বেলগাছিয়া নাট্যশালা স্থাপন এবং এই নাট্যালয়ে অভিনীত নাটকগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
নাট্যশালা স্থাপন: শৌখিন নাট্যশালার কালপর্বে পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বর সিংহ এবং প্রতাপচন্দ্র সিংহ তাঁদের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়িতে (যেটি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি নামে খ্যাত ছিল) নাট্যশালা স্থাপন করেন। সে সময়ের প্রখ্যাত নাট্যকার রামনারায়ণ তর্করত্নের সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনূদিত নাটক ‘রত্নাবলী’ ও মৌলিক নাটক ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ এই নাট্যশালায় অভিনীত হয়। ১৮৫৮ সালে বেলগাছিয়া নাট্যশালায় প্রথম অভিনীত নাটক ‘রত্নাবলী’ ও তারপর ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’ নাটক দেখে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাঙালির নিকৃষ্ট নাট্যরুচি সম্পর্কে হতাশা অনুভব করেন।
অভিনীত নাটকসমূহ: হতাশ মধুসূদন বাংলা ভাষায় সার্থক রসোত্তীর্ণ নাটক রচনায় উদ্যোগী হন ও মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে ১৮৫৯ সালে রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক। বাংলা ভাষায় পাশ্চাত্য আঙ্গিকে রচিত প্রথম নাটক হিসেবে এটিকেই চিহ্নিত করা যায়। ১৮৫৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়। মাত্র চব্বিশ-পঁচিশ দিনের মধ্যে নাটকটির ছয় বার অভিনয়ের তথ্যই প্রমাণ করে ‘শর্মিষ্ঠা’ একটি অতি জনপ্রিয় নাটকে পরিণত হয়েছিল। এই মঞ্চে কয়েকটি ইংরেজি নাটকের মহড়াও হয়েছিল। বেলগাছিয়া থিয়েটারের প্রধান উদ্যোক্তা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের অকালপ্রয়াণ এই নাট্যশালার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে। বেলগাছিয়া নাট্যশালাকে অবলম্বন করে সেকালে শিক্ষিত বাঙালি ও নাট্যপ্রেমীরা একজায়গায় মিলিত হয়েছিলেন। দেশীয় বাদ্যযন্ত্রে দেশীয় সুর বসিয়ে সংগীত পরিবেশনে অভিনবত্ব দেখানো হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে বেলগাছিয়া নাট্যশালা উৎকর্ষের যে সীমাকে স্পর্শ করেছিল, বাংলা রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয়।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা