রবীন্দ্র সমসাময়িক কালে বাংলা প্রবন্ধের ধারায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভূমিকা: রবীন্দ্র সমকালীন মহিলা প্রাবন্ধিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২)। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসংস্কারক ও সুসাহিত্যিক। মূলত নারী জাতির উন্নতিকল্পে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তিনি কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ‘আঞ্জুমান খাওয়াতীন মহিলা সমিতি’ গড়ে তোলেন। প্রসঙ্গত বলা যায়, নারীমুক্তি ও নারীজাগরণ বিষয়ে তিনি সওগাত, নবনূর, ধূমকেতু, সাধনা প্রভৃতি পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
অবদান: বেগম রোকেয়ার লেখা প্রবন্ধগুলি হল ‘মতিচুর: ১ম খন্ড’ (১৯০৪), ‘সুলতানার স্বপ্ন’ (১৯০৫), ‘মতিচুর: ২য় খণ্ড’ (১৯২২), ‘পদ্মরাগ’ (১৯২৪), ‘অবরোধবাসিনী’ (১৯৩১)। ‘মতিচুর: ১ম খণ্ড’ গ্রন্থের প্রবন্ধগুলিতে মুসলিম নারীদের করুণ পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। শুধু তাই-ই নয় তিনি তাদের মুক্তির পথও দেখিয়েছেন আলোচ্য গ্রন্থে। Sultana’s Dream গ্রন্থটি ‘সুলতানার স্বপ্ন’ (প্রতীকী রচনা) নামে বাংলায় অনূদিত হয়ে ‘মতিচুর: ২য় খন্ড’-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। বেগম রোকেয়ার ‘পদ্মরাগ’ গ্রন্থটি তাঁর বড়দা ইব্রাহিম সাবেরকে উৎসর্গীকৃত। এই গ্রন্থের ভাষা সহজসরল ও প্রাঞ্জল। তাঁর ‘অবরোধবাসিনী’ গ্রন্থে ভারতের অন্দরমহলবাসী অবরুদ্ধ মুসলিম নারীদের দুরবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে।
তাঁর রচিত যেসব প্রবন্ধে তিনি নারীদের দুঃখজনক অবস্থা ও তার পাশাপাশি তাদের শিক্ষা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের পথ নির্দেশ করেছেন, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘স্ত্রীজাতির অবনতি’ গ্রন্থটি। শিক্ষার অভাবকেই তিনি নারী জাতির অবনতির মূল কারণ হিসেবে নির্দেশ করেছেন উক্ত গ্রন্থে। তিনি নারীশিক্ষাকে পুরুষশিক্ষার সমমর্যাদা দিয়ে তা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে প্রয়াসী হয়েছিলেন।
রচনাশৈলী: সাহিত্যরচনায় যে ভাষা ও সাহিত্যজ্ঞান থাকা জরুরি, সেই প্রতিভার অধিকারী ছিলেন বেগম রোকেয়া। তাঁর রচনা ছিল শ্লেষাত্মকধর্মী, যা স্বকীয়তায় পূর্ণ। যুক্তিবাদ, কৌতুক ছিল তাঁর রচনার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তাঁর প্রবন্ধগুলির বিষয়বস্তু ছিল পরিশীলিত ও সুবিস্তৃত। বলা বাহুল্য, আজও বেগম রোকেয়ার জীবনদর্শন ও সাহিত্যকর্ম সমানভাবে সমাদৃত।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর