ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝো? ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব কী ছিল

ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝো? ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব কী ছিল

অথবা, ‘ভক্তি’ কথার অর্থ কী? ভক্তিবাদী সাধনার প্রেরণা কী ছিল

ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝো? ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব কী ছিল
ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝো? ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব কী ছিল

ভক্তিবাদ

বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদ তথা হিন্দু ধর্মের একটি সংস্কারবাদী আন্দোলন ছিল ভক্তিবাদ। সুলতানি যুগে (১২০৬-১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ) ভারতে হিন্দু ধর্মের বৈদান্তিক উদার কীর্তির প্রভাবে শুরু হয়েছিল ভক্তি আন্দোলন। ‘ভক্তি’ তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল, ঈশ্বরের কাছে ভক্তের সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ভক্তিবাদীরা নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে প্রচলিত ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মাচারের অতি সরল বিকল্পের সন্ধান দিয়েছিলেন। সমাজের বহু মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে ভক্তিবাদ গ্রহণ করেছিলেন। সমকালের সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপরে এর গভীর প্রভাব ছিল। তাই ঐতিহাসিক এ এল শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘আমাদের দেশে বৌদ্ধ ধর্মের পতনের পর ভক্তিবাদী আন্দোলনের মতো ব্যাপক ও জনপ্রিয় আন্দোলন আর কখনোই সংঘটিত হয়নি।’

ভক্তিবাদী সাধক: ভগবানের সঙ্গে মানুষের একাত্মবোধ ও মানুষকে ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে ভগবানের সৃষ্ট সবকিছুকে ভালোবাসার কথা ভক্তিবাদে বলা হয়। এইরকম ভক্তি ও প্রেমের মধ্য দিয়ে নরনারায়ণের সেবার কথা যাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রধান হলেন রামানন্দ, শ্রীচৈতন্যদেব, কবীর, নানক, বল্লভাচার্য, মীরাবাঈ ও নামদেব।

ভক্তিবাদের উপর অন্য ধর্মের প্রভাব / ডক্তিবাদী সাধনার প্রেরণা

ভক্তিবাদী তত্ত্বের উদ্ভব হিন্দু ধর্মের স্বাভাবিক বিবর্তনের একটা স্তরে ঘটেছে, নাকি সমসাময়িক অন্যান্য ধর্মমতের প্রভাবে ভক্তিসাধকেরা তাঁদের আদর্শ প্রচার করেছেন এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভক্তিবাদী সাধনার প্রেরণা নিয়ে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন মতপ্রকাশ করেছেন।

(1)  ম্যাকক্স ওয়েবারের মত: জার্মান পণ্ডিত ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber)-এর মতে, মোক্ষলাভের পথ হিসেবে ভক্তিমার্গের ধারণা খ্রিস্ট ধর্ম থেকে নেওয়া হয়েছে। জর্জ গ্রিয়ারসন (Jeorge A Grierson)-ও এই মত সমর্থন করেন।

(2) ইউসুফ হুসেনের মত: অন্যদিকে ইউসুফ হুসেনের মতে, ভক্তি আন্দোলনের প্রথম পর্যায়টির পরিধি শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার সময়কাল থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত। এই পর্যায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বহুঈশ্বরবাদের সঙ্গে মুষ্টিমেয় জনগণের একেশ্বরবাদের সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে (ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতক) ভক্তিবাদী আন্দোলনের প্রেরণা এসেছে ইসলাম ধর্মের বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক সাম্যের ধারণা থেকে।

(3) রোমিলা থাপারের মত: ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার বলেছেন যে, ভক্তি আন্দোলনের প্রবক্তাগণ, যাঁরা ধর্মের চেয়েও সামাজিক ধারণার উপর বেশি প্রভাব ফেলেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ইসলাম ধর্ম, বিশেষত সুফিসাধকদের থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন।

(4) অন্যান্য মত: তবে ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এল শ্রীবাস্তব, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ মনে করেন ইসলামীয় ধর্মতত্ত্বে অবিশ্বাসী বা কাফেরদের কখনোই বিশ্বাসী বা মুসলিমদের সমমর্যাদা দেওয়া হয়নি। কাজেই ইসলামের সৌভ্রাতৃত্বের তত্ত্ব হিন্দুদের জন্য সাম্যের বাণী বহন করেনি। উপরোক্ত মতান্তর থাকলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভক্তিবাদের উৎস নিহিত ছিল বৈদান্তিক হিন্দু ধর্মের মধ্যেই। বৌদ্ধ ধর্মের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সূত্রে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির তত্ত্ব বিকশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment