ভারতীয় নীতিবিদ্যার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিবিদ্যার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিবিদ্যার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো
ভারতীয় নীতিবিদ্যার স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিবিদ্যার স্বরূপ

ব্যক্তিকে নৈতিকতার জীবনে চালনা করাই হল নীতিবিদ্যার মূল আদর্শ। ভারতীয় নীতিবিদ্যা মূলত অধিবিদ্যক, ধর্মীয় ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে গঠিত। ভারতীয় নীতিবিদ্যার কিছু মৌলিক বিষয় সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হল-

ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতীয় নীতিবিদ্যার মূল আলোচনার বিষয় হল ধর্ম। নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে ‘ধর্ম’-কে কখনোই ‘Religion’ অর্থে গ্রহণ করা হয়নি অর্থাৎ ঈশ্বরসম্বন্ধীয় অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। ভারতীয় নীতিবিদ্যা মূলত ধর্মীয় গ্রন্থ ও ঋষি-মুনির উপদেশের উপর গঠিত। এই ধর্ম শুধু ব্যক্তিজীবনকে ধারণ করে না, সমগ্র মানবজীবনকে ধারণ করে রাখে।

আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণের সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতীয় নীতিবিদ্যা মূলত আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণের উপর নজর দেয়। নৈতিক জীবনযাপন ও চরিত্র গঠনের মাধ্যমেই আত্মার মুক্তি ঘটে এবং ব্যক্তি নির্বাণ বা মোক্ষলাভের দিকে অগ্রসর হয়।

সর্বকালের নিয়মশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে এক সর্বকালীন নিয়মশৃঙ্খলার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ভারতীয় নীতিভাবনার সঙ্গে অধ্যাত্মবাদ অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত, তাই কর্তব্য-অকর্তব্য, ন্যায়-অন্যায়, ধারণা ও নির্দেশ নীতিবিদ্যার অন্তর্গত। মূলত বেদের উপর ভিত্তি করে ভারতীয় নীতিবিদ্যা বিকাশলাভ করেছে। এই কারণে ঋগ্বেদকে নীতিবিদ্যার আকরগ্রন্থ বলা হয়।

শাশ্বত নৈতিক নিয়মে বিশ্বাস

চার্বাক দর্শন ছাড়া অন্যান্য সব ভারতীয় দার্শনিক মনে করেন যে আমাদের জগৎ ও জীবন এক শাশ্বত নৈতিক নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। এই নৈতিক নিয়ম শৃঙ্খলাকে ঋগ্বেদে ‘ঋত’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। ঋত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব আচরণেরই নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে একেই বলা হয়েছে ‘অদৃষ্ট’ এবং মীমাংসা দর্শনে ‘অপূর্ব’। এটি হল এমন এক অমোঘ নৈতিক নিয়ম যা মানুষের জীবনকে যেমন নিয়ন্ত্রিত করে, তেমনি মানুষের কর্মের নৈতিক ফলাফলের উপরও গুরুত্ব আরোপ করে। অর্থাৎ এটি এমন এক অনিবার্য নিয়ম যাকে অস্বীকার করা যায় না। ভারতীয় নীতিশাস্ত্রের একটি অন্যতম পূর্বস্বীকৃতি হল এক শাশ্বত নৈতিক নিয়মে বিশ্বাস।

শ্রেয় ও প্রেয়-এর ধারণার সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতবর্ষে নীতিবিদ্যা চর্চার নেপথ্যে মানুষের জীবনকে সমুন্নত করার প্রয়াস আমরা লক্ষ করি, যার উদ্দেশ্য ছিল অধ্যাত্মিক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটানো। সাংখ্য, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শনে এ কথার সমর্থন পাওয়া যাবে। ভারতীয় দার্শনিকরা তাদের আধ্যাত্মিক আদর্শকে পার্থিব সুখলাভের আদর্শ থেকে পৃথক করেছেন। যে নৈতিক • আদর্শ মানুষকে সুখ-দুঃখের পরপারে নিয়ে যায়, যা আত্মোপলব্ধির মহিমায় ভাস্বর, তাকেই ভারতীয় দর্শনে ‘প্রেয়’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

আত্মোপলব্ধিকে মানুষের শ্রেয় আর জাগতিক তৃপ্তিকে বলা হয়েছে প্রেয়। প্রেয় লাভের ফলে আত্মোপলব্ধি হয় না। শ্রেয়লাভের দ্বারাই চিত্তশুদ্ধি বা মোক্ষলাভ সম্ভব। তাই শ্রেয় ও প্রেয়-এর ধারণার মধ্যে শ্রেয় সর্বদাই শ্রেষ্ঠ।

মোক্ষ বা নির্বাণের সঙ্গে সম্পর্ক

ভারতীয় নীতিশাস্ত্র মানুষের নৈতিক জ্ঞানকে যেমন সমৃদ্ধ করে তেমনই মানুষের জীবনযাত্রার প্রণালীকেও এর নৈতিক আদর্শের মাধ্যমে চালিত করে। তাই শুধুমাত্র জ্ঞান নয়, ব্যক্তির কর্মজীবন এবং ধর্মজীবনেও নৈতিকতার প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতীয় নীতিশাস্ত্র একইসঙ্গে তাত্ত্বিক ও ব্যাবহারিক। নীতিবিদ্যার তথ্যগুলিকে তত্ত্ব ও প্রয়োগের মাধ্যমে অনুশীলনের দ্বারাই ব্যক্তির জীবনে আত্মশুদ্ধি ঘটে। ফলে ব্যক্তি মুক্তিলাভের দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ব্যক্তি মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করে।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment