা ধ্যানের প্রয়োজন। চিত্তশুদ্ধি নৈতিক জীবনের ক্ষেত্রে এক উচ্চতর পর্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়। ব্যক্তির জীবনের পার্থিব বিষয়ের প্রতি আবেগগুলিকে চিত্তশুদ্ধির দ্বারা বর্জন করতে হবে। তাহলেই ব্যক্তি নৈতিক আদর্শের পরমলক্ষ্য মোক্ষ বা নির্বাণের পথে অগ্রসর হতে পারবে।
ভারতীয় নীতিবিদ্যার লক্ষ্য কী?
ভারতীয় দর্শন সাহিত্যে মানুষের ভালো-মন্দ, ঠিক-ভুল ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভারতের মহান চিন্তানায়কেরা যেসব মতের অনুশীলন করেছিলেন এবং যা কিছু সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছিলেন সেগুলিই ভারতীয় নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র ব্যক্তি-মানুষের চরম কল্যাণকেই লক্ষ্য বলে বিবেচনা করেছিল। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হল মোক্ষলাভ। এখানে পূর্ণতাকে তাত্ত্বিক অর্থে গ্রহণ না করে ব্যাবহারিক অর্থেই গ্রহণ করা হয়েছে। কেন-না পূর্ণতাকে সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি, শীতল-উয় প্রভৃতি বিরোধিতা অতিক্রম করে ওঠার স্তর বলে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায় যে, ভারতীয় নীতিবিদ্যা মানুষকে যে শুধু সুন্দর চরিত্র লাভের অধিকারী করতে চেয়েছে তাই নয়, তাকে যুক্তির পথে এগিয়ে যেতেও উদ্বুদ্ধ করেছে। জীব আত্মাস্বরূপ। আত্মাকে অনাত্মার সর্ববিধ কালিমা থেকে মুক্ত করে তাকে স্বস্থানে স্থাপন করাই হল ভারতীয় নীতিবিদ্যার মূল লক্ষ্য।
ভারতীয় নীতিবিদ্যার আদর্শ কী?
সত্যনিষ্ঠ, কল্যাণকর, মহৎ ও মানবোচিত জীবনলাভের জন্য যে সব নীতি ও আদর্শ মেনে চলা দরকার সেইসব নীতি ও আদর্শের যৌক্তিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণই হল নীতিবিদ্যা। নীতিবিদ্যা ইচ্ছার স্বাধীনতা, আত্মার অমরত্ব, আত্মার স্বরূপ ও পূর্ণতা সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করে।
ভারতীয় দার্শনিকরা বিশ্বাস করেননি যে মানুষের জীবন এই জগতেই সমাপ্ত হয়। মানুষের একটি অপার্থিব জীবন আছে যা তার পার্থিব জীবনের মতো সত্য। তাই মানুষের পার্থিব অস্তিত্বকে ভোগের উপকরণে সমৃদ্ধ করাই ভারতীয় নৈতিক আদর্শের লক্ষ্য ছিল না। চার্বাক ছাড়া অন্য কোনো দার্শনিক সম্প্রদায় সুখভোগকে মানবজীবনের আদর্শ বলে মনে করেননি। ভোগ মানুষকে পৃথিবীর বন্ধনে আকৃষ্ট করে এবং অপার্থিব জগতে মুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই ভোগের ক্ষয় করা হল ভারতীয় নীতিদর্শনের আদর্শ।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র কি জীবনমুখী? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র জীবনমুখী
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র জীবনবিমুখ নয়, জীবনমুখী; বাস্তব বিমুখ নয়, বাস্তবমুখী। কেন-না বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেই ভারতীয় নীতিশাস্ত্র মানুষকে ধর্ম, অর্থ ও কামের মধ্য দিয়ে মোক্ষ প্রাপ্তির কথা বলে। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রকে জীবনমুখী বলার কারণগুলি নিম্নরূপ-
সামাজিক জীবন ও নৈতিকতা
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র মানুষের সামাজিক জীবনকে নির্ধারণ করে। মনুসংহিতাতে ব্যক্তির সামাজিক জীবনের জন্য নানা নৈতিক বিধি প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ নৈতিক আদর্শের সঙ্গে ব্যক্তির সামাজিক রীতিনীতির এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা শুধুমাত্র সামাজিক জীবন নয়, ব্যক্তির আধ্যাত্মিক দিকটিও নীতিদর্শনের বিষয়। মানুষের আত্মিক বিকাশ ও জীবনের পরমলক্ষ্য সম্বন্ধে দিকনির্দেশ করে নীতিবিদ্যা। তাই আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে নৈতিকতার এক নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান।
মানুষের আচরণ ও নৈতিকতা
মানুষের সৎ আচরণ, মানসিক সংযম ও আত্মসচেতনতার উপর নীতিবিদ্যা গুরুত্ব আরোপ করে। ব্যক্তির আচরণের সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধকে পর্যালোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। নৈতিক আচরণের মাধ্যমেই ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়।
দর্শন ও নৈতিকতা
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের দার্শনিক দিক হল উপনিষদ। যার দ্বারা মানুষ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে দার্শনিক জ্ঞানলাভ করতে পারে। দার্শনিক জ্ঞানলাভের মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত সত্যের স্বরূপকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।
এইভাবেই ভারতীয় নীতিশাস্ত্র ব্যক্তির জীবনের নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দিকের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
ধর্ম ও নীতির মিলিত রূপ
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র মূলত ধর্ম ও নীতির মধ্যে এক মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। ধর্মীয় ও নৈতিক আদর্শের দ্বারা ব্যক্তির সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের দিকনির্দেশ করে ভারতীয় নীতিশাস্ত্র।
ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক শৃঙ্খলার সংমিশ্রণ
নৈতিক মূল্যবোধের দ্বারা একদিকে যেমন ব্যক্তির আত্মসংযম তৈরি হয়, অন্যদিকে সংযমী ব্যক্তির দ্বারা আদর্শ সমাজের পরিকাঠামো গড়ে ওঠে। তাই নৈতিকতা ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। নৈতিক বিধির দ্বারা সমাজে শৃঙ্খলা ও ব্যক্তির সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের পথ সুগম হয়।
পুরুষার্থ উপলবিধর মাধ্যমে নৈতিক জীবন গঠন
ধর্ম, অর্থ, কাম ও এই চারটি পুরুষার্থ দ্বারা গঠিত মানুষের জীবন হল মূল্যবোধের মোক্ষ জীবন বা নৈতিক জীবন। নৈতিকতার এই ধারণার দ্বারাই চারটি পুরুষার্থ সম্পর্কে ব্যক্তির উপলব্ধি জন্মায়, যা ব্যক্তির জীবনকে নৈতিক গঠন প্রদান করে।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা বোঝা যায়, ভারতীয় নীতিশাস্ত্র ব্যক্তির জীবনদর্শনে এক গভীর প্রভাব ফেলেছে, যা ব্যক্তিকে সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবনপথের দিকনির্দেশ করে।
ভারতীয় নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় কী তা ব্যাখ্যা করো।
ভারতীয় নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়
বিভিন্ন পুরাণ, দর্শনগ্রন্থ ও ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রে রয়েছে ভারতীয় নীতিবিদ্যার বীজমন্ত্র। আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, নৈতিক কর্তব্য ও অনুশাসন হল ভারতীয় নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। ভারতীয় নীতিবিদ্যায় এরকমই কয়েকটি আলোচ্য বিষয়ের দৃষ্টান্ত নিম্নরূপ-
পুরুষার্থ
প্রথমেই নীতিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় হিসেবে পুরুষার্থের কথা বলা যেতে পারে। পুরুষার্থ হল মানুষের জীবনের অভীষ্ট, চতুর্বর্গ পুরুষার্থ অনুসরণ করলে ব্যক্তির জীবনের নৈতিক গঠন পূর্ণতা পায়। ব্যক্তিকে এক নৈতিক জীবন প্রদান করে।
নিষ্কাম কর্মাযাগ
নিষ্কাম কর্মযোগের মাধ্যমে নৈতিক জীবনযাপনের পথ সুগম হয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় এই নিষ্কাম কর্মযোগের উল্লেখ করা হয়েছে।
অষ্টাঙ্গিক মার্গ
গৌতম বুদ্ধ উল্লিখিত অষ্টাঙ্গিক মার্গের দ্বারাও মানুষ নৈতিক পথে চালিত হয়। বুদ্ধদেব নির্দেশিত আটটি পথ বা মার্গের সাহায্যে ব্যক্তি নির্বাণ বা মোক্ষলাভ করতে সক্ষম হয়।
চার্বাক সুখবাদ
চার্বাকদের মতে, এই জগৎই সত্য। তারা বর্তমানকে সত্য বলে স্বীকার করেছেন। বর্তমানের সুখকে গ্রহণ করার পরামর্শ চার্বাকরা দিয়েছেন। এটিই ছিল চার্বাকদের নৈতিক মনোভাব। এই নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই চার্বাকরা তাদের জীবনকে চালনা করতেন। চার্বাকদের এই নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চার্বাক সুখবাদ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ