ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 3) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 3)
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর (Marks 3)

“কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।”-এই আনন্দের কারণ নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: ‘মাথুর’ বা বিরহ পর্যায়ে কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের যন্ত্রণা রাধার মধ্যে তীব্রভাবে বেজেছিল-“এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।”

কিন্তু ভাবসম্মিলনের পদে এই বিচ্ছেদ যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে রাধা ভাবময় জগতে তাঁর মনের মধ্যেই কৃষ্ণকে উপলব্ধি করেছেন। প্রিয়তমের মুখদর্শনে তিনি সমস্ত দুঃখকে অতিক্রম করে গিয়েছেন এবং বলেছেন যে, যদি কেউ তাঁকে মহামূল্যবান রত্নসামগ্রীও দেয়, তবুও তিনি তাঁর প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না। কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে বিদ্যাপতির রাধার উত্তরণ ঘটেছে এক নবতর আনন্দময় জগতে। সেই সীমাহীন আনন্দের উপলব্ধির কথাই উল্লিখিত অংশে প্রকাশিত হয়েছে।

“পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।”-কে এ কথা বলেছেন? বক্তার মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীরাধা উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

‘মাথুর’ বা প্রবাস পর্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে ছেড়ে মথুরায় গোপিনীদের কাছে চলে গিয়েছিলেন। কৃষ্ণ-বিচ্ছেদের তীব্র যন্ত্রণায় রাধা কাতর হয়ে পড়েন। চাঁদের দিকে তাকিয়ে তিনি কৃয়ের সৌন্দর্যকে উপলব্ধির চেষ্টা করেন। কিন্তু চাঁদের আলো তাঁর কষ্টকেই শুধু বাড়িয়ে দেয়। তার মধ্যে কৃষ্ণকে তিনি কোনোভাবেই খুঁজে পান না। এই বিচ্ছেদ- যন্ত্রণার অবসান হয়, যখন ভাবসম্মিলনের পদে ভাবলোকে রাধা কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান। ভাবময় জগতে প্রিয়তমের মুখদর্শন করে উচ্ছ্বসিত রাধিকা বিদ্যাপতির অনেক পদে বলে ওঠেন-

“সোই কোকিল অব            লাখ লাখ ডাকউ

লাখ উদয় করু চন্দা।”

পঠিত পদেও দেখা যায় চাঁদের আলো রাধার মনের মধ্যে কৃষ্ণের বিভ্রম তৈরি করে যে কষ্টের জন্ম দিয়েছিল, ভাবজগতে প্রিয়তমের মুখদর্শন করে শ্রীরাধিকার ততটাই সুখানুভূতি হয়েছিল।

“তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই।” -কাকে দূরদেশে না পাঠানোর কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীরাধা তাঁর প্রিয়তম কৃষ্ণকে দূরদেশে না পাঠানোর কথা বলেছেন।

‘মাথুর’ পর্যায়ে বিচ্ছেদের তীব্র যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে ভাবসম্মিলনের পদে রাধা নিজের মনোলোকে কৃয়ের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন। এই সান্নিধ্য রাধার মধ্যে প্রবল ভাবোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। বিদ্যাপতির রাধা এই উচ্ছ্বাসে অন্যত্র বলেছেন-

" আজু রজনী হাম     ভাগে পোহায়লু
পেখলু পিয়া-মুখ-চন্দা।
জীবন-যৌবন    সফল করি মানলু 
দশ দিশ ভেল নিরদন্দা।।"

প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণের মুখদর্শনে যে সুখ রাধা লাভ করেছেন, কোনোভাবেই তিনি তার থেকে বঞ্চিত হতে চাননি। সেই অমূল্য সম্পদকে কোনো পার্থিব প্রলোভনের কারণে হারাতে রাজি নন রাধা।

“বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।”-কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? এখানে বক্তার যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীরাধা কৃষ্ণ সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

• ভাবসম্মিলনের পদে কৃষ্ণের সঙ্গে রাধার ভাবজগতে মিলন ঘটেছে। ‘মাথুর’ পর্যায়ে কৃষ্ণের সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কাতর রাধা বলেছিলেন- “পিয়া বিনে পাঁজর ঝাঁঝর ভেলা”; তিনিই ভাবসম্মিলনে এসে কৃষ্ণের সান্নিধ্যে পুনরায় মুগ্ধতার ভাষ্য তৈরি করেছেন। মনের মন্দিরে নিত্য বিরাজিত কৃষ্ণ রাধার কাছে শীতের ওড়না কিংবা গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছত্র এবং সমুদ্রের নৌকা। অর্থাৎ যে-কোনো পরিস্থিতিতে কৃষ্ণই রাধার একমাত্র অবলম্বন।

‘সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।”-কে মন্তব্যটি করেছেন? মন্তব্যটির পরিপ্রেক্ষিত আলোচনা করো।

উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদের ভণিতায় পদকার বিদ্যাপতি স্বয়ং উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

মাথুর বা প্রবাস পর্যায়ে কৃষ্ণ রাধাকে একা রেখে মথুরায় চলে যান। রাধার মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র বিরহ-যন্ত্রণা। কিন্তু শ্রীরাধিকার এই যন্ত্রণার উপশম ঘটেছে ভাবসম্মিলনে। মানস-বৃন্দাবনে তিনি কৃষ্ণের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন। আর তাতেই রাধার মনের মধ্যে সীমাহীন আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়েছে। সুখানুভূতি এতই তীব্র যে রাধা বলেছেন, তাঁকে যদি কেউ আঁচল ভরে রত্ন দেয় তাহলেও তিনি প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না। তীব্র বিরহ-বেদনার সময়ে বিদ্যাপতি তাঁর রাধাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন-‘ধৈরয ধরহ চিতে মিলব মুরারি’। আর ভাবসম্মিলনের আনন্দঘন মুহূর্তে বিদ্যাপতি রাধাকে উদ্দেশ করে বলেছেন যে, সুজন মানুষের দুঃখ চিরস্থায়ী হয় না, তার স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে দু-চার দিন।

বিদ্যাপতির পঠিত পদে ভাব সম্মিলন-এর প্রকাশ কীভাবে ঘটেছে?

উত্তর: ভাবসম্মিলনের পদে রাধার মনে ভাবোল্লাসের যে আনন্দময় উচ্ছ্বাস, তা বিদ্যাপতির পঠিত পদটিতেও লক্ষ করা যায়। রাধা বলেছেন-

"কি কহব রে সখি আনন্দ ওর। 
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।"

বিরহের দিনগুলিতে চাঁদের আলোয় প্রিয়তমের মুখ খুঁজে যত কষ্ট পেয়েছিলেন, এখন প্রিয়তমের মুখদর্শন করে শ্রীরাধিকা ততটাই সুখ লাভ করেছেন। রাধা বলেছেন আঁচল ভরে যদি কেউ তাঁকে মহারত্নসামগ্রী দেয়, তাহলেও নিজের প্রিয়তমকে তিনি আর দূরদেশে পাঠাবেন না। এভাবেই উল্লিখিত পদে বিদ্যাপতির রাধা নিত্যমিলনের স্থায়ী সুর যোজনা করেছেন। তাঁর কাছে কৃয় তখন শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছত্র, দরিয়ার নৌকা। আরামে-বিরামে কৃষ্ণই একমাত্র অবলম্বন, রাধা যেন কৃষ্ণেরই বিকল্প সত্তা।

আরও পড়ুন – ছুটি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment