বিষ্ণু দে-র কাব্যক্তিত্ব আলোচনা করো
ভূমিকা: দেশজ কাব্যশৈলী ও রূপকথার লৌকিক সংস্কৃতির শৈল্পিক চেতনাকে কাব্যভাষা দান করলেন কবি বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)। একজন মহাকবির মন নিয়ে তিনি কাব্যসাধনায় রত হয়েছেন। ‘প্রগতি’ ও ‘কল্লোল’ পত্রিকার নিয়মিত লেখক বিষ্ণু দে পরবর্তীকালে যুক্ত হয়েছিলেন ‘পরিচয়’ পত্রিকার সঙ্গে। কবি এলিয়টের কাছ থেকে নৈর্ব্যক্তিকতার দীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। বিষ্ণু দে বুঝেছিলেন, কবির সাধনা একান্তভাবেই সমাজ ও সভ্যতানির্ভর।
কাব্যসমূহ: বিষ্ণু দে-র কবিপ্রতিভা প্রারম্ভেই রবীন্দ্রনাথের আত্মিক রোমান্টিক সৌন্দর্যবিলাস থেকে কঠোর বাস্তবের দ্বন্দ্বভূমিতে সরে এসেছে। তাঁর বিশিষ্ট কাব্যগুলি হল-‘ঊর্বশী ও আর্টেমিস’ (১৯৩২), ‘চোরাবালি’ (১৯৩৮), ‘পূর্বলেখ’ (১৯৪১), ‘সাত ভাই চম্পা’ (১৯৪৫) ‘সন্দীপের চর’ (১৯৪৭), ‘অন্বিষ্ট’ (১৯৫০), ‘নাম রেখেছি কোমল গান্ধার’ (১৯৫৩) ইত্যাদি।
কবিকৃতিত্ব: তাঁর কবিতায় সারল্য ও আস্বাদনের আনন্দ সেভাবে ধরা পড়ে না; বরং ভাষা, ভাব, শব্দচয়ন, নির্মাণকৌশল, বিষয়নির্বাচন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কবিতাকর্ম দুরূহ এবং সাধারণ পাঠকের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। শেষদিকে তিনি সমাজচেতনা, প্রেম, জীবন, প্রিয়তমা ইত্যাদির প্রতি কিছুটা উৎসাহিত হন; পরে নিসর্গলোকের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র রচিত হয়। জটিল শব্দবিন্যাস, যুগ্ম শব্দের নির্মাণ, পুরাণ ঐতিহ্য ব্যবহার, তৎসম শব্দের বাহুল্য তাঁর কবিতাকে সাধারণ পাঠকের কাছ থেকে দূরে রেখেছে। বিষ্ণু দে এলিয়টের ভাবনাকে স্মরণে রেখে ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি হিসেবে কবিতাকে আশ্রয় করেননি, বরং ব্যক্তির অস্তিত্ব থেকে মুক্তির অভিপ্রায়ে কবিতাকে গ্রহণ করেছেন। তাঁর কবিতা বুদ্ধিসমৃদ্ধ ধ্যানধারণায় প্রখর, বিশ্বচেতনায় উদ্বুদ্ধ ও মানবধর্মে নিবিড়।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা