বিহারীলাল পরবর্তী বাংলা গীতিকাব্যধারার কবিদের অবস্থান উল্লেখ করো
বিহারীলাল পরবর্তী গীতিকবি
বিহারীলাল চক্রবর্তীর পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্য বাংলা গীতিকবিরা হলেন-সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, দেবেন্দ্রনাথ সেন, গোবিন্দচন্দ্র দাস, অক্ষয়কুমার বড়াল।
সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার
‘সবিতা সুদর্শন’ (১৮৭০), ‘ফুল্লরা’ (১৮৭০) নামে দুটি বিয়োগান্ত কাব্যের রচয়িতা সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুগামী কবি। বিহারীলালের ‘বঙ্গসুন্দরী’-র অনুসরণে তিনি নারীর জননী, জায়া, ভগিনী, দুহিতা এই চারটি রূপকে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অকালমৃত্যুর কারণে শেষ দুটি রূপ কাব্যরূপ লাভ করতে পারেনি।
দেবেন্দ্রনাথ সেন
রবীন্দ্র সমসাময়িক দেবেন্দ্রনাথ সেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুসারী গীতিকাব্যধারার অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মধুসূদনের দ্বারা অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন, যার প্রমাণ ‘অপূর্ব বীরাঙ্গনা’, ‘অপূর্ব ব্রজাঙ্গনা’ প্রভৃতি কাব্য। পরবর্তী সময়ে ‘নির্ঝরিণী’, ‘অশোকগুচ্ছ’, ‘গোলাপগুচ্ছ’ ইত্যাদি রচনায় রবীন্দ্রচেতনা কবিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। দেবেন্দ্রনাথের কবিসত্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য জগৎ ও জীবনের প্রতি কবির প্রসন্ন দৃষ্টি। গার্হস্থ্য প্রেমের রোমান্টিকতা ও প্রকৃতির সমৃদ্ধ চিত্র তাঁর কাব্যের মূল বিষয়বস্তু। তাঁর রচিত সনেটগুলি বাংলার স্বল্পসংখ্যক সনেটের মধ্যে অন্যতম।
গোবিন্দচন্দ্র দাস
বিহারীলাল পরবর্তী বাংলা গীতিকবিতার ধারার উল্লেখযোগ্য একজন কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস। তাঁর গীতিকবিতায় যেমন দেহসর্বস্ব প্রেমের স্ফুরণ ঘটেছে তেমনই স্বদেশ অনুরাগও বাদ যায়নি। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল-‘প্রেম ও ফুল’, ‘কুঙ্কুম’, ‘কস্তুরী’, ‘চন্দন’, ‘ফুলরেণু’, ‘বৈজয়ন্তী’।
অক্ষয়কুমার বড়াল
প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও প্রেম-এই তিন ধারায় প্রাণিত বিহারীলাল চক্রবর্তীর সুযোগ্য শিষ্য অক্ষয়কুমার বড়াল। অক্ষয়কুমার রচিত ‘প্রদীপ’, ‘কনকাঞ্জলি’, ‘ভুল’-তিনখানি গীতিকাব্যের প্রধান উপজীব্য প্রেম। তাঁর প্রেম মর্ত্যজীবনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বরং অনেকাংশেই অধরা ও অপ্রাপনীয়। কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘এষা’।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর